রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে এখনও হাতের তাসটি বের করে নি বিজেপি। তবে প্রার্থী যেই হোন। ইলেক্ট্রোরাল কলেজের হিসেব বলছে- এনডিএ’র জয় নিশ্চিত।বিশেষ প্রতিবেদন-
অতীতে বহুবার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে সর্বসম্মত প্রার্থী দিয়েছে বিরোধীরা। কিন্তু কোনও বারই ঊনসত্তরের মতো শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত টানটান উত্তেজনা দেখা যায় নি রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ঘিরে। ঊনসত্তরের পরিস্থিতি ছিল আলাদা। সেবার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের আগেই কংগ্রেস আড়াআড়ি বিভাজিত হয়ে পড়েছিল ইন্দিরা ও সিন্ডিকেট শিবিরে। ইলেক্টোরাল কলেজের
হিসেবে ইন্দিরা কংগ্রেসের রাষ্ট্রপতি প্রার্থী ভিভি গিরির জেতার সম্ভাবনা প্রায় ছিল না। মূলতঃ বামপন্থীদের আশীর্বাদে গিরিকে অনেক কষ্টে জিতিয়ে এনেছিলেন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। কিন্তু বাইশে সেই পরিস্থিতি নেই। তারপরেও রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে একটা কৃত্রিম উত্তেজনা সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছে মিডিয়ার একটি মহল। বিজেপি এখনও রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে নিজের তাসটি বের করে নি। তা নিয়ে বাজারে নানা রকমের জল্পনা চলছে। দু’-এক দিনের মধ্যেই যে এই রহস্যের অবসান ঘটবে তাতে কোনও সন্দেহ নেই।
পাঁচটি দল মমতার বৈঠক এড়িয়েছে
এদিকে দিন কয়েক হল রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে তেড়েফুঁড়ে নেমেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার দিল্লির কনস্টিটিউশন ক্লাবে মমতার ডাকা বৈঠকে কংগ্রেস সহ ১৭টি দল উপস্থিত ছিল। তারা রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে সর্বসম্মত একজন প্রার্থী দাঁড় করানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ায় কয়েকটি সংবাদ মাধ্যম রীতিমতো উত্তেজিত। যদিও আমন্ত্রণ পাওয়া সত্ত্বেও আপ, টিআরএস এবং ওয়াইএসআর কংগ্রেস সহ পাঁচটি দল বৈঠক এড়িয়ে গেছে। মমতার ডাকা সভায় কংগ্রেস যোগ দেবে কিনা এই নিয়ে একটা আগ্রহ অবশ্যই ছিল রাজনৈতিক মহলের। শেষ পর্যন্ত কংগ্রেসের প্রতিনিধি বৈঠকে যোগ দেওয়ায় ঘটনাটিকে মমতার বিরাট জয় হিসেবে দেখাচ্ছে কলকাতার কয়েকটি মিডিয়া।
এখনও সর্বসম্মত প্রার্থীর দেখা নেই
বৈঠকে বিরোধীরা একজন সর্বসম্মত প্রার্থী দাঁড় করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ঘটনাটা এই পর্যন্তই। কিন্তু এখনও প্রার্থীর খোঁজ নেই। এনসিপি নেতা শরদ পাওয়ারকে নিয়ে জোর টানাটানি চলছে। বুধবারের বৈঠকে পাওয়ারের নাম প্রস্তাবও করা হয়েছে। কিন্তু পাওয়ার রাজি নয় বলেই এনসিপি সূত্রে খবর পাওয়া যাচ্ছে। শরদ পাওয়ার ঝানু রাজনীতিবিদ। মোদীর সঙ্গে ব্যক্তিগত খাতিরও খুব গভীর। পাওয়ার জেনেশুনে পরাজয় বরণ করতে যাবেন বলে মনে হয় না। পরের যে নামটি হাওয়ায় ভাসছে, তিনি হলেন পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গান্ধী। মহাত্মা গান্ধীর পৌত্র গোপালকৃষ্ণ নিঃসন্দেহে সজ্জন,বিদ্বান এবং স্বচ্ছ চরিত্রের একজন মানুষ। আগেরবার উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিরোধী শিবিরের প্রার্থী হয়ে দাঁড়িয়ে ভেঙ্কাইয়া নাইডুর কাছে হেরেছিলেন তিনি। গোপালকৃষ্ণ গান্ধীর সঙ্গে মমতার যোগাযোগ বরাবরই ভাল। শোনা যাচ্ছে রাষ্ট্রপতি পদে বিরোধী শিবিরের প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাব যাওয়ার পর গোপালকৃষ্ণও কিন্তু কিন্তু করছেন। খুবই স্বাভাবিক। ইলেক্টোরাল কলেজের সংখ্যাতত্ত্ব অনুযায়ী জেতার কোনও সম্ভাবনা নেই জানার পরেও কার আর দাঁড়ানোর স্বতঃস্ফূর্ত উৎসাহ থাকে।
