তালিবান আছে তালিবানেই। ভাল তালিবান,খারাপ তালিবান বলে কিছু হয় না। তালিবানের রাজত্বে মেয়েদের একমাত্র স্থান অন্ধকূপ।
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : তালিবান শাসিত আফগানিস্তানে প্রবল খাদ্যাভাব । আসন্ন শীতে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার নিতে পারে বলে জাতিসংঘের আশঙ্কা। যদিও নাগরিকেরা না খেতে পেয়ে মরল কি বাঁচল , তা নিয়ে তেমন মাথাব্যথা নেই তালিবানদের। রাষ্ট্রে শরিয়া আইন আরও কত নিখুঁতভাবে বলবৎ করা যায় তাদের দিন কেটে যাচ্ছে এই চিন্তাতেই । কাবুলের তালিবান সরকার দ্বারা সদ্য জারি করা একটি নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, এখন থেকে আর টেলিভিশনে সম্প্রচারিত নাটকে মেয়েদের অভিনয় চলবে না। টেলিভিশনের পর্দায় মেয়েদের অভিনয় শরিয়া অনুযায়ী নাজায়েজ। অতএব টিভিতে অভিনয় করা থেকে মেয়েদের সরে আসার নির্দেশ দিয়েছে তালিবান প্রশাসন । নিউজ চ্যানেল গুলির স্টুডিও থেকে এখনও নারী কর্মীদের বের করে দেয় নি তালিবানেরা । তবে দু’দিন বাদে কী হবে কেউ জানে না। যে সব নারী ক্যামেরার সামনে সংবাদ পরিবেশন করেন তাদের মাথা ঢাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে আগেই ।
মেয়েদের অভিনয় নিষিদ্ধ করা ছাড়াও আফগানিস্তানের চ্যানেল গুলির জন্য আরও একাধিক বিধিনিষেধ জারি করেছে তালিবান সরকার। শরিয়া ও ইসলাম অনুমোদন করে না এমন কোনও দৃশ্য সিনেমায় থাকলে সেই সিনেমা দেখানো যাবে না। পুরুষদের শরীরের যে সমস্ত অঙ্গ শরিয়া ও ইসলাম অনুযায়ী অনাবৃত রাখা যায় না সিনেমার অভিনেতাদের সেই সমস্ত অঙ্গ অনাবৃত থাকলে সেই সিনেমা সম্প্রচার করা যাবে না। কোনও বিনোদন অনুষ্ঠান বা কৌতুক শরিয়া সম্মত না হলে চ্যানেলে তার প্রদর্শন চলবে না। বিদেশি ড্রামা , সিনেমা এবং সিরিয়াল সম্প্রচারের উপরেও নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছে তালিবান। তালিবান সরকারের নতুন নির্দেশিকা পড়ে মাথায় হাত দিয়ে বসেছেন চ্যানেলের প্রযোজকেরা। কেন না, সরকারের ফতোয়া মানতে গেলে সিনেমা, সিরিয়াল সহ সমস্ত বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান বন্ধ করে দিতে হবে। অগাস্টে তালিবানরা কাবুল দখলের আগে পর্যন্ত আফগানিস্তানের টিভিতে এই ধরণের কোনও বিধিনিষেধ ছিল না । চ্যানেল গুলিতে সম্প্রচারিত সিনেমার অধিকাংশই ছিল বলিউডের জনপ্রিয় ফিল্ম। তালিবানের নির্দেশ মেনে চলতে গেলে এন্টারটেইনমেন্ট চ্যানেল গুলি বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় থাকবে না মালিকদের পক্ষে।
টেলিভিশনে মেয়েদের অভিনয় না হয় শরিয়া বিরোধী । কিন্তু স্কুল-কলেজে মেয়েদের পড়ালেখা কেন বন্ধ করে দিল তালিবান সরকার? তালিবানেরা কারও কাছে জবাব দেওয়ার ধার ধারে না। কাবুল দখলের পর পরই তালিবান সরকার মেয়েদের স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে না গিয়ে বাড়িতে বসে থাকতে নির্দেশ দিয়েছে। এখন কর্মরত নারীদের দিকেও নজর পড়েছে তালিবান সরকারের। সম্প্রতি কাবুলের তালিবানি মেয়র একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে পুরসভার মহিলা কর্মীদের কর্মস্থলে না এসে বাড়িতে বসে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। মহিলা কর্মীদের পদগুলি পুরুষদের দিয়ে পূরণ করার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আফগানিস্তানে তালিবানদের প্রথম জমানাতেও স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় এবং কর্মস্থল থেকে নারীদের উৎখাত করা হয়েছিল। গত বিশ বছরে আফগানিস্তানের জনজীবনে মেয়েদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো বৃদ্ধি পেয়েছিল, বিশেষ করে রাজধানী কাবুল সহ শহরাঞ্চল গুলিতে। দ্বিতীয়বার কাবুল দখলের পর অনেকেই ভেবেছিলেন যে, তালিবানের সেকেন্ড এডিশন খানিকটা সভ্য-ভব্য হবে । কিন্তু তালিবান প্রমাণ করল তালিবান আছে তালিবানেই ।
Photo Credits- Reuters.