কলকাতা : করুণাময়ী কান্ডের জেরে শুক্রবার দিনভর কলকাতার রাজপথ বিরোধীদের দখলে। বৃহস্পতিবার রাতে মাত্র পনেরো মিনিটের মধ্যে এপিসি ভবনের সামনে থেকে মেরেধরে চাকরিপ্রার্থীদের তুলে দেয় পুলিশ। ২০১৪ সালের নন ইক্লুডেড টেট উত্তীর্ণ চাকরিপ্রার্থীরা ইন্টারভিউ ছাড়াই নিয়োগের দাবিতে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের দফতরের সামনে কয়েকদিন ধরে ধর্নায় বসেছিলেন। বৃহস্পতিবার মাঝরাত গড়াতেই বিশাল পুলিশ বাহিনী ও র্যাফ ঘটনাস্থল থেকে আন্দোলনকারীদের টেনে হিঁচড়ে ভ্যানে তুলতে শুরু করলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। রাতেই রাস্তায় নেমে পড়েন বিরোধীরা। রাতেই বোঝা গিয়েছিল, প্রতিবাদের জেরে শুক্রবার দিনভর তেতে থাকবে নগর কলকাতা।
গোটা করুণাময়ী চত্বরকেই দুর্গ বানিয়ে ফেলেছে পুলিশ। উদ্দেশ্য একটাই- আন্দোলনের আঁচ থেকে এপিসি ভবনকে রক্ষা করা। চাকরিপ্রার্থীদের অবস্থান থেকে তুলে দেওয়ার পরেই এলাকাটা সাফসুতরো করে দেয় পুলিশ। আন্দোলনের সব চিহ্ন মুছে ফেলতে পুলিশকে নবান্ন থেকে কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল বলে খবর। যদিও শুক্রবার সকাল থেকেই বিরোধীদের ঝটিকা আন্দোলনের মোকাবেলা করতে গিয়ে হিমসিম খেতে হল পুলিশকে। বাম-বিজেপি-কংগ্রেস, এদিন ঘরে বসে থাকে নি কেউই। কালীপুজো ও দিপাবলিকে ঘিরে রাজ্য জুড়ে একটা উৎসবের পরিবেশ ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। উৎসব মরশুমে প্রতিবাদের ঝাঁঝ বাড়ানোর তেমন ফুরসৎ পাবে না বিরোধীরা- হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চের নির্দেশকে হাতিয়ার করে আন্দোলনরত চাকরিপ্রার্থীদের তড়িঘড়ি সরিয়ে দেওয়ার পেছনে সরকারের মাথায় এমন মনোভাব কাজ করে থাকতে পারে বলে রাজনৈতিক মহলের ধারণা। কিন্তু নিয়োগ ঘোটালার জেরে বেকায়দায় পড়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের বিরুদ্ধে হাতে গরম এমন ইস্যু ছাড়বে কেন বিরোধী দলগুলি।
শুক্রবার বামেদের আন্দোলনের প্রথম সারিতে যথারীতি মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। বিজেপির আন্দোলনের ঝাঁঝ বাড়ালেন বাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক তথা বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল। সকাল এগারোটা থেকে করুণাময়ী চত্বরে আন্দোলনকারীদের আনাগোনা শুরু হতেই ধরপাকড়ে নেমে পড়ে পুলিশ। দুপুরে মীনাক্ষীর নেতৃত্বে এসএফআই-ডিওয়াইএফআই’এর ছেলেমেয়েরা করুণাময়ী অভিমুখে রওনা দিতেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পুলিশ আন্দোলনকারীদের ভ্যানে তুলতে গেলে দুই পক্ষে ধস্তাধস্তি বেধে যায়। মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বাম-ছাত্র যুবরা সিটি সেন্টার এলাকায় রাস্তায় বসে পড়েন। জোরজবরদস্তি চ্যাংদোলা করে তাদের বাসে তোলে পুলিশ। আন্দোলনকারীদের বিধাননগর উত্তর থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। থানার ভেতরেই বিক্ষোভ শুরু করে দেন বাম ছাত্র-যুবরা। স্লোগানে স্লোগানে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে থানা। পুলিশের সঙ্গেও উত্তপ্ত বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন আন্দোলনকারীরা।
করুণাময়ীতে চাকরিপ্রার্থীদের হটিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে বিজেপির তরফে সবথেকে বড় কর্মসূচিটির নেতৃত্ব দেন অগ্নিমিত্রা পাল। রাজ্য বিজেপির সদর দফতর থেকে মিছিলটি বের হয়। মিছিলের লক্ষ্য ছিল মাতঙ্গিনী হাজরার মূর্তির পাদদেশে চাকরিপ্রার্থীদের অবস্থানমঞ্চে যাওয়া। কিন্তু সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ ছাড়িয়ে মিছিল ধর্মতলা মোড়ে পৌঁছাতেই ব্যারিকেড দেয় পুলিশ। অগ্নিমিত্রা, যুবমোর্চার রাজ্য সভাপতি ইন্দ্রনীল খাঁ, বিধায়ক দীপক বর্মন এবং দলের রাজ্য সম্পাদক জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় সহ অন্যারা রাস্তায় বসে পড়লে মধ্য কলকাতা জুড়ে তীব্র যানজট তৈরি হয়। স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে ধর্মতলা চত্বর। মুখ্যমন্ত্রীর ছবি ও কুশপুতুলেও আগুন দেয় আন্দোলনকারীরা। বিজেপির নেতা-কর্মীদেরও জোরজবরদস্তি প্রিজন ভ্যানে তুলে লালবাজারে নিয়ে যায় পুলিশ।
নিয়োগ দুর্নীতি ও প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের দফতরের সামনে থেকে চাকরিপ্রার্থীদের তুলে দেওয়ার প্রতিবাদে এদিন পথে নামে কংগ্রেসও। মৌলালি থেকে মিছিলের নেতৃত্ব দেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী।
ভিডিও- বাম-বিজেপি-কংগ্রেসের আন্দোলন-
Photo and Video- Verified FB page of BJP, CPM and Congress.