সংখ্যালঘু অধ্যুষিত বালিগঞ্জে ২১ শতাংশ ভোট হ্রাস তৃণমূলের। বরাবরের দুর্বল ঘাঁটিতে বামেদের ভোট বৃদ্ধি বিস্মিত হওয়ার মতোই। জোড়াফুলের সংখ্যালঘু ভোটে কি ভাঁটার টান?
বিশেষ প্রতিবেদন : রাজ্যে উপনির্বাচনে দুই আসনেই দলবদলুদের জয়। আসানসোল লোকসভা আসনে তৃণমূলের শত্রুঘ্ন সিনহার জয়ের ব্যবধান বিশাল। বিজেপি ছেড়ে কংগ্রেস এবং কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়া শত্রুঘ্ন ৩ লক্ষ ৩ হাজার ২০৯ ভোটে হারিয়ে দিয়েছেন বিজেপির অগ্নিমিত্রা পালকে। শত্রুঘ্ন সিনহা পেয়েছেন ৬ লক্ষ ৫৬ হাজার ৩৫৮ টি ভোট। আসানসোল দক্ষিণের বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পালের দখলে গেছে ৩ লক্ষ ৫৩ হাজার ১৪৯ টি ভোট। নিজের বিধানসভা আসনেও পিছিয়ে অগ্নিমিত্রা। তবে বালিগঞ্জে বাবুল সুপ্রিয় জিতলেও তৃণমূলের ভোট কমেছে প্রায় ২১ শতাংশ। পক্ষান্তরে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত বালিগঞ্জে বামেদের ভোট বৃদ্ধি চোখে পড়ার মতো- যা নিয়ে ইতিমধ্যেই জোর চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক মহলে।
৫.৬১ থেকে ২৪.৫৭ করল বামেরা
রাজ্য রাজনীতির অন্যতম মুখ সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে বালিগঞ্জ আসনটি শূন্য হয়। এক বছর আগে বিধানসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রে ৭৫ হাজার ৩৫৯ ভোটের বিশাল ব্যবধানে বিজেপির লোকনাথ চট্টোপাধ্যায়কে হারিয়েছিলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। সুব্রত পেয়েছিলেন ১ লক্ষ ৬ হাজার ৫৮৫টি ভোট- যা প্রদত্ত ভোটের ৭০.৬০ শতাংশ। বিজেপি প্রার্থী পেয়েছিলেন ৩১ হাজার ২২৬টি ভোট- যা প্রদত্ত ভোটের মাত্র ২০.৬৮ শতাংশ। উপনির্বাচনে বাবুল সুপ্রিয় জিতলেন মাত্র ১৯ হাজার ৯০৪ ভোটে। বাবুল ভোট পেয়েছেন ৫০ হাজার ৭২২টি। যা প্রদত্ত ভোটের ৪৯.৬৮ শতাংশ। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত বালিগঞ্জে এক বছরের ব্যবধানে ২১ শতাংশ ভোট কমল শাসকদলের।
বালিগঞ্জে সিপিএম প্রার্থী সায়রা শাহ হালিম দ্বিতীয়। এর চেয়েও বড় কথা বাম ভোটের বৃদ্ধির হার- যা রীতিমতো বিস্ময়কর বলেই মানছে রাজনৈতিক মহল। সায়রা পেয়েছেন ৩০ হাজার ৮১৮টি ভোট। যা প্রদত্ত ভোটের ৩০.১৮ শতাংশ। একুশের বিধানসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রের বাম ও কংগ্রেসের জোট প্রার্থী সায়রার স্বামী ডঃ ফুয়াদ হালিম পেয়েছিলেন মাত্র ৮ হাজার ৪৭৪টি ভোট। ফুয়াদের প্রাপ্ত ভোটের হার ছিল সাকুল্যে ৫.৬১ শতাংশ। এক বছর পরে উপনির্বাচনে বামেদের ভোট বাড়ল ২৪.৫৭ শতাংশ। ২০০৬-এর পর বালিগঞ্জ আসনে ভোট ঊর্ধ্বমুখী হল বাম শিবিরের।
দুটি ওয়ার্ডে তৃণমূলকে পেছনে ফেলেছে বাম
বালিগঞ্জ উপনির্বাচনে প্রার্থী দিয়েছিল কংগ্রেস। কংগ্রেসের কামরুজ্জমান চৌধুরী পেয়েছেন ৫ হাজার ১৯৫টি ভোট। কংগ্রেসের প্রাপ্ত ভোটের হার ৫.০৯ শতাংশ। বালিগঞ্জে দুই থেকে তিনে নামল বিজেপি। পদ্ম প্রার্থী কেয়া ঘোষ পেয়েছেন ১২ হাজার ৯৬৭ ভোট। কেয়ার প্রাপ্ত ভোট ১২.৭০ শতাংশ। বালিগঞ্জে বিজেপির ভোট কমল ৭.৯৮ শতাংশ।
বালিগঞ্জ উপনির্বাচনের ফল প্রকাশের পর রাজনৈতিক মহলে একটিই প্রশ্ন- সংখ্যালঘু ভোট কি তৃণমূল থেকে সরতে শুরু করল? উপনির্বাচনে বালিগঞ্জের ভোটারদের ভোটদানে অনীহা ছিল চোখে পড়ার মতোই। বিধানসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রে ভোট পড়েছিল ৬৪ শতাংশ। উপনির্বাচনে মাত্র ৪১ শতাংশ! বালিগঞ্জে ভোটদানের হার কমেছে ২৩ শতাংশ। এত বিশাল সংখ্যক ভোটারদের বুথে না যাওয়ার কারণ কী? রমজান মাস ও অত্যধিক গরমকেই দায়ী করছে শাসক শিবির। ভোটদানের হার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেলেও বালিগঞ্জ উপনির্বাচনে ভোটাদাতাদের বড় অংশই ছিল সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত দুটি ওয়ার্ডে বামেদের ভোট তৃণমূলকে পেছনে ফেলেছে বলে খবর।
সংখ্যালঘু ভোট তৃৃণমূল থেকে বামে সুই্যং
নিঃসন্দেহে সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের মতো ক্যারিশ্মা নেই বাবুল সুপ্রিয়র। সুব্রত বালিগঞ্জে জিতেছিলেন ৭৫ হাজারেরও বেশি ভোটে। উপনির্বাচনে ভোট দানের হার মাথায় রেখেই বাবুলের প্রত্যাশা ছিল ৪০-৪৫ হাজারে জেতার। কিন্তু দলবদলু বাবুলের জয়ের মার্জিন আটকে গেল বিশ হাজারের দোরগোড়ায়। দলের ভোট হ্রাসের জন্য কম ভোটদানকে শাসক শিবির থেকে দায়ী করা হলেও তাতে জোড়াফুলের সংখ্যালঘু ভোটে ভাঁটার টান আড়াল করা যাচ্ছে না। এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
রাজনৈতিক মহলের প্রশ্ন- ভোটদানের হার যতই কমুক জনভিত্তিতে ক্ষয় না ধরলে বালিগঞ্জে তৃণমূলের ভোট ২১ শতাংশ কমবে কেন? তৃণমূলের ভোট কমার পাশাপাশি বামেদের ভোট বাড়ার হারটি কিন্তু স্পষ্ট। সিপিএমের ভোট বেড়েছে ২৪ শতাংশেরও বেশি। সংখ্যালঘু এলাকায় ভোটারদের একটি বড় অংশ তৃণমূল থেকে বামে সুই্যং করাতেই স্বামী ফুয়াদের থেকে সায়রার ভোটে এমন উল্লম্ফন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। খাস কলকাতায় বালিগঞ্জের মতো বরাবরের দুর্বল ঘাঁটিতে ভোটের উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া বাম শিবিরকে যে যথেষ্টই উজ্জীবিত করবে তাতে কোনও সন্দেহ নেই।
Photo Credit- Facebook. Fearute image is representational.