অযোধ্যায় ধনুর্ধর রাম আর কাশীতে ডমরুধর শিবের সেবা জনগণেশকেও তুষ্ট করবে – এই প্রত্যয় যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আছে তা সোমবার মোদীর বচনে,মোদীর চলনে,মোদীর দেহের ভাষাতেই স্পষ্ট।
বিশেষ প্রতিবেদন : বারাণসী-সনাতন ধর্ম , সংস্কৃতি ও আধ্যাত্মবাদের উৎসস্থল বা প্রাণকেন্দ্র বললে অত্যুক্তি হয় না। মিথ , ইতিহাস ,ধর্ম , সংস্কৃতি এবং আধ্যাত্মিক শক্তি – সব মিলিয়ে বারাণসীর তুল্য প্রাচীন জীবিত নগরী পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি নেই। যাকে আমরা কাশী নামেও চিনি। বারাণসী জীবনের নগরী। বারাণসী মরণের নগরী । বারাণসী মোক্ষেরও নগরী। পৃথিবীর যে কোনও ধর্মপ্রাণ হিন্দু বিশ্বাস করেন, বারাণসীর মাটিতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলে মোক্ষপ্রাপ্তি অনিবার্য। কেননা,মা গঙ্গা তীরের বারাণসী নগরীতে বাস করেন স্বয়ং দেবাদিদেব মহাদেব ও সাক্ষাৎ মা অন্নপূর্ণা,যিনি মহামায়াও বটে। অনেক ঝড়-ঝাপটাও সহ্য করেছে হিন্দু ধর্মের প্রাণকেন্দ্র বারাণসী। তারপরেও হিন্দু ধর্মের মতোই অন্তর্নিহিত শক্তির জোরে আপন মহিমা অক্ষুণ্ন রেখেছে এই পুণ্যনগরী।
২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি যখন নরেন্দ্র মোদীকে দলের এবং জোটের প্রধানমন্ত্রী মুখ হিসেবে তুলে ধরার সিদ্ধান্ত নেয় , তখনই মোদি ঠিক করে নিয়েছিলেন, অন্য আর যেই কেন্দ্র থেকেই তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন না কেন ভারতের আধ্যাত্মিক রাজধানী বারাণসী মাস্ট । তাই নিজের রাজ্যের ভদোদরার পাশাপাশি বারাণসী থেকেও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। এবং দুই কেন্দ্র থেকেই বিপুল ভোটে জেতার পর বারাণসীই ধরে রাখেন তিনি। খুব সচেতনভাবেই বারাণসীর সঙ্গে নিজের রাজনৈতিক জীবন ও মিশনকে জুড়ে নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী। দেশের দায়িত্বভার নেওয়ার আগে অন্য কোথাও নয় মোদী কাশী গমন করছিলেন মা গঙ্গা ও বাবা বিশ্বনাথকে প্রণাম জানাতে। নিজের আত্মপরিচয় ও লক্ষ্য সাধনে নরেন্দ্র মোদীর মধ্যে কোনও লুকোছাপা নেই। ভারতীয় বহুত্ববাদ ও হিন্দুত্বকে যে তিনি এক নজরে দেখেন তা জানান দিতে কোনও দ্বিধাদ্বন্দ্ব নেই মোদীর । তাই প্রধানমন্ত্রী হয়েও বারবার বারাণসীতে ছুটে যান তিনি। মাগঙ্গায় ডুব দেন । বিশ্বনাথের মন্দিরে সাড়ম্বরে পুজো দেন। সন্ধ্যায় গঙ্গারতি করেন । সোমবার শিব দীপাবলির বারাণসী আরও একবার হয়ে উঠল মোদীময় । প্রধানমন্ত্রী হয়েই বারাণসীর সংস্কারে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি ২০২১-এর ১৩ ডিসেম্বর ছিল তা রক্ষা করার দিন ।
