বিশেষ প্রতিবেদন : ধরমবীরের পরে রাজ্যপালের সঙ্গে সরকারের এমন সংঘাত আর দেখে নি পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক মহল। ট্যুইটারে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়কে ব্লক করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার নবান্নে মমতা নিজেই এ’কথা জানান। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী কেন ব্লক করলেন রাজ্যপালকে ? সাংবাদিকদের মমতা জানিয়েছেন, ” আমি ট্যুইটারে রাজ্যপালকে ব্লক করতে বাধ্য হয়েছি। ওঁর কাছে বহু ফাইল, অনেক বিল আটকে রয়েছে। ওঁর সঙ্গে দেখা করে কথা বলেছি। কিন্তু কোনও লাভ হয় নি। “ কী কী ফাইল ও বিল আটকে রেখেছেন ধনখড় ? মমতা তালিকা দিয়ে বলেন,” হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতির ফাইল, মানবাধিকার কমিশনের ফাইল এবং হাওড়া-বালি বিল আটকে রেখেছেন রাজ্যপাল। ” মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ,” বিল ও ফাইল পাঠানোর পর আরও তথ্য জানতে চেয়েছে রাজভবন। আমরা তাও পাঠিয়েছি। কিন্তু তারপরেও বিল পড়ে রয়েছে। “
জগদীপ ধনখড় রাজভবনে আসার পর থেকেই রাজ্যপাল-নবান্ন নিত্য খটাখটি। বিধানসভার বাজেট অধিবেশনে ভাষণের বয়ান থেকে আইনশৃঙ্খলা – এমন কোনও ইস্যু নেই যা নিয়ে সরকারের সঙ্গে রাজ্যপালের সংঘাত বাঁধে নি। এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ” সরকারের কাজে রাজ্যপালের বাধা দেওয়া নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে একাধিকবার নালিশ জানানো হয়েছে। কিন্তু কোনও পদক্ষেপ করে নি প্রধানমন্ত্রীর দফতর। “ নবান্নে যুক্তফ্রন্ট সরকারের আমলে ধরমবীরের প্রসঙ্গও তোলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ” বাম জামানায় যখন রাজ্যপাল ছিলেন ধরমবীর। তখন কিছু ফাইলে তিনি সই করেন নি। তা নিয়ে আন্দোলন হয়েছিল। শেষমেশ তাঁকে সরতে হয়েছিল। আমরা তো দেড় বছর ধরে সহ্য করে চলেছি। “
ঘটনার প্রতিক্রিয়া দিতে দেরি করেন নি রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। নিজের ট্যুইটার হ্যান্ডেলে ধনখড় লেখেন, ” সংবিধানের ১৫৯ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা আছে, সাংবিধানিক নিয়ম-নীতি ও আইনের শাসনকে ব্লক করতে পারেন না কেউই। দায়িত্বপ্রাপ্তদের দেশের সংবিধানের প্রতি আস্থা রাখা উচিত। “ রাজ্যপাল ধনখড়ের বক্তব্য থেকে পরিস্কার- ট্যুইটারে তাঁকে ব্লক করার মুখ্যমন্ত্রীর সিদ্ধান্তকে সাংবিধানিক রীতিনীতি ও নিয়মকে লঙ্ঘনের তুল্য ঘটনা বলেই মনে করছে রাজভবন। জগদীপ ধনখড় আরও মনে করিয়ে দেন, ” সংবিধানের ১৬৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাজ্যপাল শাসন পরিচালনা ও আইন প্রণয়ন সংক্রান্ত ব্যাপারে কিছু জানতে চাইলে তাঁকে বিষয়টির উপর অবহিত করা মুখ্যমন্ত্রীর সাংবিধানিক দায়িত্ব। ” যদিও খানিক পরে কিছুটা নরম হন ধনখড়। পরের ট্যুইটে মুখ্যমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে রাজ্যপাল লিখেন – ” সাংবিধানিক পদাধিকারীদের মধ্যে সংলাপ ও সম্প্রীতিই হল গণতন্ত্রের চেতন ও সারমর্ম। এটা সংবিধানের আদেশও বটে। একমাত্র পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সম্মানের মাধ্যমেই তা কার্যকর করা সম্ভব। আপনার জন্য আমার ব্যক্তিগত শ্রদ্ধা আছে। “ রাজভবন যে নবান্নের সঙ্গে সংঘাত চায় না, তা বোঝাতেই রাজ্যপাল ট্যুইটারে জানান, ” মুখ্যমন্ত্রীকে হোয়াটসঅ্যাপ করে সকালে এই বার্তাই দিয়েছিলাম। সাড়ে ১০ টা নাগাদ মুখ্যমন্ত্রী বার্তাটি দেখেছেন। “
Photo Credit- Twitter/ TOI.