আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সোমবার একশ বছরে পা রাখলেন নেপালের গোর্খা জেলার বাসিন্দা টিকা দত্ত পোখরেল। খবর এটা নয়। খবর হল- একশ বছর বয়সে ভোটে দাঁড়িয়েছেন টিকা দত্ত পোখরেল। তাও আবার যেমন তেমন প্রার্থীর বিরুদ্ধে নয়, নেপালের মাওবাদী নেতা তথা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ৬৭ বছরের পুষ্পকমল দোহাল ওরফে প্রচন্ডর বিরুদ্ধে পাঙ্গা নিচ্ছেন শতবর্ষ ছোঁয়া এই যুবক! নেপালে সংসদ নির্বাচনের দামামা বেজেছে। আগামী ২০ নভেম্বর সংসদের নিম্নকক্ষ, হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস-এর ২৭৫ আসনে ভোট। ১০০ বছর বয়সে ভোটে দাঁড়িয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন টিকা দত্ত।
শতবর্ষী টিকার আদর্শ জাতীয়তাবাদ। বরাবর যুক্ত নেপালি কংগ্রেসের সঙ্গে। দেশে গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে গোড়া থেকেই সামিল ছিলেন তিনি। ক্ষমতসীন নেপালি কংগ্রেস এখন দুই ভাগে বিভক্ত। নেপালি কংগ্রেসের ( বিপি) গোষ্ঠীর হয়ে গোর্খা-২ আসন থেকে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তিনি। এক সময় এই কেন্দ্র ছিল নেপালি কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি। কিন্তু ২০০৮ থেকে এখানে জিতে আসছেন মাওবাদী নেতা প্রচন্ড। সাত সন্তানের জনক ১০০ বছরের টিকা দত্ত পোখরেল দিব্যি হেঁটে-চলে বেড়ান। রাজনীতির সব খবরাখবর রাখেন। প্রচারে বেরিয়ে জন সংযোগেও ক্লান্তি নেই। বিপরীতে নেপালের সবথেকে প্রভাবশালী নেতাদের মধ্যে অন্যতম পুষ্পকমল দোহাল, যাঁকে সবাই প্রচন্ড নামেই চেনেন। কিন্তু তাতে নিজের জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসে খামতি নেই টিকা দত্তের।
একশ বছর বয়সে কেন ভোটে লড়তে নেমেছেন টিকা দত্ত পোখরেল? তিনি মনে করেন, নেতারা এখন দেশসেবা ভুলে টাকার পেছনে ছুটছে। রাজনীতি থেকে আদর্শ চুলোয় গেছে। এই পরিস্থিতিতে নির্বাচনে দাঁড়িয়ে জনগণের কাছে ভিন্ন বার্তা পৌঁছে দিতে চান টিকা। ধর্মপ্রাণ টিকা দত্ত পোখরেলের একটিই অন্তিম ইচ্ছা- নেপালকে আবার ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ হিসেবে দেখে যাওয়া। নেপালে ২৩৯ বছরের হিন্দু রাজতন্ত্রের অবসান ঘটে ২০০৮ সালে। নিজের রাজনৈতিক লক্ষ্য ঘোষণায় কোনও দ্বিধা-দ্বন্দ্ব নেই টিকা দত্তের। সাংবাদিকদের টিকা দত্ত সাফ সাফ জানিয়ে দিয়েছেন- “জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি নেপালকে হিন্দু রাষ্ট্রের মর্যাদা ফিরিয়ে দিতেই ভোটে প্রার্থী হয়েছি আমি।”
টিকা দত্ত প্রার্থী হওয়ার পর থেকেই তাঁর বাড়িতে মানুষের ভিড়। ভিড়ের একটা বড় অংশ টিকা দত্তের অনুরাগী। হিমালয়ের মতোই উন্নত তাঁর ব্যক্তিত্ব। একশ বছরের টিকা দত্ত বলেন, ” আমিও প্রচন্ডের থেকে কম কিছু নই। গোর্খা জেলার মাটি ও পাথর জানে, আমি কী ধাতুতে তৈরী। এখানকার মানুষ আমি এবং আমার প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে কে কেমন,তা ভালোই জানেন।”
শাসক নেপালি কংগ্রেস নির্বাচনে মাওবাদীদের সঙ্গে আঁতাত করেছে। বিষয়টি মোটেই মেনে নিতে পারছেন না দলের এই পুরোনো সৈনিক। গোর্খা-২ আসনে প্রচন্ডকে সমর্থনও দিচ্ছে নেপালি কংগ্রেস। নেপালি কংগ্রেসের মধ্যে যাঁরা মাওবাদীদের সঙ্গে দলের আঁতাতের বিরোধী, তাঁরা হরিবোল ভট্টরাইয়ের নেতৃত্বে নেপালি কংগ্রেস (বিপি) নামে আলাদা দল গঠন করেছে। এই দলের হয়েই ভোটে প্রচন্ডকে মোকাবেলা করতে নেমেছেন শতবর্ষী টিকা দত্ত পোখরেল। টিকা দত্তের একটাই প্রশ্ন- “নেপালি কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব কীভাবে পারলেন মাওবাদীদের সঙ্গে জোট করতে, এক সময় যাদের হাতে খুন হয়েছে দলের শত শত নেতা-কর্মী?”
Feature image is representational. Photo source- Facebook.