পুরভোটেও পঞ্চায়েতের ছবি: ছাপ্পা,বুথ দখল থেকে সাংবাদিক নিগ্রহ সব‌ই চলল জলপাইগুড়িতে - nagariknewz.com

পুরভোটেও পঞ্চায়েতের ছবি: ছাপ্পা,বুথ দখল থেকে সাংবাদিক নিগ্রহ সব‌ই চলল জলপাইগুড়িতে


জলপাইগুড়ি থেকে কি পাকাপাকি ভাবেই বিদায় নিল রাজনৈতিক সৌহার্দ্য? পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় শহরের বাইরে হয়েছে ভোট লুঠ। আর পুর নির্বাচনে শহরের ভেতরেই চলল অবাধে ছাপ্পা-বুথ দখল। নিগৃহীত সাংবাদিকেরাও!

বিশেষ প্রতিবেদন :পুরভোটে ফের ভূলুন্ঠিত জলপাইগুড়ির রাজনৈতিক সৌহার্দ্য। জলপাইগুড়িতে ভোট ঘিরে ব্যাপক অশান্তির সূত্রপাত আঠারোর পঞ্চায়েত ভোট থেকে। তার আগে জলপাইগুড়িতে ভোট ঘিরে হিংসা-অশান্তি-মারপিটের স্মৃতি মনে পড়ে না। বাইশের পুর নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে প্রশাসন উপযুক্ত পদক্ষেপ নেবে – এমন আশা শহরের নাগরিক সমাজের ছিল। কিন্তু প্রশাসন যে নাগরিকদের আশা পূরণে ব্যর্থ ভোটের দিনের চিত্রেই তা পরিস্কার। সবকটি ক্ষেত্রেই অভিযোগের তীর শাসকদলের দিকে। পঞ্চায়েত এলাকা থেকে বহিরাগতদের এনে ভোটে অশান্তি করা হয়েছে বলে বিরোধীদের অভিযোগ‌।

আক্রান্ত সাংবাদিক,নীরব দর্শক পুলিশ!

সবথেকে আশঙ্কার কথা, পঞ্চায়েত ভোটের পর ফের জলপাইগুড়িতে আক্রান্ত গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ। রবিবার শুধু জলপাইগুড়ি নয় কাঁথি এবং উত্তর দমদম সহ রাজ্যের আরও অনেক জায়গায় নিজেদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিরা‌। দেখা যাচ্ছে সাংবাদিকদের মারাটা অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেছেন রাজ্যের শাসকদলের মাস্তানরা।

জাল ভোট, বুথ দখল, বুথ জ্যামের সময় সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিরা‌ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলেই তাদের উপর সব রাগ গিয়ে পড়ে রাজনৈতিক ‌দুষ্কৃতীদের। মনোনয়ন পর্ব থেকে সংবাদ শিরোনামে জলপাইগুড়ির ১ নম্বর ওয়ার্ড। তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ প্রার্থী শেখর বন্দ্যোপাধ্যায়কে হাইকোর্টের নির্দেশের পরেও পুলিশ মনোনয়ন পেশ করতে দেয় নি বলে অভিযোগ। এই ঘটনায় জলপাইগুড়ির সদর এসডিও’কে হাইকোর্ট ভর্ৎসনা পর্যন্ত করেছে।

১ নম্বর ওয়ার্ডে আক্রান্ত সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধি।

ভোটের দিনও সংবাদ শিরোনামে ১ নম্বর ওয়ার্ড। ওয়ার্ডের ইন্দিরা কলোনি এলাকার একটি বুথে গোলমালের খবর পেয়ে ছুটে যান সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিরা‌। সাংবাদিকেরা ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন বহিরাগতরা বুথ দখল করে অবাধে ছাপ্পা মারছে। পুলিশ নির্বাক দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। ঘটনার ছবি তুলতে যাওয়া মাত্রই জি ২৪ ঘন্টার সাংবাদিক প্রদ্যুৎ দাসের উপর চড়াও হয় দুষ্কৃতীরা। ভিস্যুয়াল মিডিয়ার সাংবাদিককের অস্ত্র হল বুম আর ক্যামেরা। পুলিশের সামনেই ওই সাংবাদিকের বুম-ক্যামেরা ভেঙে দেওয়া হয়। প্রদ্যুতের মাথায়-বুকে-পিঠে-মুখে লাথি, কিল-চড় কোন‌ওটাই মারতে বাকি রাখে নি শাসকদলের দামাল ছেলেরা।

২৪ নম্বর ওয়ার্ডে বিটি স্কুলের ২৪/২ নং বুথে তান্ডব চালায় দুষ্কৃতীরা।

পুরভোটে ব্যাপক অশান্তির খবর এসেছে জলপাইগুড়ির ২৪ নম্বর ওয়ার্ড থেকেও। বেসিক ট্রেনিং স্কুলের ২৪/২ নম্বর বুথে ঢুকে বহিরাগত দুষ্কৃতীরা লাঠিসোঁটা হাতে তান্ডব চালিয়েছে বলে অভিযোগ। এদের প্রত্যেকের মুখ কালো কাপড়ে ঢাকা ছিল এবং এরা পঞ্চায়েত এলাকা থেকে ঢুকেছিল বলে জানা যাচ্ছে। বিরোধী এজেন্টদের মেরে বের করে দিয়ে বুথে অবাধে ছাপ্পা চলে বলে অভিযোগ। ইভিএম পর্যন্ত ভেঙে দেওয়া হয়। এখানেও পুলিশ দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে বলে অভিযোগ। সাংবাদিকেরা ছবি তুলতে গেলে তাদের দিক পাথর ছোঁড়ে দুষ্কৃতীরা।

সুষ্ঠু ভোট করাতে ব্যর্থ প্রশাসন

দুষ্কৃতীরা তো সাংবাদিকদের মেরেইছে এমনকি নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করার দায়িত্বে থাকা সরকারি আধিকারিকেরা পর্যন্ত এই কাজে পরোক্ষে মদত দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অশান্তির খবর পেয়ে সাংবাদিকেরা যখন ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইন্দিরা কলোনির বুথে যান তখন ইলেকশন কমিশনের পরিচয়পত্র থাকার পরেও সাংবাদিকদের বুথে ঢুকতে দেন নি প্রিসাইডিং অফিসার। কারণ সেই সময় প্রিসাইডিং অফিসারের চোখের সামনে বুথে ঢুকে ছাপ্পা মারছিল দুষ্কৃতীরা। সাংবাদিকেরা তার পরেও কর্তব্যে অবিচল থাকলে তাদের পুলিশের সামনেই পেটানো হয়।

জলপাইগুড়ি পুরসভার ১,৬,১২,২৪ এবং ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে অবাধে ছাপ্পা হয়েছে বলে অভিযোগ বিজেপির সাংসদ জয়ন্ত রায়ের। ভোটে ছাপ্পা ও সন্ত্রাসের প্রতিবাদে বিকেলে থানার সামনে বিক্ষোভও দেখান বিজেপির নেতাকর্মীরা। সাংবাদিক নিগ্রহের‌ও নিন্দা করেছেন সাংসদ। মোট কথা জলপাইগুড়ির পুরভোটকে নিষ্কলঙ্ক রাখতে ব্যর্থ প্রশাসন। অশান্তির দায় নিতে হবে শাসক দলের নেতাদের‌ও। গায়ের জোরে নাগরিকদের ভোটাধিকার হরণ থেকে সাংবাদিক নির্যাতন- কোন‌ওটাই তাঁদের মহিমান্বিত করল না। ক্ষমতার দম্ভে গায়ের চামড়া গন্ডারের মতো মোটা হয়ে গেলে শরীর থেকে লাজলজ্জা উধাও হয়ে যায়। ক্ষমতার দাপটে ধরাকে সরা জ্ঞান ইতিহাসে নতুন কিছু নয়। আপনারাও কর্মের ফল গুণে গুণে ফেরত পাবেন যথা সময়ে।

ভিডিওতে দেখুন-

Photo and Video- Reporter.


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *