আনিস খানের ফেসবুক জুড়ে তৃণমূল বিদ্বেষ, যদিও নিহত ছাত্রনেতাকে নিজেদের প্রিয় ছেলে বলে দাবি মমতার - nagariknewz.com

আনিস খানের ফেসবুক জুড়ে তৃণমূল বিদ্বেষ, যদিও নিহত ছাত্রনেতাকে নিজেদের প্রিয় ছেলে বলে দাবি মমতার


আনিস তাঁকে নির্বাচনে অনেক সাহায্য করেছে বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি। যদিও নিহত ছাত্রনেতার ফেসবুক পোস্টগুলি অন্য কথাই বলছে। আনিস মৃত্যু রহস্যের নিরপেক্ষ তদন্ত হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

ডেস্ক রিপোর্ট :আমতার নিহত ছাত্রনেতা আনিস খানকে ‘আমাদের খুব প্রিয় ছেলে‘ বলে দাবি করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়! যদিও আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ছাত্র আব্বাস সিদ্দিকির আইএস‌এফ-এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলেই দাবি। নিহত ছাত্র নেতার করা ফেসবুক পোস্ট গুলিতেও তাঁর তৃণমূল সংশ্লিষ্টতার কোনও প্রমাণ নেই। বরং সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন ইস্যুতে তৃণমূল সরকার ও মমতাকে তীব্র কটাক্ষ করতেই দেখা গেছে আনিসকে। যদিও সোমবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী বলেন,” আনিসের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ ভাল ছিল। যাঁরা এখন টেলিভিশনে দর্শনধারী হতে গিয়েছেন তাঁরা জানেন না আনিস আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন।”

নবান্নে সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

আনিস খান তাঁকে ভোটের সময় অনেক সাহায্য করেছে বলেও সাংবাদিক সম্মেলনে দাবি করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আনিসকে তাঁর প্রিয় ছেলে বলেও বর্ণনা করেন মমতা। তিনি বলেন,” আমাকে অনেক সাহায্য‌ও করেছেন নির্বাচনে। কাজেই ও আমাদের প্রিয় ছেলে।” শুক্রবার রাত একটা নাগাদ হাওড়ার আমতার সারদা খাঁ পাড়ায় চার ব্যক্তি বাড়িতে ঢুকে আনিসকে খুন করে বলে অভিযোগ। আততায়ীদের একজন পুলিশের পোশাকে ও বাকি তিনজন সিভিক ভলান্টিয়ারের পোশাকে ছিল বলে আনিসের বাবা সালাম খানের দাবি।

পুলিশ পরিচয় দিয়েই আততায়ীরা বাড়িতে ঢোকে বলে অভিযোগ করেছেন আনিসের বাবা। পুলিশের পোশাক পরা ব্যক্তিটি আগ্নেয়াস্ত্র হাতে আনিসের বাবাকে বাড়ির নিচতলায় আটকে রেখে বাকি তিনজন আনিসের খোঁজে সোজা তিনতলার ছাদে চলে যায়। সেই সময় আনিস বাড়ির ছাদেই ছিল বলে বাবা জানিয়েছেন। কিছুক্ষণ পরে ছাদ থেকে ধপ করে কিছু পড়ার শব্দ শুনতে পান সালাম খান। এর পরেই চারজন নেমে আসে। আনিসের বাবাকে ‘কাজ হয়ে গেছে স্যার’ বলে দ্রুত সরে পড়ে পুলিশ ও সিভিক ভলান্টিয়ারের পোশাক পরা ওই চারজন।

ফেব্রুয়ারির ৭ তারিখ আনিসের ফেসবুক পোস্ট।

ছাদে আনিসকে না পেয়ে বাড়ির বাইরে খোঁজ করতে গিয়ে সালাম খান দেখেন ছেলের দেহ মাটিতে পড়ে রয়েছে। ঘটনা জানাজানি হতেই এলাকার মানুষ আনিসের বাড়িতে জড়ো হয়। তাকে তুলে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক আনিস খানকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। পুলিশের লোক‌ই আনিস খানকে খুন করেছে বলে‌ পরিবারের সদস্যদের দাবি। যদিও আনিসের বাড়িতে ঘটনার সময় পুলিশ পাঠানোর কথা অস্বীকার করেছে আমতা থানা।

গত ৯ ফেব্রুয়ারি আনিস খানের ফেসবুক পোস্ট: হিজাব বিতর্কে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে পর্যন্ত তীব্র কটাক্ষ করতে ছাড়ে নি আনিস!

বছর আটাশের আনিস খান আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র। সম্প্রতি কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা নিয়ে পড়াশোনা করছিল সে। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় আনিস খান বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিল বলে জানা গেছে।‌ আব্বাস সিদ্দিকি বিধানসভা নির্বাচনের আগে আইএস‌এফ গঠন করার পর আব্বাসের দলে যোগ দেয় আনিস। সদ্য প্রয়াত আনিসের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট‌ও সেই সাক্ষ্য দিচ্ছে।

নিহত ছাত্রনেতা আনিস খানের ফেসবুক পেজ থেকে- একটি মিছিলের সামনে আনিস।

কেন্দ্রের নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সামিল আনিস খানের বিজেপি বিরোধী অবস্থান নিয়ে কোনও সংশয় নেই। রাজ্য সরকারের নিয়োগ দুর্নীতির বিরুদ্ধে পিএসসি ভবনের সামনে অবস্থান আন্দোলনের‌ শরিক আনিসকে তার কাছের লোকেরা কখন‌ও তৃণমূলের হয়ে প্রচার করতে দেখেন নি। উল্টে আনিস খানের বিরুদ্ধে পুলিশের খাতায় কয়েকটি মামলা ছিল বলে জানা গেছে। যদিও সোমবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর দাবি,” আনিসের সঙ্গে আমাদের ভাল যোগাযোগ ছিল। আনিস আমাকে নির্বাচনে সাহায্য করেছে। আনিস আমাদের প্রিয় ছেলে।”

আনিস হত্যাকান্ডের নিরপেক্ষ তদন্তের‌ও আশ্বাস দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন,“আনিসের মৃত্যুর ব্যাপারে সরকার নিরপেক্ষ তদন্ত করবে। ডিজির সঙ্গে গতকাল আমার কথা হয়েছে। ইতিমধ্যেই আমি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছি। তদন্তকারী আধিকারিকেরা ফরেনসিক রিপোর্টের ব্যবস্থা করেছেন।” মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন,“এই ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক। কার‌ও মৃত্যু আমাদের কাম্য নয়। “

আনিস খানের মৃত্যু রহস্যের কিনারা করতে সিট গঠন করার নির্দেশ দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সিট নিরপেক্ষভাবে তদন্ত শেষ করে ১৫ দিনের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। যদিও সিবিআই তদন্ত ছাড়া তাদের ভরসা নেই বলে জানিয়ে দিয়েছেন নিহত ছাত্র নেতার পরিবারের লোকেরা।

Photo sources- FB page of late Anis Khan.


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *