দেশের অর্থনীতির হাল ফেরাতে কারেন্সি নোটে ‌লক্ষ্মী-গণেশের ছবি চাইছেন কেজরিওয়াল - nagariknewz.com

দেশের অর্থনীতির হাল ফেরাতে কারেন্সি নোটে ‌লক্ষ্মী-গণেশের ছবি চাইছেন কেজরিওয়াল


হিন্দুত্বের অস্ত্রে শান দিয়েই গুজরাটে মোদীকে মাত করতে চাইছেন কেজরিওয়াল?

ডেস্ক রিপোর্ট : গুজরাটে ভোটের আগে হিন্দুত্বের অস্ত্রেই কি বিজেপিকে ঘায়েল করতে চাইছেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল? বুধবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী যে দাবি কেন্দ্রের কাছে রাখলেন, বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেতাদের গলাতেও এমন দাবি কোনও দিন শোনা যায় নি।‌ দেশের অর্থনীতির হাল‌ ফেরাতে নোটে লক্ষ্মী-গণেশের ছবি রাখার নিদান দিয়েছেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল।সবে ধনতেরাস-দীপাবলি গেল। উৎসবের রেশ এখনও যায় নি। দেওয়ালির রাতে পুজোর আসনে বসে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর উপলব্ধি- “দেশের অর্থনীতির এখন যা হাল, একমাত্র লক্ষ্মী-গণেশের কৃপাই তাকেউদ্ধার করতে পারে।” সাংবাদিকদের সামনে নিজের উপলব্ধির কথা জানিয়ে কেজরিওয়ালের দাবি, “নোটে গান্ধীর পাশাপাশি লক্ষ্মী-গণেশের ছবিও ছাপানো হোক।”

খড়্গপুর আইআইটির প্রাক্তনী কেজরিওয়াল পরবর্তী জীবনে ইন্ডিয়ান রেভিনিউ সার্ভিসে যোগ দিয়ে কেন্দ্রীয় রাজস্ব দফতরের বড় আধিকারিক হয়েছিলেন। আমলা থেকে সমাজকর্মী, সমাজকর্মী থেকে রাজনীতিকে টার্ন নেওয়া কেজরিওয়াল বলেন, ” আমরা সবাই চাই ভারত যেন উন্নত‌ দেশে পরিণত হয়। এর জন্য কঠোর পরিশ্রম করা দরকার। কিন্তু পরিশ্রম তখন‌ই সফল হবে, যখন আপনার সঙ্গে দেব-দেবীদের আশীর্বাদ থাকবে।” কেজরিওয়াল মনে করেন, “ব্যক্তি মানুষের পাশাপাশি রাষ্ট্রের উন্নতির জন্যও দেব-দেবীদের কৃপালাভ অপরিহার্য।” কেন নোটে লক্ষ্মী-গণেশকে চাইছেন কেজরিওয়াল? জবাব কেজরিই দিয়েছেন। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য- “দেশের অর্থনীতির হাল খুব খারাপ। কিছুতেই কিছু হচ্ছে না।” এই পরিস্থিতিতে কেজরিওয়ালের মনে হয়েছে, “এখন কঠোর পরিশ্রম করেও অর্থনীতির হাল আর ফেরানো সম্ভব নয়, যদি দেব-দেবীদের আশীর্বাদ সঙ্গে না থাকে।”

ইন্দোনেশিয়ার ২০ হাজার টাকার নোটে গণেশের ছবি।

ধন-সম্পদ-সমৃদ্ধির দুই দেব-দেবী লক্ষ্মী-গণেশের কৃপা দেশ কীভাবে ‌পেতে‌ পারে, সেই রাস্তাও কেন্দ্রকে বাতলে দিয়েছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী। কেজরিওয়াল বলেন,”আজ, আমি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আবেদন জানাতে চাই, নোটের একদিকে গান্ধীর ছবি যেমন আছে, তেমন‌ই থাকুক। কেবল, অন্যদিকে লক্ষ্মী ও গণেশের ছবি ছাপিয়ে দেওয়া হোক।”কেজরিওয়াল মনে করেন,বিষয়টি কার্যকর করতে সরকারের কোন‌ও অসুবিধায় পড়ার কথা নয়।‌ ইন্দোনেশিয়ার উদাহরণ টানেন কেজরিওয়াল। তিনি বলেন,” ইন্দোনেশিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখুন। মাত্র ২-৩ শতাংশ হিন্দু আছে সেখানে। কিন্তু ওদের নোটের উপর গণেশের ছবি আছে।” কেজরিওয়ালের প্রশ্ন- “ইন্দোনেশিয়া পারলে আমরা পিছিয়ে থাকব কেন!”

শুধু সাংবাদিক সম্মেলনে দাবি জানিয়েই থেমে থাকছেন না‌ অরবিন্দ কেজরিওয়াল। নোটে লক্ষ্মী-গণেশের ছবি ছাপতে মোদীর কাছে চিঠিও পাঠাবেন আপ প্রধান। কেজরিওয়াল বলেন,” নোটে লক্ষ্মী-গণেশের ছবি ছাপানোর দাবি জানিয়ে আমি প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখব। অর্থনীতির যা পরিস্থিতি, তাতে শুধু খেটে হবে না, ভগবানের করুণা‌ও দরকার।” আগে থেকে না ভেবে মুখ খোলার ধাত দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর নেই। কী মনে করে হঠাৎ এমন দাবি তুললেন কেজরিওয়াল- এটাই ভাবছে রাজনৈতিক মহল। মোদীর রাজ্য গুজরাটে ভাল ফল এখন প্রধান লক্ষ্য আপের। লক্ষ্য পূরণেই কি সংখ্যাগুরু ভোটব্যাঙ্ক খুশি হয় এমন আওয়াজ তুলে দিলেন কেজরিওয়াল?

কেজরিওয়ালের মন্তব্য প্রচারিত হতেই যথারীতি বিতর্ক দানা বেঁধেছে রাজনীতিতে। কেজরিওয়ালের দাবির কড়া সমালোচনা করেছেন দিল্লি কংগ্রেসের নেতা সঞ্জীব দীক্ষিত। এমনিতেই কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে কংগ্রেস ও বাম শিবিরের অভিযোগ, তাঁর আম আদমি পার্টি সংঘ পরিবারের বি টিম। যদিও কে কী বলল, তার পরোয়া করছেন না দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী। সাংবাদিকেরা যখন কেজরিওয়ালকে মনে করিয়ে দেন- এই ঘটনার পর আপ-কে সবাই হিন্দুত্ববাদী পার্টি বলতে শুরু করবে। কেজরিওয়ালের ঝটতি জবাব- “লোকে যা খুশী বলতে পারে। বোলনে দো, যো বোলনা হ্যায়।”

Feature Image is Representational.


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *