বিশেষ প্রতিবেদন :চেষ্টার ত্রুটি ছিল না। কিন্তু দলের সুপ্রিমোর মন ভেজে নি। তাই দলে ফিরে ভোটে জিতলেও পুরোনো সাম্রাজ্য ফেরত পেলেন না সব্যসাচী দত্ত। বিধাননগরের মেয়রের চেয়ার পুনরুদ্ধার করা হল না সব্যসাচীর। কৃষ্ণা চক্রবর্তীর উপরেই আস্থা রাখলেন মমতা। শুক্রবার বিধাননগর পুর নিগমের মেয়র হিসেবে কৃষ্ণার নামের উপরেই পুনরায় সিলমোহর বসালেন তৃণমূল নেত্রী।
ভাগ্যচক্রের ফেরে সব্যসাচী
বিধাননগর-রাজারহাট-নিউটাউন তল্লাটের তৃণমূল নেতাদের মধ্যে ধারে-ভারে-দাপটে সব্যসাচীই বরাবর এগিয়ে। তাপস চট্টোপাধ্যায় কিম্বা সুজিত বসুর সঙ্গে সব্যসাচীর ঠোকাঠুকির গল্প সবার জানা। কিন্তু এতদিন প্রতিদ্বন্দ্বীদের ডজ করে গোলটি জালে ঢুকিয়ে গেছেন মুকুল ঘনিষ্ঠ সব্যসাচীই। কিন্তু ভাগ্যের ফেরে সবার দিন সমান যায় না। উনিশের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির অকল্পনীয় সাফল্যের পর থেকেই সব্যসাচী দত্তের মন উড়ু উড়ু। মমতার সঙ্গে দূরত্ব। দলের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বী গোষ্ঠীদের দ্বারা কোনঠাসা। মুকুল রায়কে বাড়িতে ডেকে লুচি-আলুর দম খাওয়ানো এবং তা নিয়ে তৃণমূলে তরজা। বিরক্ত হয়ে ২০১৯-এর জুলাইয়ে মেয়র পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে বসেন এই ডাকাবুকো নেতা।
অনেক জলটল মেপে উনিশের অক্টোবরে জোড়াফুল ছেড়ে পদ্মফুল শিবিরে যোগ দেন সব্যসাচী দত্ত। এক সময়ের কংগ্রেসী সব্যসাচীর ভোট ম্যানেজমেন্টে বেশ নামডাক থাকলেও একুশের বিধানসভা নির্বাচনে সাফল্য এল না। বিধাননগর কেন্দ্রে সুজিত বসুর কাছে হার স্বীকার করতে হয়েছে তাঁকে।
বিধাননগরের রাজ্যপাট হাতছাড়া। বিধায়ক পদটাও গেল। বিজেপিতে ঢুকে হাতে কেবল পেন্সিল দেখে ফের তৃণমূলে ফেরার জন্য মন উতলা হয়ে ওঠে সব্যসাচী দত্তের। আগেই মেন্টর মুকুল, রাজীব সহ আরও অনেকেই নাকে খত দিয়ে পুরোনো দলে ফিরে গেছেন। একুশের অক্টোবরে ঘর ওয়াপসির সুযোগ পান সব্যসাচীও। দুই বছরের মাথায় পদ্মফুল ছেড়ে জোড়াফুলে ফিরে আসা সব্যসাচী দত্তের।
মমতা ফরগিভ করলেও ফরগেট করেন নি
বুনো হাতি কুনকিদের সঙ্গে মেলামেশা করে ফের বনে ফিরে গেলেও ভাই-বেরাদরদের কাছে আগের কদর আর পায় না। সব্যসাচী তৃণমূলে ফিরলেও কালীঘাটের খাতায় তাঁর নম্বর যে আগের জায়গায় এখনও ফিরে আসে নি তার প্রমাণ অনেক চেষ্টার পরেও বিধাননগরের মেয়র পদ তাঁর পুনরুদ্ধার করতে না পারা।
পুরসভা নির্বাচনে দলের টিকিট প্রাপ্তির পর থেকেই সব্যসাচী অনুগামী থেকে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষককুল – অনেকেই ভেবে ছিলেন তৃণমূল জিতলে বিধাননগর পুরসভার মেয়র পদের অন্যতম দাবিদার হবেন সব্যসাচী। দাবিদার তিনি ছিলেনও। দলনেত্রীর কাছে আব্দারও করেছিলেন। মন ভোলাতে চেষ্টাও কম করেন নি। ৩১ নম্বর ওয়ার্ড থেকে ভোটে জিততেই সস্ত্রীক হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটে। সব্যসাচী জায়াকে শাড়ি গিফ্টও করেন মমতা। কিন্তু শুক্রবার বিকেলে তৃণমূল যখন চার পুরসভার মেয়র-ডেপুটি মেয়রদের নাম ঘোষণা করল তখন দলবদলু সব্যসাচীর শিকে ছিঁড়ল না।
তৃণমূলের অন্দরে অনেকেই বলছেন সুপ্রিমো রাজীব-সব্যসাচীদের মতো দলবদলুদের ফরগিভ করলেও এত তাড়াতাড়ি ফরগেট করতে রাজি নন। তাই ঘরে ফিরেও আপাতত নিষ্প্রভই থাকতে হচ্ছে বিধাননগরের হেভিওয়েট নেতা সব্যসাচী দত্তকে।
Feature Image is Representational.