বয়স আঠারো হয়েছে বলে মূক-বধির বাবু হালদারকে হোম থেকে বের করে দেয় কর্তৃপক্ষ। ১৯৩ কিলোমিটার দূরের শহরে বাবুকে পাওয়া যায় খোলা আকাশের নিচে। শীতে তিনদিন আকাশের নিচেই পড়ে থাকে অসহায় যুবকটি। স্থানীয় মানুষ ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের তৎপরতায় অবশেষে ফের নিরাপদ আশ্রয় জোটে তার । আইন দেখিয়েই কি অমানবিকতার দায় থেকে পার পেতে পারে কর্ণজোরার হোম কর্তৃপক্ষ ?
নাগরিক প্রতিবেদন : আইনের অজুহাত দেখিয়ে বয়স ১৮ ছুঁতেই মূক ও বধির অসহায় যুবককে রাস্তায় বের করে দিল উত্তর দিনাজপুর জেলার কর্ণজোরার সূর্যোদয় চিল্ড্রেন হোম । বাবু হালদার নামে সেই যুবককে গত শুক্রবার উদ্ধার করা হল জলপাইগুড়ি শহরের কদমতলা বাস টার্মিনাস সংলগ্ন একটি শনিমন্দিরের সামনে থেকে । প্রকাশ ফাউন্ডেশন নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের তৎপরতায় মঙ্গলবার দুপুরে মূক ও বধির যুবকটির ঠাঁই হল পুরসভার আশ্রয় হোমে । মূক ও বধির ছেলেমেয়েদের আশ্রয় দিতেই রায়গঞ্জের কর্ণজোরায় ওই হোমটি গড়ে তোলা হয়েছে । প্রশ্ন উঠেছে, আবাসিকের বয়স আঠারো পূর্ণ হলে হোমে থাকার নিয়ম নেই সত্যি কিন্তু তা বলে অগ্রপশ্চাৎ বিবেচনা না করে মূক- বধিরকে রাস্তা দেখিয়ে দিতে হবে ?
রায়গঞ্জ থেকে জলপাইগুড়ির দূরত্ব কম নয় । একজন মূক-বধিরের পক্ষে এতটা পথ পেরিয়ে আসাটাও সহজ নয় । দুর্ঘটনায় যুবকটির বড় কোনও ক্ষতিও হতে পারত । জলপাইগুড়িতে তিনদিন ধরে খোলা আকাশের নিচে পড়েছিল বাবু হালদার। শুক্রবার ঘটনাটি নজরে আসে স্থানীয়দের। খাবারদাবার ও গরম জামাকাপড় দিয়ে বাবুকে সাহায্য করেন তাঁরা। খবর পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থলে যান প্রকাশ ফাউন্ডেশনের সদস্যরা। যুবকটির পায়ে চোট আছে। লাঠি হাতে খুঁড়িয়ে হাঁটে। লিখে মনের ভাব বোঝানোর চেষ্টা করে নির্বাক,বধির যুবকটি । অসহায় যুবকটির জন্য একটি আশ্রয়ের ব্যবস্থা করার আর্জি জানিয়ে জেলা প্রশাসন , পুরসভা ও পুলিশের দ্বারস্থ হন প্রকাশ ফাউন্ডেশনের রাজ্য সভাপতি নব্যেন্দু মৌলিক। প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে করতেই পেরিয়ে যায় রাত। খোলা আকাশের নিচেই শুক্রবারের রাতটি কাটাতে বাধ্য হয় মূক-বধির যুবকটি । আইনি জটিলতায় শনি এবং রবিবারও যুবকটির নিশ্চিত আশ্রয়ের ব্যবস্থা করতে ব্যর্থ হয় জলপাইগুড়ির প্রশাসন ও পুরসভা। ঠান্ডার মধ্যেও পর পর তিনটি রাত বাবুর কাটে খোলা আকাশের নিচেই। সোমবার কর্ণজোরার হোম থেকে কাগজ আসায় আইনি জটিলতা অনেকটাই কাটে। তবে প্রশাসনের পদক্ষেপের আশায় বসে না থেকে ওই দিন দুপুরে যুবকটিকে কোতয়ালী থানায় পৌঁছে দিয়ে আসেন এলাকার মানুষ। জলপাইগুড়ি পুরসভা পরিচালিত আশ্রয় হোমে যুবকটিকে রাখার ব্যবস্থা করা যায় কিনা তা খতিয়ে দেখতে পুরসভার প্রশাসক বোর্ডের চেয়ারপার্সন পাপিয়া পালের কাছে লিখিত আবেদন জানায় প্রকাশ ফাউন্ডেশন। এই আবেদনে সাড়া দিয়ে যুবকটিকে আশ্রয় হোমে থাকার একটি ব্যবস্থা করে দেন চেয়ারপার্সন। যদিও সরকারি আইন মেনে যাবতীয় কাগজপত্র তৈরি হতে আরও একটি দিন গড়িয়ে যায়। সোমবার রাতটি থানায় কাটায় বাবু হালদার। মঙ্গলবার দুপুরে তাকে থানা থেকে পুরসভার হোমে স্থানান্তর করা হয়। গোটা প্রক্রিয়াটি দাঁড়িয়ে থেকে তদারকি করেন প্রকাশ ফাউন্ডেশনের রাজ্যসভাপতি। জলপাইগুড়ি চার নম্বর ঘুমটি সংলগ্ন এলাকার স্থানীয় মানুষ , স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও পুরসভার সহযোগিতায় একটি মূক ও বধির সদ্য যুবকের অবশেষে সরকারি হোমে আশ্রয় জুটে।
বাবু হালদার নামে ওই মূক-বধির যুবকটিকে ২০১৭ সালে কর্ণঝোড়ার হোমটিতে পাঠানো হয়েছিল বলে জানা গেছে । বাবুর পরিবারের সদস্যরা কারা কোথায় আছেন , আদৌ তার কেউ আছে কিনা এখনও জানা যায় নি । কর্ণজোরার সূর্যোদয় হোম কর্তৃপক্ষের কাছে এই ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট তথ্য থাকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। সরকারি আইনে ফাঁকফোকর থাকার সুযোগে বাবুর মতো অসহায় ছেলেদের রাস্তায় বের করে দেওয়ার আগে হোম কর্তৃপক্ষগুলির দশবার ভাবা উচিত। এই নিয়ে সরকারেরও নতুন করে ভাবার সময় এসেছে বলে মনে করেন প্রকাশ ফাউন্ডেশনের রাজ্যসভাপতি নব্যেন্দু মৌলিক।
নিজস্ব ফটো।
কনটেন্টটি পড়ে আপনার ভাল লাগলে কিছু অর্থ সাহায্য দিয়ে পোর্টালটির উন্নয়নে আপনি অবদান রাখতে পারেন donate now অপশনে ক্লিক করে-