যদিও রাজনৈতিক মহলের একটি বড় অংশ মনে করে, শাসকদলের ওই বিধায়ক যেই ধরণের হুমকি দিয়েছেন তাতে তাঁকে গ্রেফতারের নির্দেশই দেওয়া উচিত ছিল কমিশনের।
ডেস্ক রিপোর্ট :পান্ডবেশ্বরের তৃণমূল বিধায়কের ভাইরাল ভিডিওকে হালকাভাবে নিল না নির্বাচন কমিশন। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে ( নাগরিক নিউজ ডট কম ভিডিওর সত্যতা যাচাই করে নি ) বিধায়ক নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীকে ভোটারদের হুমকি দিতে দেখা যাচ্ছে। আগামী ১২ এপ্রিল আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন। বাবুল সুপ্রিয় পদত্যাগ করায় আসনটি শূন্য হয়েছে। পান্ডবেশ্বের বিধানসভা আসানসোল লোকসভার অন্তর্গত। পান্ডবেশ্বরের লাউদোহা ব্লকের এক কর্মীসভায় নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী ভাষণ দেওয়ার সময় ভিডিওটি ধারণ করা হয় বলে সূত্রের খবর। ভিডিও ভাইরাল হতেই রাজনৈতিক মহলে তোলপাড় পড়ে যায়। তৃণমূল বিধায়কের বিরুদ্ধে থানায় এফআইআর করার পাশাপাশি কমিশনে যায় বিজেপি। সবদিক খতিয়ে দেখে নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর ভোট প্রচারে সাতদিনের জন্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করল কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন। বুধবার সকালে জারি করা কমিশনের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ৩০ মার্চ সকাল দশটা থেকে ৬ এপ্রিল রাত আটটা পর্যন্ত কোনও ধরণের প্রচারে অংশ নিতে পারবেন না পান্ডবেশ্বরের তৃণমূল বিধায়ক।
ঠিক কী বলেছিলেন তৃণমূল বিধায়ক নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী? কর্মীসভায় নরেন্দ্রকে বলতে শোনা যাচ্ছে- “যারা কট্টর বিজেপি। যাদেরকে হেলানো যাবে না। তাদের চমকাতে হবে। বলবেন, আপনি যদি ভোট দিতে যান, তা হলে ধরে নেব বিজেপি-কে ভোট দেবেন। ভোটের পর আপনি কোথায় থাকবেন, সেটা আপনার নিজের রিস্ক। আর আপনি যদি ভোট দিতে না যান তা হলে ধরে নেব, আপনি আমাদের সমর্থন করছেন। আপনি ভালভাবে থাকুন। ব্যবসা করুন। চাকরি করুন। আমরা আপনার সঙ্গে আছি। ক্লিয়ার!”
ভাইরাল ভিডিও-
কত বড় হুমকি! ভোটারদের প্রভাবিত করাই যেখানে আইনের চোখে অপরাধ সেখানে একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি কীভাবে বলতে পারেন যারা কট্টর বিজেপির ভোটার তাদের চমকাতে হবে? চমকানির পরেও ভোট দিতে গেলে কী পরিণতি হবে তাও ক্লিয়ার করে দিয়েছেন নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। অবাধ্য ভোটারদের বাড়িছাড়া করার ইঙ্গিতটা নরেন্দ্রর কথায় স্পষ্ট। পান্ডবেশ্বরের বিধায়কের কাছে বিরোধীদলের সমর্থকদের এলাকায় চাকরি-বাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য করে ভাল থাকার একটাই শর্ত- ভোটের দিন বাড়িতে বসে থাকা।
ভিডিও ভাইরাল হতেই ফেঁসে গেছেন বুঝতে পেরে মুখ রক্ষার জন্য উল্টোপাল্টা যুক্তি দেওয়া শুরু করেন নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। সাফাই দিতে গিয়ে আবার বেফাঁস বলে বসেন তৃণমূলের বিধায়ক। তিনি বলেন- ” কোনও পঞ্চায়েত ভোটের সময় হয়তো কর্মীদের উজ্জীবিত করার জন্য বলেছিলাম। পান্ডবেশ্বরে আমরা সব দলের কর্মীরা একসঙ্গে মিলেমিশে থাকি। এখানে শান্তিতে ভোট হয়। শান্তিতে ভোট হবে।” যদিও ভাইরাল হওয়া ভিডিও উপনির্বাচনের প্রচারে কর্মীসভায় দেওয়া, এটা নিশ্চিত হওয়ার পরেই তৃণমূল বিধায়ককে শাস্তি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু যদি তর্কের খাতিরে ধরেও নেওয়া হয় যে ভিডিওটি গত পঞ্চায়েত ভোটের সময়কার তাহলেও কি শাস্তির হাত থেকে রেহাই পেতে পারেন নরেন্দ্র? পান্ডবেশ্বরের বিধায়ক কী বলতে চান? পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় ভোটারদের চমকালে অসুবিধা নাই? পঞ্চায়েত ভোটের সময় দলের কর্মীদের এই ভাষায় উজ্জীবিত করলে কোনও দোষ নাই?
পান্ডবেশ্বরের অনেকেই বলছেন, আসলে পঞ্চায়েত-পুরভোটে ভোটারদের চমকাতে চমকাতে অভ্যাসটাই অমন হয়ে গেছে নরেন্দ্রনাথের। ভেবেছিলেন উপনির্বাচনের দায়িত্বেও ঠুঁটো জগন্নাথ রাজ্য নির্বাচন কমিশন, বিরোধীরা অভিযোগ করলেও দিব্যি পার পেয়ে যাবো। রাজ্য নির্বাচন কমিশনের অধীনে বাংলায় পঞ্চায়েত-পুরভোট কেমন সুষ্ঠুভাবে হয় পান্ডবেশ্বরের বেফাঁস জবাব সেটাই বুঝিয়ে দিল বলে কটাক্ষ করছেন বিরোধীরা।
মঙ্গলবার ভাইরাল ভিডিও হাতে দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনের দফতরে যান বিজেপির একটি প্রতিনিধি দল। ভোটারদের হুমকি দেওয়ার অপরাধে কমিশনের কাছে পান্ডবেশ্বরের তৃণমূল বিধায়কের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানায় বিজেপি। কমিশন ব্যবস্থা নেওয়ায় উপনির্বাচনের আগে পান্ডবেশ্বরের ভোটারদের মনে খানিকটা নিরাপত্তা ফিরে এল বলে মনে করছেন বিরোধীরা। যদিও রাজনৈতিক মহলের একটি বড় অংশ মনে করে, শাসকদলের ওই বিধায়ক যেই ধরণের হুমকি দিয়েছেন তাতে তাঁকে গ্রেফতারের নির্দেশই দেওয়া উচিত ছিল কমিশনের। তবুও স্বস্তি যে পান্ডবেশ্বরের তৃণমূল বিধায়ককে সাতদিনের জন্য হলেও প্রচার থেকে সরতে বাধ্য করল নির্বাচন কমিশন।
Photo and video- collected