মথুরার প্রাচীন কাটরা স্তূপ এলাকায় শ্রীকৃষ্ণ জন্মস্থান কমপ্লেক্সের পাশেই অবস্থিত শাহি ইদগাহ মসজিদ নিয়েও অনেক প্রশ্ন। উত্তর চায় হিন্দুরা।
ডেস্ক রিপোর্ট : সোমবার কাশীর জ্ঞানবাপী মসজিদের ওজুখানার কূপে শিবলিঙ্গ উদ্ধারের পর সংলগ্ন ঘটনাস্থল সিল করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। ঘটনাটিকে মা শৃঙ্গার গৌরীস্থল ভেঙে মসজিদ নির্মাণের সবথেকে বড় প্রমাণ বলে দাবি করছে হিন্দু সংগঠনগুলি। আদালতের নির্দেশে জ্ঞানবাপীতে সমীক্ষা চালানোর সময় শিবলিঙ্গ আবিষ্কার হয়েছে। গোটা সমীক্ষা কার্যক্রম হিন্দু ও মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে ভিভিয়োগ্রাফি হওয়ায় অভিযোগ-আপত্তি তোলার অবকাশ নেই। এদিকে মঙ্গলবারই মথুরার শাহি ইদগাহ মসজিদও সিল করার দাবিতে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে একাধিক হিন্দুত্ববাদী সংগঠন। তাদের আশঙ্কা, জ্ঞানবাপীর ঘটনার পর বিতর্কিত মসজিদের কাঠামো থেকে হিন্দু স্থাপত্যের প্রমাণ সরিয়ে ফেলার চেষ্টা হতে পারে।
কেশবদাস মন্দির না শাহি ইদগাহ মসজিদ?
মথুরায় কংসের কারাগারে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্ম। সেই কৃষ্ণ জন্মভুমিতে অবস্থিত শাহি ইদগাহ মসজিদ নিয়ে বিতর্ক আজ থেকে নয়। মথুরার প্রাচীন কাটরা স্তূপ এলাকায় শ্রীকৃষ্ণ জন্মস্থান কমপ্লেক্সের পাশেই শাহি ইদগাহ মসজিদ। শ্রীকৃষ্ণের গর্ভগৃহ প্রাচীন কেশবদাস মন্দির ধ্বংস করেই ওই মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে বলে হিন্দুদের অভিযোগ। এখানেও খলনায়ক মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেব। আবার একই প্রশ্ন। অযোধ্যা, কাশী, মথুরা- উত্তরভারত জুড়েই হিন্দুদের প্রধান তিন আধ্যাত্মিক পীঠের একেবারে কেন্দ্রস্থলেই কেন মসজিদ? রাজশক্তির বলপ্রয়োগ ছাড়া হিন্দুরা কি স্বেচ্ছায় নিজেদের উপাসনাস্থলের পাশে মসজিদ নির্মাণ করতে দিয়েছিল?
শাহি ইদগাহ মসজিদেরও পুরাতাত্ত্বিক সমীক্ষা দাবি
হিন্দু সংগঠনগুলি নিজেদের হৃত উপাসনাস্থলগুলি ফেরত চাইতে শুরু করতেই বিতর্কের সূত্রপাত। অযোধ্যায় রামজন্মভূমি পুনরুদ্ধার হয়েছে। জ্ঞানবাপী মসজিদে শিবলিঙ্গ উদ্ধার হতেই হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি আরও উৎসাহ নিয়ে মথুরায় শ্রীকৃষ্ণ জন্মভুমি পুনরুদ্ধারে ঝাঁপিয়ে পড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই মথুরার শাহি ইদগাহ মসজিদেও পুরাতাত্ত্বিক সমীক্ষা ও ভিডিয়োগ্রাফির দাবিতে এলাহাবাদ হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেছেন হিন্দুত্ববাদীরা। এদিন মথুরা আদালতের দ্বারস্থ হয়ে হিন্দুত্ববাদীদের তরফে আবেদন করা হয়- স্থাপত্যে বিকৃতি ঘটানোর আগেই শাহি ইদগাহ মসজিদ চত্বর সিল করার নির্দেশ দেওয়া হোক। আবেদনকারীদের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন মহেন্দ্রপ্রতাপ সিং। আগামী পয়লা জুলাই এই নিয়ে আদালতে শুনানি হবে বলে জানা গেছে।
১৯৬৮-র চুক্তির বাতিল চায় আখড়া পরিষদ
মথুরার বিতর্কিত শাহি ইদগাহ মসজিদ নিয়ে আরও তিনটি মামলা স্থানীয় আদালতে ঝুলছে। মামলাকারীরা ১৯৬৮ সালের ১২ অক্টোবর স্বাক্ষরিত একটি চুক্তি রদ করার দাবি জানিয়ে আসছেন। শ্রীকৃষ্ণ জন্মস্থান সেবা সংস্থান ও শাহি ইদগাহ মসজিদ কমিটির মধ্যে স্বাক্ষরিত ওই চুক্তিতে মসজিদটি চালু রাখা এবং মুসলমান ধর্মাবলম্বীদের মসজিদের ভেতরে প্রবেশ ও প্রার্থনা করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। মামলাকারীদের অভিযোগ- ওই চুক্তি বেআইনি, কারণ শ্রীকৃষ্ণ জন্মস্থান সেবা সংস্থান নামক সংস্থাটির এই ধরণের চুক্তিতে শরিক হওয়ার কোনও অধিকার নেই। অল ইন্ডিয়া আখড়া পরিষদ মামলাকারীদের পাশেই আছে। আখড়া পরিষদও ভগবান শ্রীকৃষ্ণের গর্ভগৃহ ফেরত চায়। যদিও শাহি ইদগাহ মসজিদ কমিটি ১৯৯১ সালের উপাসনাস্থল সংক্রান্ত ( বিশেষ ব্যবস্থা ) আইন অনুযায়ী স্থিতাবস্থা বজায় রাখার পক্ষপাতী। ওই আইনে ১৯৪৭-এর ১৫ই অগাস্টের পর থেকে দেশের যে কোনও স্থানে যে কোনও ধর্মের উপাসনাস্থল যেই অবস্থায় আছে সেই অবস্থাতেই রাখতে বলা হয়েছে।
Feature photo- collected.