পরিকাঠামো উন্নয়নের টাকা কোথা থেকে আসবে, তা নিয়ে সরকারি বৈঠকে উদ্বিগ্ন খোদ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রী বলছেন রাজকোষে আয় নেই পুরোটাই ব্যয়! বাজে খরচের ধাক্কায় সরকার দেউলিয়া-অভিযোগ বিরোধীদের।
ডেস্ক রিপোর্ট : কোষাগারের হাল নিয়ে দিন কয়েক আগেই নিজের দুশ্চিন্তার কথা জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার কর্ণজোড়ায় দুই দিনাজপুরের প্রশাসনিক বৈঠকেও মুখ্যমন্ত্রীর গলায় ফের উদ্বেগের সুর। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ” কেন্দ্র টাকা দিচ্ছে না। কোভিডে সব বন্ধ। মাথায় তো রাখতে হবে টাকাটা কোথা থেকে আসবে । কোনও আর্নিং নেই । সব বার্নিং। সরকারি প্রকল্পের টাকা কোথা থেকে আসবে ভাবতে হবে। ” লক্ষ্মীর ভান্ডার , স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডের মতো প্রকল্প চালাতে প্রচুর টাকা বেরিয়ে যাচ্ছে বলে বৈঠকে জানান মুখ্যমন্ত্রী। ইদানিং যে কোনও অনুষ্ঠানে জনপ্রতিনিধিরা নতুন কোনও উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ চাইলেই মুখ্যমন্ত্রী শুনিয়ে দিচ্ছেন, রাজকোষে টাকা নেই । কর্ণজোড়ার বৈঠকেও দলের জনপ্রতিনিধিদের মমতা জানিয়ে দেন – ” এখন দু’বছর কিছু চাইবে না। এমএলএ’রা একটু বুঝতে শেখো ।” মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ” তোমাদের যদি সবই চাই , তাহলে একটা কাজ কর । একটা ম্যাজিশিয়ান তৈরি কর । ম্যাজিশিয়ান এসে সব কিছু দিয়ে যাবে। “
কোষাগারের সঙ্গীন অবস্থার কথা বিবেচনা করে ইতিমধ্যেই খরচে লাগাম টানতে সরকারি দফতরগুলিকে নির্দেশ দিয়েছে রাজ্যের অর্থ মন্ত্রক । শাসক তৃণমূলের গলায় কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগ আজ থেকে নয়। রাজ্যের ন্যায্য পাওনা কেন্দ্র আটকে রেখেছে বলে বারংবার অভিযোগ করেন মমতা। সম্প্রতি দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মোদীর সঙ্গে পাওনা-গন্ডা নিয়ে দেনদরবার করবেন বলে দিল্লিতে রওনা দেবার আগে সাংবাদিকদের জানিয়ে ছিলেন মমতা। বৈঠকে রাজ্যের বকেয়া পাওনা নিয়ে কোনও সমাধান বেরিয়েছে কিনা জানা যায় নি। যদিও বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলিতে টাকা ঠিকই দিয়ে যাচ্ছেন মোদী। করদাতাদের অর্থের অপচয় করতে করতে রাজকোষ শূন্য হয়ে যাওয়ায় মুখ্যমন্ত্রী এখন চোখে সর্ষেফুল দেখছেন বলে বিরোধীদের অভিযোগ।
লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পে সরাসরি পরিবারের মহিলাদের হাতে নগদ টাকা তুলে দেওয়া হচ্ছে। এই ভান্ডার সামাল দিতে বছরে ১৭ হাজার কোটি টাকার ধাক্কা। দু’কোটি মহিলার হাতে মাসে মাসে ১০০০ ( তফশিলি জাতি-উপজাতিদের ক্ষেত্রে ) ও ৫০০ টাকা করে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে লক্ষ্মীর ভান্ডারে । এর ফলে দরিদ্র পরিবারগুলির হাতে নগদ টাকার জোগান বাড়বে বলে সরকারের আশা। লক্ষ্মীর ভান্ডার ছাড়াও আরও অনেক প্রকল্পে দেদার টাকা খরচ করে ফেলেছে রাজ্য । এর অনেকগুলিই জনমোহিনী হলেও অপ্রয়োজনীয় বলে অভিযোগ বিরোধী নেতাদের । দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের জন্য পরিকাঠামোগত উন্নয়ন অপরিহার্য। এখন জনমোহিনী প্রকল্পগুলির খরচের ধাক্কা সামাল দিতে গিয়ে পরিকাঠামো খাতে কোপ পড়লে আখেরে রাজ্যবাসীরই ক্ষতি বলে মনে করেন বহু অর্থনীতিবিদ।
চলতি অর্থবছরের শেষে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ঘাড়ে ঋণের বোঝা বেড়ে দাঁড়াবে ৫ লক্ষ ৩৫ হাজার ৮৩৩.৮১ কোটি টাকা। ঋণের সুদ-আসল শোধ করতেই সরকারের বছরে বেরিয়ে যায় ৬৩ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। রাজকোষ ঘাটতি ৩.৮৬ শতাংশ। রাজস্ব ঘাটতি ২.৫৪ শতাংশ। এই অবস্থায় জনমোহিনী প্রকল্পগুলি সামলে-সুমলে পরিকাঠামো উন্নয়ন খাতে টাকা বরাদ্দ করা যে কতটা কঠিন তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়,যাঁকে এখন রাজ্যের অর্থ মন্ত্রীর দায়িত্বও সামলাতে হচ্ছে। পরিস্থিতি বেগতিক বুঝেই রাজকোষের প্রকৃত অবস্থা জানান দিতে মমতার আর কোনও লুকোছাপা নেই বলে কটাক্ষ করছে বিরোধীরা ।
Photo Credit – Facebook page of CM Mamata Banerjee.