মমতার উদ্যোগ নিয়ে কংগ্রেসের আগ্রহের অভাব স্পষ্ট
রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ঘিরে কংগ্রেসের মারাত্মক কোনও উৎসাহ আছে বলে রাজনৈতিক মহলের মনে হচ্ছে না। তৃণমূল আর কংগ্রেসের বর্তমান রাজনৈতিক সমীকরণ ভাল নয়। তৃণমূল তো কংগ্রেসকে বিজেপি বিরোধী শক্তিগুলির নেতৃত্বদানকারী দল হিসেবে মানতেই নারাজ। কয়েকটি ছোট ও মাঝারি রাজ্যে কংগ্রেসের ঘর থেকে লোক পর্যন্ত ভাঙিয়ে নিয়েছে তৃণমূল। এই পরিস্থিতিতে তৃণমূলের প্রতি কংগ্রেসের মহাব্বত থাকে কীভাবে? এমনকি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সোনিয়া-রাহুলের ব্যক্তিগত সম্পর্কও এখন তলানিতে। তারপরেও খানিকটা মুখরক্ষার দায়ে নানা হিসাব-নিকাশ করে মমতার ডাকা বৈঠকে প্রতিনিধি পাঠিয়েছেন সোনিয়া-রাহুল।
ইলেক্ট্রোরাল কলেজ বলছে এনডিএ-র জয় নিশ্চিত
ভারতের রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন দেশের সাংবিধানিক প্রধান। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পদ্ধতিটি রীতিমতো জটিল। রাষ্ট্রপতি সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হন না। লোকসভা ও রাজ্যসভার সাংসদ এবং রাজ্য বিধানসভাগুলির বিধায়কেরা এই নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। সেই হিসেবে দেশের ৭৭৬ জন সাংসদ ও ৪১২০ জন বিধায়ক ভোট দেওয়ার সুযোগ পান। একজন সাংসদের একটি ভোটের মূল্য ৭০৮। রাজ্য অনুযায়ী বিধায়কদের ভোটের মূল্যে তারতম্য হয়। সমস্ত ভোটের মূল্য যোগ করার পর যেই সংখ্যাটা আসে তাকে বলে ইলেক্ট্রোরাল কলেজ। ইলেক্ট্রোরাল কলেজ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে মোট ভোট- ১০ লক্ষ ৯০ হাজার। বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ-র হাতে আছে কমবেশি ৫ লক্ষ ৪২ হাজার ভোট। এনডিএ বিরোধী জোটের হাতে থাকার কথা ৪ লক্ষ ৪৯ হাজার ভোট। আর এনডিএ কিম্বা এনডিএ বিরোধী- কোনও শিবিরেই নেই, এই রকম দলগুলির হাতে আছে ৭৫ হাজার ৫২৮ টি ভোট। কোনও শিবিরেই না থাকা দলগুলির বেশ কয়েকটি, বিশেষ করে বিজেডি, ওয়াইএসআর কংগ্রেস ও টিআরএস বিজেপির দিকেই ঘেঁষে আছে।
বিরোধী মুখ হওয়ার রিহার্সাল দিচ্ছেন মমতা?
এখন প্রশ্ন একটাই- ইলেক্ট্রোরাল কলেজ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে এনডিএ প্রার্থীর জয় একপ্রকার নিশ্চিত জানার পরেও বিরোধী জোটের সর্বসম্মত প্রার্থী দাঁড় করানো নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এত উতলা হয়ে উঠলেন কেন? চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনে বিরোধী জোটের মুখ হওয়ার প্রবল বাসনা মমতার। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে উপলক্ষ্য করে মমতা হয়তো বাজিয়ে দেখছেন তাঁর ডাকে কতটা সাড়া দেয় ছন্নছাড়া বিরোধীরা। মমতার নেতৃত্বে সাড়া দিয়ে বিরোধীরা সর্বসম্মত কোনও রাষ্ট্রপতি প্রার্থী খুঁজে পেলেই সেটাকে সুপ্রিমোর বিরাট জয় হিসেবে ঢাক পেটানোর সুযোগ হাত ছাড়া করতে চায় না তৃণমূল।
Photo sources- official twitter of AITC.