কলকাতা : প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতির পদ থেকে মানিক ভট্টাচার্যকে অপসারণের নির্দেশ দিল হাইকোর্ট। সোমবার শুনানি শেষে এই নির্দেশ দেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। শিক্ষাক্ষেত্রে নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে তোলপাড় রাজ্য। প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিক। শিক্ষক নিয়োগ থেকে অশিক্ষক কর্মী নিয়োগ- প্রতিটি ক্ষেত্রে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির অভিযোগে আদালতে মামলার পাহাড়। হাইকোর্টের নির্দেশে সিবিআই তদন্তে নামার পর কেঁচো খুঁড়তে কেউটে বেরোনোর অবস্থা। মানিক ভট্টাচার্য তৃণমূল রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি। বর্তমানে মানিক তৃণমূলের বিধায়কও।
মানিকের মধ্যস্থতায় মেধা তালিকায় কারচুপি
মানিক ফেঁসেছেন ২০১৪-র প্রাথমিকে নিয়োগ মামলার তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে যাওয়ার পর। গত সোমবারই এই মামলার তদন্তের দায়িত্বও সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। এরপর থেকেই সিবিআইয়ের স্ক্যানারে মানিক ভট্টাচার্য। নিয়োগ ঘোটালা নিয়ে মানিকের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল অবশ্য বহু আগে থেকেই। ২০১৪ সালে রাজ্যের সরকার পোষিত প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিতে শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। পরীক্ষা হয় পনেরোর ১১ অক্টোবর। ফল বেরোয় ষোলোর সেপ্টেম্বরে। প্রথম মেধা তালিকা নিয়ে অভিযোগ না থাকলেও দ্বিতীয় মেধা তালিকায় ধুমায়ে ঘাপলা করা হয় বলে অভিযোগ। আর সেই ঘাপলার মধ্যমণি ছিলেন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য। এমনই অভিযোগ মামলাকারীদের। ইতিমধ্যেই দ্বিতীয় মেধা তালিকা থেকে চাকরি পাওয়া ২৬৯ জনকে বরখাস্ত করার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। বেতনও ফেরত দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বেআইনিভাবে নিয়োগ পাওয়া ওই শিক্ষকদের। শেষ পর্যন্ত বরখাস্ত হওয়া শিক্ষকের সংখ্যা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে এই নিয়েই প্রশ্ন সকলের।
মঙ্গলে মানিককে আদালতেও উঠতে হবে
মানিকের অপসারণের পর প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি পদে কে আসবে তা ঠিক করার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট দফতরের বলে জানিয়েছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তবে আপাতত পর্ষদের সচিব রত্না চক্রবর্তী বাগচির ওপরেই সেই দায়িত্ব দিয়েছে আদালত। নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতির মামলায় গত সোমবার হাইকোর্টে হাজিরা দিয়েছেন মানিক ভট্টাচার্য। এর পর তাঁকে কয়েক দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করে সিবিআই। মঙ্গলবার ফের মানিককে আদালতে তলব করছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে মানিকের কাছ থেকে আরও কিছু জানতে চায় আদালত। দুপুর দুটোয় মানিককে এজলাসে উঠতে বলা হয়েছে।
মানিকের জেলে যাওয়া কি সময়ের অপেক্ষা?
নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্তে সিবিআইকেও নজরদারির মধ্যে রেখেছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। এখন আদালতের কড়া নজরদারিতেই তদন্ত কাজ চালাতে হবে সিবিআইকে। শুধু মাত্র নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতির তদন্তের জন্যই সিবিআই-কে সিট গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি। এই তদন্তের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সিটের আধিকারিকেরা অন্য কোনও মামলার তদন্তে ব্যস্ত হতে পারবেন না- এমনই নির্দেশ হাইকোর্টের। এখন দেখার মঙ্গলবার মানিক ভট্টাচার্য হাইকোর্ট থেকে বাড়িতে ফেরেন না জেলে ঢোকেন।
Photo Credit- Facebook. Feature image is representational.