গোয়ায় তৃণমূলের নাম শুনেই কেজরিওয়াল যে ভাবে খেঁকিয়ে উঠলেন তাতে অন্য রকম গন্ধই পাচ্ছেন সবাই। কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে জাতীয় স্তরে জোট গড়ার যে চেষ্টা মমতা চালাচ্ছেন কেজরির কটাক্ষের পর তা নিয়ে রীতিমতো সংশয়ে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা।
বিশেষ প্রতিবেদন : রাজনীতির পিরিত খসতে সময় লাগে না। এই সেদিনও দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের সঙ্গে কত ভাব তৃণমূলের। কিন্তু মমতা গোয়াতে পা রাখার চেষ্টা করতেই তৃণমূলকে কষে মুখ ঝামটা দিয়ে দিলেন কেজরিওয়াল। আসলে একই জমি আবাদে নেমেছেন দু’জন। যতক্ষণ দূরত্ব ছিল ভাবসাব ছিল। দিল্লি গেলেই কেজরির সঙ্গে দেখা করতেন মমতা। ২রা মে বিপুল জয়ের পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভরে বাধাইও জানিয়েছিলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী। কেজরিওয়াল এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় – দু’জনেই প্রশান্ত কিশোরের কাস্টমার। দু’জনেই স্বরাজ্যে স্বরাটে তৃপ্ত নন আরও বহু দূর যেতে চান। দিল্লিতে সাফল্যের পর দেশের অন্যান্য প্রদেশেও আম আদমি পার্টিকে ছড়িয়ে দিতে চান অরবিন্দ কেজরিওয়াল। ইতিমধ্যে পাঞ্জাবে অনেকটাই সফল হয়েছেন খড়্গপুর আইআইটির প্রাক্তনী। পাঞ্জাবের পাশাপাশি উত্তর প্রদেশের আসন্ন ভোটেও আপ ভাল কিছু করতে পারে বলে পূর্বাভাস। তৃতীয়বার নবান্নে প্রত্যাবর্তনের পর একই লক্ষ্য মমতারও । দল বাড়াতে দেশের ছোট রাজ্যগুলি যেমন ত্রিপুরা , মেঘালয় , অরুণাচল প্রদেশ এবং গোয়াকে টার্গেট করেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। অন্যত্র ঠোকাঠুকি না লাগলেও শেষ পর্যন্ত গোয়াতেই গুঁতোগুঁতি লেগে গেল আপ ও তৃণমূলে।
বাইশের প্রথম দিকেই গোয়ায় বিধানসভা নির্বাচন। অনেক দিন ধরেই গোয়ায় ঘর গোছাচ্ছেন কেজরিওয়াল। বুধবার গোয়া সফরে গিয়েছিলেন কেজরিওয়াল। পানাজিতে সাংবাদিকেরা তৃণমূল নিয়ে প্রশ্ন করতেই রীতিমতো দূর ছাই করে ওঠেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী। কেজরিওয়ালের কাছে তৃণমূলের জেতার সম্ভাবনা কতটা জানতে চান সাংবাদিকেরা । কেজরি বলেন ” তৃণমূল ! গোয়ায় কোথায় তৃণমূল? তৃণমূলকে তো গোয়ায় দূরবীন দিয়েও খুঁজে পাওয়া যায় না। ” সাংবাদিকদের দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ” আমার মনে হয় আপনারা তৃণমূলকে নিয়ে বড্ড বেশি লাফালাফি করছেন। গোয়ায় এখনও তৃণমূলের এক শতাংশ জনভিত্তিও তৈরি হয় নি। মাত্র তিনমাস আগে দলটা গোয়ায় এসেছে। গণতন্ত্রে এইভাবে কিছু হয় নাকি ? ” পরিশ্রম না করে । সংগঠন না গড়ে । মানুষের সঙ্গে মেলামেশা না করে । কেবল অন্যের ঘরে ভাঙিয়ে জেতা যায় না বলে কটাক্ষ করেন তিনি। আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের কোনও জেতার সম্ভাবনাই নেই বলে জানিয়ে দেন কেজরিওয়াল।
২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে এই কেজরিওয়ালকেই ব্রিগেডের মঞ্চে ডেকে এনেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চব্বিশের লোকসভা ভোটের দিকে তাকিয়ে মমতার যে রাজনৈতিক পরিকল্পনা তাতে কেজরিওয়ালেরও সম্মতি থাকতে পারে বলে রাজনৈতিক মহলের ধারণা ছিল। কিন্তু গোয়ায় তৃণমূলের নাম শুনেই কেজরি যে ভাবে খেঁকিয়ে উঠলেন তাতে অন্য রকম গন্ধই পাচ্ছেন সবাই। কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে জাতীয় স্তরে জোট গড়ার যে চেষ্টা মমতা চালাচ্ছেন কেজরির কটাক্ষের পর তা নিয়ে রীতিমতো সংশয়ে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা। এর আগে এনসিপি প্রধান শরদ পাওয়ারের সঙ্গে আলাপসালাপ করেও খুব একটা ইতিবাচক সাড়া পান নি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল কেজরিওয়ালের কাছে হ্যাটা খাওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই খুশি কংগ্রেস। অরবিন্দ কেজরিওয়াল এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় – চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনের প্রেক্ষিতে দু’জনের রাজনৈতিক পরিকল্পনা নিয়েই যথেষ্ট ধোঁয়াসা রয়েছে। মমতা এবং কেজরিওয়াল – দু’জনেই বিজেপির কংগ্রেস মুক্ত ভারত গড়ার বৃহৎ পরিকল্পনার শরিক কিনা তা বুঝতে অপেক্ষা করতে হবে আরও কিছু দিন। তবে কেজরিওয়াল আর মমতার দোস্তিতে আপাতত ইতি বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
Photo Credit- OPindia / Official FB page of Arvind Kejriwal.