কেন এমন অভিযোগ করলেন মুখ্যমন্ত্রী? উত্তর খুঁজছে রাজনৈতিক মহল।
ডেস্ক রিপোর্ট : এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় জড়িয়ে গিয়ে সবান্ধবী ইডি হেফাজতে রাজ্যের শিল্প ও বাণিজ্য এবং তথ্যপ্রযুক্তি ও পরিষদীয়মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। একই অভিযোগে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আপ্তসহায়ক সুকান্ত আচার্যকেও গ্রেফতার করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। এদিকে বুধবার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করে বসলেন- তাঁর পাড়াতেও নাকি কিছু লোক ঘুরে বেড়াচ্ছে! তাঁর বাড়ির খোঁজ করছে আগন্তুকেরা। কারা ঘুরে বেড়াচ্ছে মুখ্যমন্ত্রীর পাড়ায়? এই নিয়ে স্পষ্ট করে কিছু না ভাঙলেও এদিন হিন্দমোটরে এক সরকারি অনুষ্ঠানের মঞ্চে দাঁড়িয়ে মমতা বলেন, ” ববি বলছিল, সকাল থেকে আমার পাড়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছে আর সকলকে জিজ্ঞাসা করছে, আমার বাড়ি কোনটা! আরে আমার বাড়ি তো সকলেই চেনে। আয় না!”
কিছু আঁচ পেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী?
রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে- মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির সামনে কারা ঘুরঘুর করছে? মুখ্যমন্ত্রীই বা কাদের দিকে আঙুল তুললেন? পার্থ চট্টোপাধ্যায় দশদিনের ইডি হেফাজতে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির খোঁজ নিচ্ছে কারা? রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনুমান- নাম না করে সিবিআই-ইডির মতো কেন্দ্রীয় এজেন্সির দিকেই ইঙ্গিত করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কেন হঠাৎ এমন বিস্ফোরক অভিযোগ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর মুখে? নিছকই অভিযোগ নাকি আগাম কোনও আঁচ পেয়েছেন তিনি? রাজনৈতিক মহলের কেউ কেউ আবার মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ ঘিরেই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন। তাঁদের প্রশ্ন- কেন্দ্রীয় এজেন্সির দুঁদে অফিসারেরা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির হদিস জানবেন না, তা হয় কী করে? যদিও ববির কথার সূত্র ধরে মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ- তাঁর পাড়ায় ঘোরাঘুরি করছে আগন্তুকেরা!
কাকভোরে পার্থর বাড়িতে কেন ইডি- প্রশ্ন মমতার
টানা সাতাশ ঘন্টা জেরা ও তল্লাশির পর শনিবার পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করে ইডি। তার আগেই পার্থর বান্ধবী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি থেকে নগদ সাড়ে বাইশ কোটি টাকা সহ প্রভূত পরিমাণ সম্পদ বাজেয়াপ্ত করেন ইডির আধিকারিকেরা। সোমবার নজরুল মঞ্চে বঙ্গবিভূষণ সম্মান প্রদানের অনুষ্ঠানে দাঁড়িয়ে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেফতারি নিয়ে প্রথমবার মুখ খোলেন মমতা। বুধবার হিন্দ মোটরে ছিল টিটাগড় ওয়াগন লিমিটেডের কারখানায় মেট্রো রেলের কোচ তৈরীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। এই সরকারি অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকেও পার্থর গ্রেফাতারি নিয়ে প্রশ্ন তুললেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বলেন, ” ২১ তারিখ বড় মিছিল করার পর ২২ তারিখ কোনও ঘটনা ঘটলে নিশ্চয়ই আপনি পদক্ষেপ করবেন। কিন্তু মধ্যরাত্রে কেন? ভোর পাঁচটায় কেন? এতগুলো সব একদিনে পেয়ে গেল?” রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করেন- পার্থর বান্ধবী অর্পিতার বাড়ি থেকে সাড়ে বাইশ কোটি টাকা সহ যে বিপুল সম্পদ উদ্ধার হয়েছে তার যথার্থতা নিয়েই ঘুরিয়ে প্রশ্ন তুলে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
মিডিয়ার বিরুদ্ধে ফের সরব মমতা
পার্থ-অর্পিতা কান্ড এই মুহুর্তে সংবাদ শিরোনামে। ইডি সূত্রে জানা যাচ্ছে যা উদ্ধার হয়েছে তা হিমশৈলের চূড়া মাত্র। সাড়ে বাইশ কোটি পাওয়া গেছে। আরও একশ কোটি টাকার খোঁজে পার্থ-অর্পিতাকে জেরা করছেন ইডির আধিকারিকেরা। বহু জায়গায় পার্থ ও অর্পিতার নামে জমি-বাড়ি-ফ্ল্যাট ও রিসর্টের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে বলে সূত্রের খবর। সংবাদ মাধ্যমে এইসব খবর ফলাও করে প্রচার করলেও তা ভালভাবে নিচ্ছেন না রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। এদিন মমতা বলেন, ” এখন বিচারকেরা বিচার করার আগেই সংবাদমাধ্যমই আপনাকে চোর বানিয়ে দিচ্ছে! তাদের মধ্যেও যে কত বড় চোর আছে, সেটা কিন্তু তারা দেখতে পায় না। তারাও কিন্তু নানা রকমের দালালি করে খায়।” মমতা মিডিয়াকে বিদ্রুপ করে আরও বলেন,” আমি সকলের কথা বলছি না। কিন্তু এরা সকলকে চোর বানায়। ওরা চায়, বাংলার কিছু না হোক। শুধু বাংলার বদনাম করো। এই সব পরিকল্পনার কথা আমি জানি।”
পার্থকে রাখবেন না ছাঁটবেন, স্পষ্ট নয়
রাজ্য মন্ত্রিসভার একাধিক গুরুত্বপূর্ণ দফতর সামলান পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তিনি তৃণমূলের মহাসচিবও। পার্থর গ্রেফাতারি নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই বিব্রত সরকার এবং তৃণমূল দল। তৃণমূলের একটি অংশের দাবি- দল ও সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষার্থে মন্ত্রিসভা থেকে পার্থর অপসারণ। তার মহাসচিব পদও যাওয়াও শুধু সময়ের অপেক্ষা বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। ইতিমধ্যেই পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নামের আগে মন্ত্রী অথবা মহাসচিব শব্দের ব্যবহার বন্ধ করে দিয়েছে তৃণমূলের মুখপত্র জাগো বাংলা। সোমবার নজরুল মঞ্চেই মমতা জানিয়েছিলেন- আদালতে কেউ দোষী প্রমাণিত হলে তার শাস্তি হবে। মিনিস্টার হোক বা এমএলএ বা এমপি- তৃণমূল কাউকে ছেড়ে কথা বলে না। যে দোষী, সে শাস্তি পাক। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিলেও আই ডোন্ট মাইন্ড।” বুধবার হিন্দ মোটরেও মমতা বলেন, “যদি কেউ ভুল করেন, তাঁর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হবে। ভুল করলে তা আইনত প্রমাণিত হলে নিশ্চয়ই তাঁর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হবে। তাঁর শাস্তি হবে।” যদিও পার্থকে মন্ত্রিসভায় রাখবেন না ছাঁটবেন- মমতার এ’দিনের বক্তব্য থেকে তা স্পষ্ট নয়। বিচারে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত বিষয়টি ঝুলিয়ে রাখার একটা ইঙ্গিত মুখ্যমন্ত্রী বুধবারও দিয়ে রাখলেন।
সোমবার নজরুল মঞ্চের পর বুধবার হিন্দ মোটরে, মমতার পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেফতার সংক্রান্ত বক্তব্যে খুব একটা পার্থক্য নজর পড়ছে না রাজনৈতিক মহলের। তবে তাঁর পাড়ায় লোকজন ঘুরে বেড়াচ্ছে- এই প্রশ্ন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন তুললেন তা সবাইকে ধন্ধে রেখেছে। সত্যিই কি কেন্দ্রীয় এজেন্সির লোকেরা মুখ্যমন্ত্রীর ওপর নজরদারি চালাচ্ছেন নাকি পুরোটাই কেন্দ্রীয় সরকার ও বিজেপির বিরুদ্ধে তৃণমূল সুপ্রিমোর মনগড়া রাজনৈতিক অভিযোগ?
Feature Photo Credit- Official FB page of Mamata Banerjee.