মুখ্যমন্ত্রী বলছেন নিহত আনিস খান তাঁদের প্রিয় ছেলে। মুখ্যমন্ত্রীর পুলিশ বলছে আনিসের বিরুদ্ধে ছিল শিশুকে যৌন নির্যাতনের মামলা!
ডেস্ক রিপোর্ট :নিহত ছাত্রনেতা আনিস খানকে সোমবার নবান্নে ‘আমাদের প্রিয় ছেলে’ বলে দাবি করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিকে একই দিনে আনিস সম্পর্কে ভয়ঙ্কর তথ্য দিলেন হাওড়া গ্রামীণের পুলিশ সুপার সৌম্য রায়। আনিস খানের বিরুদ্ধেপকসো ( প্রোটেকশন অব চিলড্রেন ফ্রম সেক্সুয়াল অফেন্সেস অ্যাক্ট ) আইনে বাগনান থানায় মামলা ছিল বলে জানিয়েছেন হাওড়া গ্রামীণের পুলিশ সুপার। কোনও প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের বিরুদ্ধে শিশুকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে পকসো আইনে মামলা দায়ের করে থাকে পুলিশ।
গত শুক্রবার রাতে হাওড়ার আমতায় নিজের বাড়িতে অস্বাভাবিক মৃত্যু হয় ছাত্রনেতা আনিস খানের। পুলিশ পরিচয়ে আসা চারজন তাকে তিনতলার ছাদে থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে খুন করেছে বলে আনিসের বাবা সালাম খানের অভিযোগ। আততায়ীরা পুলিশ ও সিভিক ভলান্টিয়ারের পোশাক পরে এসেছিল বলে সালাম খানের দাবি। আনিস খানের রহস্য মৃত্যুর জেরে রাজ্য রাজনীতি উত্তপ্ত। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র আনিস খান কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতার কোর্সে পাঠরত ছিলেন বলে জানা গেছে। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় আনিস বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও পরে আব্বাস সিদ্দিকির আইএসএফ-এ যোগ দিয়েছিলেন বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে। নিহত ছাত্রনেতার ফেসবুকেও তেমনই ইঙ্গিত মেলে।
সোমবার মুখ্যমন্ত্রী নবান্নে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হতেই আনিস হত্যা রহস্যের প্রসঙ্গ ওঠে। সেখানে নিহত ছাত্রনেতা সম্পর্কে মমতার মন্তব্যে হকচকিয়ে যান সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিরাও। সাংবাদিক বৈঠকে আনিসকে তৃণমূলের ছেলে বলে দাবি করে বসেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আনিস আমাকে অনেক সাহায্য করেছে নির্বাচনে। কাজেই ও আমাদের প্রিয় ছেলে।” এখানেই না থেমে মমতা আরও বলেন,“আনিসের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ ভাল ছিল। যাঁরা এখন টেলিভিশনে দর্শনধারী হতে গিয়েছেন তাঁরা জানেন না আনিস আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন।”
এদিকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যাকে প্রিয় ছেলে বলছেন এবং যেই ছেলে শাসক দলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখত তার বিরুদ্ধেই শিশুকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ আনছেন মুখ্যমন্ত্রীর পুলিশের আধিকারিক! সোমবার হাওড়া গ্রামীণের পুলিশ সুপার সৌম্য রায় সাংবাদিক সম্মেলনে জানান,“হাওড়ার বাগনান থানায় আনিসের বিরুদ্ধে পকসো আইনে মামলা রুজু করা হয়েছিল। এই মামলায় আনিস খানের বিরুদ্ধে আদালত থেকে সমনও জারি করা হয়েছে।” এর জেরেই আনিসের এই পরিণতি কিনা তা তদন্তসাপেক্ষ বলে মনে করেন হাওড়া গ্রামীণের এসপি।
পুলিশের লোকেরাই আনিসকে খুন করেছে বলে মৃতের পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ। মুখ্যমন্ত্রী রহস্যের কিনারা করতে সিট গঠনের নির্দেশ দিলেও সিবিআই তদন্ত চাইছেন আনিসের বাড়ির লোকেরা। আনিসের মৃত্যুর পর ফোন পেয়েও পুলিশ ঘটনাস্থলে আসতে অনেক দেরি করেছে বলে অভিযোগ। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে হাওড়া গ্রামীণের পুলিশ সুপার সৌম্য রায়কে ভবানীভবনে ডেকে কথাও বলেন রাজ্য পুলিশের ডিজি।
সোমবার সাংবাদিকদের হাওড়া গ্রামীণের পুলিশ সুপার বলেন,“আনিসের রহস্য মৃত্যুর কিনারা করতে সমস্ত দিকই খতিয়ে দেখা হবে। নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে সত্য উদ্ঘাটন হবেই।” ঘটনার পর থেকেই আনিস খানের মোবাইল ফোনটি গায়েব। ফোনটি উদ্ধার হলে তদন্তের কাজে অগ্রগতি আসবে বলে পুলিশের ধারণা। আততীয়ারই মোবাইলটি হাতিয়েছে বলে তদন্তকারীদের সন্দেহ। মৃতদেহের ময়নাতদন্তের রিপোর্টের জন্যও অপেক্ষা করছে পুলিশ।
মুখ্যমন্ত্রীর প্রিয় ছেলের বিরুদ্ধেই শিশুকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগে মামলা! আনিস খান সম্পর্কে নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যের পরেই হাওড়া গ্রামীণের পুলিশ সুপারের দেওয়া তথ্য – সব দেখেশুনে হতভম্ব রাজ্যের রাজনৈতিক মহল।
Photo Credit- Facebook.