বিজেপির রাজনৈতিক উত্থানের পেছনে অযোধ্যা ও রাম জন্মভূমি আন্দোলনের অবদান অনস্বীকার্য। ভারতীয় আধ্যাত্মবাদের ভরকেন্দ্র কাশীকেও সংঘ পরিবারের শক্তির উৎস হিসেবে তুলে ধরার প্রয়াস লক্ষ্য করা যাচ্ছে নরেন্দ্র মোদীর কর্মকান্ডের মধ্যে। ভারতীয় সমাজে বারাণসীর প্রভাব নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। বিশ্বনাথের সেবা করলে , মা গঙ্গার সেবা করলে ভারতের সিংহভাগ মানুষের হৃদয়ে যে জায়গা করে নেওয়া সম্ভব , তা মোদীর চেয়ে ভাল আর কেউ জানেন না। ভারতের ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, হিন্দু রাজাদের অবশ্য পালনীয় কর্তব্যের একটি ছিল কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের সেবায় অকৃপণ হস্তে দান করা। নরেন্দ্র মোদীর স্বপ্নের কাশী বিশ্বনাথ করিডোর প্রকল্পের ফেজ ওয়ান সবে শেষ হল । এতে ব্যয় হয়েছে ৩৩৯ কোটি টাকা। ২০১৯-এর ৮ মার্চ প্রকল্পের শিলান্যাস করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। ২০২১-এর ১৩ ডিসেম্বর প্রথম পর্বের কাজ সমাপ্ত। আগে বিশ্বনাথ মন্দির চত্বরের পরিধি ছিল মাত্র তিন হাজার বর্গফুট । সোমবার থেকে কাশী বিশ্বনাথ মন্দির চত্বরের পরিধি বেড়ে হল ৫ লক্ষ বর্গফুট। কাশী বিশ্বনাথ করিডোর প্রকল্পের বাস্তবায়নের পর ৫০ থেকে ৭৫ হাজার দর্শনার্থী একসঙ্গে মন্দির দর্শন ও পুজো দিতে পারবেন । মা গঙ্গার ঘাট ও মন্দিরের মাঝে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল অসংখ্য নির্মাণ , দোকানঘর , বাজার এবং বসত । সবাইকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিয়ে অন্যত্র পুনর্বাসিত করা হয়েছে। এখন বাবা বিশ্বনাথের মন্দির থেকেই মা গঙ্গার এবং মা গঙ্গার ঘাটে দাঁড়িয়ে বিশ্বনাথের মন্দির দর্শন সম্ভব। স্বাধীনতার ৭৪ বছরের ইতিহাসে দেশের আর কোনও প্রধানমন্ত্রী বারাণসীর সংস্কারে এত বড় পদক্ষেপ করেন নি। মোদী করতে পারলেন । কারণ মোদীর কোনও পিছুটান নেই। হিন্দুত্বের জাহিরে , হিন্দু ধর্মাচার সাড়ম্বরে পালনে মোদীর কোনও কুন্ঠা নেই। এমনকি হারাবারও কিছু নেই। বরং জয় করার আছে অনেক কিছুই। দিব্য কাশী ভব্য কাশী কর্মসূচি জাতীয় কর্মসূচি হিসেবে দেশ জুড়ে পালন করছে বিজেপি। কাশীতে দাঁড়িয়ে মোদী বলেছেন, ” যাঁর হাতে ডমরু থাকে কাশীতে তাঁর সরকার চলে। ” অযোধ্যায় ধনুর্ধর রাম আর কাশীতে ডমরুধর শিবের সেবা জনগণেশকেও তুষ্ট করবে – এই প্রত্যয় যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আছে তা সোমবার মোদীর বচনে , মোদীর চলনে , মোদীর দেহের ভাষাতেই স্পষ্ট।
Photo Credit- Official FB page of Narendra Modi. Video Credit- Youtube Channel of Narendra Modi.