জোড়াফুলের সুনামিতে কলকাতায় ধুয়েমুছে সাফ পদ্ম,তৃণমূল ১৩৪ বিজেপি মাত্র তিন,ভোট প্রাপ্তির নিরিখে দ্বিতীয় বামেরা - nagariknewz.com

জোড়াফুলের সুনামিতে কলকাতায় ধুয়েমুছে সাফ পদ্ম,তৃণমূল ১৩৪ বিজেপি মাত্র তিন,ভোট প্রাপ্তির নিরিখে দ্বিতীয় বামেরা


৭২ শতাংশ ভোট , ৯৩ শতাংশ ওয়ার্ড তৃণমূলের দখলে ! কলকাতা পুরসভা নির্বাচনের ইতিহাসে এমন এক তরফা ফল আর কখনও হয় নি।

কলকাতা : কলকাতার পুরভোটে তৃণমূলের সুনামিতে বিরোধীরা কার্যত ধুয়েমুছে সাফ । মঙ্গলবার ইভিএম খুলতে না খুলতেই বাঁধভাঙা জলস্রোতের মতো তৃণমূলের জয়ের খবর আসতে শুরু করে। কলকাতা পুরসভার নির্বাচনে তৃণমূলের বিরাট জয় বিরোধীদের কাছেও অপ্রত্যাশিত ছিল না।‌ ভোটের দিন ঘোষণার পর থেকেই সবাই জানত, তৃণমূলের ‌জয় শুধু সময়ের অপেক্ষা মাত্র। রবিবার ভোটের চেহারা দেখার পরেই রাজনৈতিক মহল বুঝে যায় বিরোধীরা সবাই মিলে দুই অঙ্ক পেরোলেই বিরাট । এবিপি-সি ভোটারের এক্সিট পোল বিজেপিকে ২৮ শতাংশ ভোট ও ১৩টি ওয়ার্ড দিয়েছিল । এক্সিট পোল মিললে বিজেপির মুখরক্ষা হত । রেজাল্ট আউটের পর দেখা গেল পুরভোটে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপির পরিণতি চূড়ান্ত শোচনীয়।

১৪৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৩৪টিই তৃণমূলের দখলে। বিজেপি মাত্র তিন। সিপিএম দুই । কংগ্রেস দুই । নির্দলরা জিতেছে তিনটি ওয়ার্ডে। মোট আসনের ৯৩ শতাংশ‌ই তৃণমূলের কব্জায়। তৃণমূল পেয়েছে ৭২ শতাংশ ভোট । স্বাধীনতার পর কলকাতা পুর কর্পোরেশনে নির্বাচন শুরু হ‌ওয়ার পর থেকে এমন এক তরফা ফল এই প্রথম। ২০১০-এর কলকাতা পুরভোটে বিজেপি পেয়েছিল তিনটি আসন। ২০১৫-তে সাতটি। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে ২২টি ওয়ার্ডে এগিয়ে ছিল বিজেপি। একুশের বিধানসভা ভোটে কলকাতা কর্পোরেশনের ১২ টি ওয়ার্ডে লিড দেয় বিজেপি। ডিসেম্বরের পুরভোটে গোটা কলকাতাটাই জোড়া ফুলের বাগান । জোড়া ফুলের বাগানে তিনটি পদ্ম কোন‌ও মতে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। পাঁচটি ওয়ার্ড হাতছাড়া হয়েছে বিজেপির। ২২ নম্বর ওয়ার্ডে এই নিয়ে টানা ছয়বার জেতার রেকর্ড করলেন বিজেপির কাউন্সিলর মীনাদেবী পুরোহিত। ২৩ নম্বর ওয়ার্ডেও জয়ের হ্যাট্রিক করে পদ্ম ফুটিয়েছেন বিজয় ওঝা। গৈরিক শিবিরের একমাত্র উল্লেখযোগ্য জয় ৫০ নম্বর ওয়ার্ডে। তৃণমূলের কাছ থেকে ওয়ার্ডটি ছিনিয়ে নিয়ে বিজেপির তিন নম্বর আসন নিশ্চিত করার কারিগর  সজল ঘোষ।

কলকাতা পুরভোটে বিধ্বংসী জয় তৃণমূলের। উল্লসিত জোড়াফুলের মহিলা সৈনিকেরা।

মুরলীধর সেন লেনের গেরুয়া বাড়ির কার্যকর্তাদের জন্য সবথেকে বড় দুঃসংবাদ এবং অশনিসংকেত – আসন জয় ও ভোট প্রাপ্তির নিরিখে দল শুধু তলিয়েই যায় নি বামেদের থেকেও পিছিয়ে পড়েছে। পুরভোটে বিজেপির প্রাপ্ত ভোটের হার মাত্র শতাংশ। সেখান বামেদের ভোট ১২ শতাংশ। ১৪২টি ওয়ার্ডে শেষ পর্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজেপি দ্বিতীয় স্থানে ৫৪টি ওয়ার্ডে। ১২৮ টি ওয়ার্ডে লড়াই করে বামেরা দ্বিতীয় ৬৫টি ওয়ার্ডে। ফল খারাপ হবে – এই রকম একটা মানসিক প্রস্তুতি রাজ্য বিজেপির নেতাদের ছিল‌ই ।‌ কিন্তু ১০টি ওয়ার্ড‌ও জুটবে না কিম্বা ভোট প্রাপ্তির বিচারে সেকেন্ড পজিশন‌ও হাতছাড়া হবে – এতটা ভয়াবহ পরিণাম বোধ হয় কল্পনাও করতে পারেন নি সুকান্ত মজুমদারেরা।

বিজেপির তুলনায় কলকাতা পুরভোটের ফল বামেদের কাছে স্বস্তিদায়ক । বামেদের ধর্তব্যের মধ্যেই আনে নি মিডিয়া । এবিপি আনন্দ-সি ভোটারের এক্সিট পোল‌ও বামকংগ্রেসকে শূন্য দিয়েছিল। ইভিএম খোলার পর দেখা গেল দুটি ওয়ার্ডে জয় ছিনিয়ে এনেছে সিপিএম। দুটি ওয়ার্ড লাভের থেকেও সিপিএমের কাছে সন্তোষজনক ৬৫টি ওয়ার্ডে বিজেপিকে পেছনে ফেলে দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসা। ভোট প্রাপ্তির নিরিখে‌ও বিজেপির থেকে এগিয়ে বামেরা। বামেরা পেয়েছে ১২ শতাংশ ভোট। ২০১৫-র পুরভোটের তুলনায় বামের ফল অত্যন্ত খারাপ। কিন্তু উনিশের লোকসভা নির্বাচনের পর থেকেই  বামেরা যেভাবে রাজ্য রাজনীতিতে প্রান্তিক এবং অপ্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছিল, সেই দিক থেকে দেখলে কলকাতা পুরভোটের ফল বাম শিবিরের জন্য কিঞ্চিৎ ‌হলেও আশাব্যঞ্জক তো বটেই। পৃথকভাবে লড়ে পুরভোটে কংগ্রেস পেয়েছে ২টি ওয়ার্ড ও চার শতাংশ ভোট। ৪৫ নম্বর ওয়ার্ডে মাটি কামড়ে লড়ে নিজের গড় শেষ পর্যন্ত রক্ষা করেছেন কংগ্রেসের সন্তোষ পাঠক। ২৪৭৮ ভোটে তৃণমূলের প্রতিদ্বন্দ্বীকে হারিয়ে চতুর্থ বারের মতো কাউন্সিলর হলেন ডাকাবুকো সন্তোষ।

Photo Credit- AFP/ India Today.


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *