স্বধর্মের কথা প্রচারের নামে‌ পরধর্মের বিরুদ্ধে কুৎসা-বিদ্বেষ ছড়ানো বন্ধ করতে হবে দুই বাংলায় - nagariknewz.com

স্বধর্মের কথা প্রচারের নামে‌ পরধর্মের বিরুদ্ধে কুৎসা-বিদ্বেষ ছড়ানো বন্ধ করতে হবে দুই বাংলায়


বিষবৃক্ষকে বাড়তে দিলে বিষবৃক্ষের‌ ফল তো একদিন খেতেই হবে । সময় থাকতেই পরধর্ম বিদ্বেষীদের জবানে তালা লাগাতে পারলে আজ হয়ত এই দিন দেখতে হত না বাংলাদেশকে। লিখেছেন উত্তম দেব

দিনের পর দিন । রাতের পর রাত ওয়াজি হুজুরেরা যখন হাজার হাজার লোকের মাহফিলে পরধর্ম ও নারীকে কুৎসিত ভাষায় গালিগালাজ করত শেখ হাসিনার ‌সরকার কানে‌ আঙুল দিয়ে বসে থাকত । এই হুজুরেরা‌ শুধু নিজের ধর্মের মহত্ব প্রকাশ করেই ক্ষান্ত হয় না । পরধর্মকে অপমান করা ও নারীকে বেইজ্জত করা এরা এদের ঈমানী দায়িত্ব বলে মনে করে। সনাতনীদের‌ মূর্তিপুজোকে প্রকাশ্যে ব্যঙ্গবিদ্রূপ করে পার‌ পেয়ে গেছে এরা । ইউটিউব ও ফেসবুক মারফত এইসব হেট স্পিচ লক্ষ লক্ষ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে । তারপরেও ‌প্রতিমা অক্ষত থাকে কীভাবে বলেন ।‌

তুলনামূলক ‌ধর্মতত্ত্ব চর্চার নামে উপমহাদেশে ‌পরধর্মকে‌ প্রকাশ্যে অবজ্ঞা‌-অপমান করার সূত্রপাত করে জাকির নায়েক । ভারতে বসে বিশাল বিশাল ‌জমায়েতে‌ জাকির এই কাজ করত । আর জাকিরের‌ ভাষণ গুলি লাইভ করত পিস‌টিভি । এরপর‌ বাংলাদেশে ওয়াজ শুরু করে ‌দেলোয়ার হোসেন সাঈদী ।‌ ওয়াজ মাহফিল গুলিতে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে পরধর্মকে অসম্মান করত সাঈদী । হাজার হাজার শ্রোতা তখন উল্লাসে ফেটে পড়ত ।‌

রঙপুর,বাংলাদেশ : সংখ্যাগুরুর রোষের আগুনে সর্বস্বান্ত সংখ্যালঘু সহনাগরিক।

ভারতে জাকির নায়েক বাংলাদেশে সাঈদী তাও পরিশীলিত ভাষায় ঘৃণা ছড়ানোর কাজটি করত। কিন্তু এরপর থেকে ‌ওয়াজ মাহফিল যখন লাভজনক কারবারে পরিণত‌ হল । যখন বাংলাদেশে শতশত ওয়াজি বাজারে নেমে পড়ল। তখন সেই হুজুরের তত বেশি রেট‌ দাঁড়ালো যে যত খারাপ ভাষায় , কুৎসিত ভাষায় অন্যের ধর্মকে , অন্যের উপাস্যকে গালিগালাজ করতে পারঙ্গম । দেখাদেখি ক্রমে পশ্চিমবঙ্গেও ওয়াজ মাহফিল জনপ্রিয়তা অর্জন করে । এখানেও কয়েকজন স্বধর্মের কথা প্রচার করতে গিয়ে পরধর্মকে নিয়ে টানাটানি করে । বাংলাদেশ থেকেও বক্তা হায়ার করে আনা হয় । ফুরফুরা শরীফের পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকী তো আর আজকের থেকে বেফাঁস কথা বলে না । ইউটিউব-ফেসবুকে ভাইজানের পুরোনো ভাষণ গুলি শুনে দেখবেন ।

বাংলাদেশের রঙপুরে সংখ্যাগুরুর হিংসার আগুনে জ্বলছে সংখ্যালঘুদের গ্রাম।

বাংলাদেশে এক হুজুরকে এমন‌ও বলতে শুনেছি, ‘ হিন্দুদের হাত-পা ভেঙে বুড়িগঙ্গায় ফেলে দেওয়া হবে ।’ বক্তার কী‌ আক্রমণাত্মক বডি ল্যাঙ্গুয়েজ ! কী শব্দ চয়ন ! শুনে জনতার কী জোশ ! যখন এই ওয়াজি হুজুরেরা সরকারের ল্যাজে পাড়া দেওয়া ‌শুরু করল , তখন বাংলাদেশ সরকার এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া ‌শুরু করল বটে কিন্তু ততদিনে অনেক ‌দেরি হয়ে গেছে । প্রতিমা ভাঙার উস্কানি যখন হুজুরেরা প্রকাশ্যে দিত দিনের পর দিন , তখন তাদের মুখ বন্ধ করার কথা সরকারের মনে হয় নি । এখন সাফ কথা হচ্ছে যে , নিজের ধর্ম প্রচারের নামে‌ অন্যের ধর্মকে , উপাস্যকে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ-উপহাস , কটাক্ষ বন্ধ করতে হবে । বাংলাদেশ হোক আর পশ্চিমবঙ্গ । মঞ্চে সিংহাসনের উপ্রে ব‌ইস্যা অন্য ধর্মের গিবত ক‌রা , নারীর গিবত করা আর চ‌লবে না। আইনের শাসনের মাধ্যমে ধর্মপ্রচারের নামে অন্য সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ানোর এই কাজটা বন্ধ করতে হবে সরকারকে । যারা পরধর্মের প্রতি বিদ্বেষ ছড়াবে তাদের বিরুদ্ধে শক্ত পদক্ষেপ করতে হবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী প্রতিষ্ঠানকে ।‌ করতেই হবে । কোনও ‌ধর্মের প্রচারকের‌ই অন্যের ধর্মকে উপেক্ষা , অপমান , কটাক্ষ করার অধিকার নাই । নিজের ধর্মের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে গিয়ে তুমি আরেকজনের ‌ধর্মকে নিকৃষ্ট বলতে পার না।

ছবি- সূত্র মারফৎ সংগৃহীত।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *