অসমে নিঃশব্দে জনভিত্তি শক্ত করছে ‘আপ‘। গুয়াহাটির পুরভোটে কংগ্রেস নিশ্চিহ্ন। কিন্তু আম আদমি পার্টি একটি ওয়ার্ডে জয়ী। আর তৃণমূল ব্যস্ত কংগ্রেসের নেতাদের দলে টানতে।
বিশেষ প্রতিবেদন : ৬০ ওয়ার্ডের গুয়াহাটি পুরসভার নির্বাচনে কংগ্রেস শূন্য। কিন্তু খাতা খুলল আপ। বিজেপি একাই পেয়েছে ৫২টি। জোটসঙ্গী অসম গণ পরিষদ ৮টি। বিরোধী শিবির থেকে দুই বিজয়ীর একজন আপের অপরজন অসম গণ পরিষদের অন্য একটি গোষ্ঠীর। অসমে রাজনৈতিক জমি দখল নিয়ে বহুদিন ধরেই হম্বিতম্বি করছে তৃণমূল। অথচ পুরভোটে আসন বের করে নিল কেজরিওয়ালের আপ। গুয়াহাটি পুরসভার ৪২ নম্বর ওয়ার্ড থেকে বিজয়ী হয়েছেন আম আদমি পার্টির প্রার্থী মাসুমা বেগম। তবে কি অসমেও সংগঠন বিস্তারে মমতাকে টেক্কা দিয়ে দিলেন কেজরিওয়াল?
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অরবিন্দ কেজরিওয়াল- দু’জনেই উচ্চাকাঙ্ক্ষী মুখ্যমন্ত্রী। দু’জনেই চান নিজেদের দলকে আঞ্চলিকতার গন্ডি ছাড়িয়ে জাতীয় স্তরে বিস্তার ঘটাতে। মমতা চেষ্টা করছেন কিন্তু এখনও পর্যন্ত বাংলার বাইরে দাগ কাটতে ব্যর্থ। অথচ কেজরিওয়ালের অনেক আগে থেকেই রাজ্যে রাজ্যে জমি চষতে লোকলস্কর লাগিয়ে দিয়েছেন মমতা। অসমের কথাই ধরা যাক। পশ্চিমবঙ্গের প্রতিবেশী রাজ্য। বাংলার বাইরে ত্রিপুরার পরেই সবথেকে বেশি বাংলাভাষী বাস করে অসমে। ত্রিপুরার পাশাপাশি অসম নিয়েও তৃণমূলের তৎপরতা অনেক দিনের। কিন্তু ত্রিপুরার মতো অসমেও এখনও পর্যন্ত জুত করে উঠতে পারে নি তৃণমূল।
কেজরিওয়াল ও মমতার মডেলে পার্থক্য স্পষ্ট
দল ভাঙানোতে অবশ্য তৃণমূলের আন্তরিকতার অভাব নেই। কিন্তু তাতে রাজ্যে রাজ্যে দলের জনভিত্তি বাড়ছে কই? অসমের বরাক উপত্যকার প্রয়াত বাঙালি নেতা সন্তোষমোহন দেবের কন্যা সুস্মিতা দেবকে কংগ্রেস থেকে ভাঙিয়ে এনে রাজ্যসভায় পাঠিয়েছেন মমতা। দু’দিন আগেই অসম প্রদেশ কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা রিপুন বোরাকে দলে টানলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিষেকের লক্ষ্য- চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনে অসমে কয়েকটি জোড়াফুল ফোটানো। লক্ষ্যে পৌঁছাতে অন্য দল বিশেষ করে কংগ্রেস থেকে নেতা সংগ্রহে নেমেছেন তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কমান্ড।
এতে কাজ কতটুকু হবে সময় বলবে। কিন্তু তৃণমূলের ট্র্যাক রেকর্ড বলছে অন্য দলের বাতিল ঘোড়া কিনে এখনও পর্যন্ত বাংলার বাইরে কোথাও সাফল্য পায় নি তৃণমূল। ভোটের আগে গোয়ায় অন্য দল থেকে নেতা তোলার কার্নিভাল শুরু করে দিয়েছিলেন অভিষেক। একেবারে হইহই কান্ড। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লুইজিনহো ফেলেইরো কংগ্রেস ত্যাগ করে তৃণমূলে গেলেন। ফেলেইরোর হাতে রাজ্যসভার একটি আসন গুঁজে দিলেন মমতা। তার জন্য মূল্য দিতে হল বাঙালি অর্পিতা ঘোষকে। আরও অনেককেই অন্য দল থেকে তৃণমূলে টেনে আনেন অভিষেক। কিন্তু তাতে দিন শেষে গোয়ায় তৃণমূলের প্রাপ্তি লবডঙ্কা। ভোটের ফল বেরিয়ে গেছে ১০ মার্চ। এতদিনে পানাজিতে তৃণমূলের দফতরের বাইরে সাইনবোর্ডটুকুও আছে কিনা সন্দেহ।
গোয়ায় রাজ্য বিস্তারে লেগে রয়েছেন অরবিন্দ কেজরিওয়ালও। এবারের ভোটে সৈকত রাজ্যে ভাল ফল করতে মেহনতও কম করেন নি দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু অন্য দল থেকে লোক ভাঙানোর সহজ রাস্তা পরিহার করেছে আম আদমি পার্টি। গোয়ায় আপ আশানুরূপ ফল প্রাপ্তিতে ব্যর্থ হলেও দু’টি আসন লাভ করেছে। অসমেও বাজনা বাজিয়ে চলেছে তৃণমূল। আর খাতা খুলে ফেলেছে আম আদমি পার্টি। তৃণমূল আর আপের সংগঠন বিস্তারের চরিত্রের মধ্যে পার্থক্যটা কিন্তু খুব স্পষ্ট। অন্য দলের বাতিল মাল কেজি দরে ঘরে না তুলে নীরবে জমি তৈরি পছন্দ করেন খড়্গপুর আইআইটির প্রাক্তনী। তৃণমূল সুপ্রিমো চান অন্যের প্লেয়ার ভাঙিয়ে এনে রাতারাতি সাফল্য। কিন্তু বাংলার বাইরে এই ফর্মূলা কাজ করছে না।
পাঞ্জাবের পর হিমাচলে নজর কেজরির
আপ দিল্লির পর পাঞ্জাবে সরকার গঠন করেছে। অরবিন্দ কেজরিওয়ালের পরবর্তী লক্ষ্য হরিয়ানা এবং হিমাচল প্রদেশ। গুজরাটেও ঝান্ডা গাড়তে চাচ্ছে আপ। বাইশের শেষে গুজরাট-হিমাচল দুই রাজ্যেই ভোট। তবে কেজরিওয়ালের মূল লক্ষ্য- হিমালয় রাজ্যে পাঞ্জাবের মতোই নজরকাড়া ফল ছিনিয়ে আনা। দিল্লিকে কেন্দ্র করে নিজের বৃত্তটাকে বড় করতে চাইছেন কেজরি। দিল্লির নিকটবর্তী তিন রাজ্য পাঞ্জাব-হরিয়ানা এবং হিমাচল প্রদেশের মধ্যে আয়তনগত সাদৃশ্য আছে। পাঞ্জাব দখলের পর হরিয়ানা ও হিমাচল প্রদেশে খুব হিসেব কষেই নজর দিয়েছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী। হিমাচল প্রদেশে আপের ঝাড়ু শেষ পর্যন্ত কী কামাল করে পরের কথা কিন্তু সেখানে কেজরিওয়ালের সভায় জন সমাগম হচ্ছে কিন্তু চোখে পড়ার মতোই।
একটা কথা খুব পরিস্কার- বাংলার বাইরে মমতার রাজনৈতিক পরিকল্পনা এখনও পর্যন্ত খুব একটা স্পষ্ট নয়। প্রশান্ত কিশোরের রাজনৈতিক দূরদর্শিতার প্রশংসা তাঁর নিন্দুকেরাও করতে বাধ্য। এই দল সেই দল থেকে লোক টেনে তৃণমূল বাংলার বাইরে দাঁত ফোটাতে পারবে না- এটা বুঝতে পেরেই কি মানে মানে জোড়াফুলের ঘর থেকে তল্পিতল্পা গুটিয়ে কেটে পড়েছেন পিকে?
Photo Credit- Nagaland Post ( for feature image)/ Official FB page of AAP.