শ্রীশ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের ২১১তম জন্মতিথিতে ঠাকুরনগরের মহামেলায় ভার্চুয়ালি অংশ নিলেন দেশের প্রধানমন্ত্রী। ভক্তদের উচ্ছ্বাস-আনন্দকে যেন কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিল মোদীর ভাষণ।
ডেস্ক রিপোর্ট :মতুয়া সমাজ ও আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা শ্রীশ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের জীবন ও দর্শন আজকের দিনে আরও বেশি প্রাসঙ্গিক বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শ্রীশ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের ২১১ তম পুণ্য জন্মতিথিতে শ্রীধাম ঠাকুরনগরে আয়োজিত বারুণী মেলা ও কামনা স্নান উপলক্ষে মঙ্গলবার রাত ন’টায় ভার্চুয়াল মাধ্যমে ভক্ত ও পুণ্যার্থীদের উদ্দেশ্যে সরাসরি ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী। এই প্রথম দেশের কোনও প্রধানমন্ত্রী মতুয়া সম্প্রদায়ের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ভাষণ দিলেন। শ্রীশ্রীহরিচাঁদ ঠাকুরের আবির্ভাবতিথি ও মেলা উপলক্ষে শুভেচ্ছাবার্তাও প্রেরণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
ভার্চুয়াল বক্তৃতার শুরুতেই মতুয়া সম্প্রদায়ের সাধু, গোঁসাই, পাগল এবং দলপতি সহ সকল ভক্তকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান মোদী। গত বছর সারা ভারত মতুয়া মহাসংঘের সঙ্ঘাধিপতি ও কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরের সঙ্গে মতুয়া সম্প্রদায়ের মহাতীর্থ বাংলাদেশের ওড়াকান্দি ঠাকুরবাড়িও দর্শন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। এদিন এই ঘটনার কথা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন তিনি। নিষ্পেষিত নিম্নবর্ণের বাঙালিহিন্দুদের জাগরণের ইতিহাসে মতুয়া সমাজ আন্দোলন একটা নির্ণায়ক ঘটনা। প্রধানমন্ত্রীর ভার্চুয়াল ভাষণে এই দিকটির উল্লেখ ছিল। শ্রীশ্রী হরিচাঁদ ঠাকুর কেন সময়ের চেয়ে এগিয়ে থাকা এক দ্রষ্টা যুগনায়ক, তাও ব্যাখ্যা করেন নরেন্দ্র মোদী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যে লিঙ্গসাম্যের কথা আজ দুনিয়া জুড়ে আলোচিত হচ্ছে, ঊনবিংশ শতকেই সেই ভাবনাকে নিজের লক্ষ্যে পরিণত করেছিলেন হরিচাঁদ ঠাকুর। নারী জাতির শিক্ষা, সমানাধিকার ও আত্মোন্নতির জন্য শ্রীশ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরজি সদা সচেষ্ট ছিলেন।” হরিচাঁদ ঠাকুর সেই যুগে যা চেয়েছিলেন আজকে সরকার ‘বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও’ এর মাধ্যমে সেই কাজই করে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন মোদী।
সমাজে বেড়ে চলা হিংসা, হানাহানি বিভাজন, ভেদভাব, বিচ্ছিন্নতা ও আঞ্চলিকতাবাদকে দূর করতে আজকের দিনে হরিচাঁদ ঠাকুরের দর্শন আরও বেশি প্রাসঙ্গিক বলে জানান মোদী। তিনি বলেন, ভারতীয় সমাজ-সংস্কৃতি নদীর মতোই বহতা এবং চলার পথে যে কোনও বাধাই আসুক না কেন তা স্বচ্ছন্দ্যে বাঁক নিতে জানে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি মতুয়া সমাজের মহামিলন মেলায় অংশ নিতে পেরে গর্বিত। সরকারি ব্যবস্থা ও সমাজ থেকে দূর্নীতিকে দূর করতে মতুয়া জনগোষ্ঠীকে সচেতন হওয়ার আবেদন জানান মোদী। প্রধানমন্ত্রী বলেন,” কোথাও কারও উপর যে কোনও ধরণের উৎপীড়ন হলেই তার বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলা জরুরি।”
মতুয়াদের মহোৎসবে সামিল হয়ে রাজনৈতিক হিংসার বিরুদ্ধেও আওয়াজ তোলেন মোদী। প্রধানমন্ত্রী সবাইকে স্মরণ করিয়ে দেন- ” রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেওয়া আমাদের সবার গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু রাজনৈতিক বিরোধের কারণে কারও উপর হিংসাত্মক আক্রমণ নামিয়ে আনা, হুমিকি-ধামকি দিয়ে কারও মুখ বন্ধ রাখার চেষ্টা করা গণতান্ত্রিক রীতিনীতির পরিপন্থী।” তিনি আক্ষেপ করে বলেন,” স্বার্থের জন্য খুন আমরা দেখেছি। কিন্তু তা বন্ধ করতে হবে।” রাজনৈতিক কারণে হিংসা, নির্যাতন এবং অরাজকতা বন্ধে মতুয়া সমাজকে রুখে দাঁড়াতে আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন,” হিংসা, নির্যাতন ও অরাজকতা সৃষ্টির মানসিকতা সমাজের যেখানেই লক্ষ্য করা যাবে তার বিরোধিতা করা আমাদের সবার কর্তব্য।”
রাজনৈতিক মহল বলছে, মতুয়াদের মহামেলায় ঘুরিয়ে বগটুই গণহত্যা নিয়েই ইঙ্গিত দিলেন নরেন্দ্র মোদী। রাজনৈতিক হানাহানি, খুনোখুনির জন্য বাংলা এখন গোটা ভারতেই কুখ্যাত। দুর্নীতি, তোলাবাজির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে শাসকদলের নেতাদের নাম। রাজ্য সরকার না চাইলেও হাইকোর্টের নির্দেশে বগটুই হত্যাকান্ডের সিবিআই তদন্ত শুরু হয়েছে। কিন্তু সামাজিকভাবেও এই অরাজক পরিস্থিতির মোকাবিলা করা জরুরি বলে মনে করছেন মোদী। এই কাজে বাংলার বিশাল মতুয়া সমাজের উপর তাঁর যে আস্থা ও বিশ্বাস আছে প্রধাণমন্ত্রীর ভার্চুয়াল ভাষণেই তা স্পষ্ট।
কোভিডের কারণে পর পর দুই বছর বনগাঁর ঠাকুর নগরে মহোৎসব হয় নি। এই বছরের মেলায় ভক্তদের উচ্ছ্বাস, উৎসাহ ও সমাগম ছিল চোখে পড়ার মতো। দেশের প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা বার্তা, ট্যুইট ও ভার্চুয়াল বক্তৃতা মহামেলার রঙকে আরও উজ্জ্বল করে তুলেছে বলে মানছেন ভক্তরা।
প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ-
Photo and Video credit- official FB page of PM Modi and Shantanu Thakur.