আফগানিস্তানকে তালিবানের হাতে সঁপে দিয়ে পালাচ্ছে সুপার পাওয়ার !
৭২ ঘন্টার মধ্যে কাবুলে দূতাবাস খালি করার সিদ্ধান্ত মার্কিন প্রশাসনের।
আফগানিস্তানের কয়েকজন সাংসদ ও সরকারি আধিকারিক আশ্রয় নিয়েছেন ভারতে।
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : যা অনুমান করা গিয়েছিল তার অনেক আগেই কাবুল দখল করে নিল তালিবান । শনিবার দুপুরেই কাবুলে ঢুকে পড়তে শুরু করে তালিবানের যোদ্ধারা । কার্যত বিনা প্রতিরোধেই তালিবানের হাতে রাজধানী ছেড়ে পালায় আফগান সরকারের সেনারা । প্রেসিডেন্ট আশরফ গনির সরকারের কার্যত পতন ঘটেছে । প্রেসিডেন্ট বেপাত্তা। খুব সম্ভবত তাজিকিস্তানে পালিয়ে গেছেন প্রেসিডেন্ট গনি । প্রেসিডেন্টের প্রাসাদের দখল নিয়েছে তালিবানেরা । তালিবান প্রধান মোল্লা আবদুল গনি বরাদর সপার্ষদ প্রেসিডেন্টের প্রাসাদে মধ্যাহ্নভোজন সেরেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে । তালিবানরা কাবুলে সরকার পর্যন্ত গঠন করে ফেলেছে বলে জানা যাচ্ছে ।
এদিকে তালিবান ঢুকে পড়েছে এই খবর চাউর হতেই কাবুল জুড়ে হুড়োহুড়ি পড়ে যায় । মানুষ দিগ্বিদিক জ্ঞান শূন্য হয়ে পালাতে শুরু করে । তালিবানের নজরে পড়ার আগেই ঘরে পালাতে পারলে বাঁচেন রাজধানীর বাসিন্দারা । রাজপথে তীব্র যানজট বেঁধে যায় । গাড়ির গায়ে গাড়ি লেগে যায়। চাকা ঘোরারও জায়গা থাকে না। রাস্তায় রাস্তায় মহিলারা কান্নাকাটি জুড়ে দেয় । কেন না , তালিবানি শাসন তাদের কাছে মৃত্যুর সামিল ।
৩১ আগস্টের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করার কথা । আমেরিকার প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের ধারণা ছিল সৈন্য প্রত্যাহারের দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে তালিবানরা কাবুল দখল করে নিতে পারে । কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা গেল আমেরিকান সৈন্যরা আফগানিস্তান ত্যাগ করার আগেই তালিবানদের কাবুল দখল সারা । গত সাত দিনের যুদ্ধের গতিপ্রকৃতি দেখেই অবশ্য বোঝা যাচ্ছিল সময়ের অনেক আগেই কাবুলকে কব্জা করে নেবে তালিবান । যুদ্ধের ভাবগতিক দেখে আমেরিকা আফগানিস্তানে কয়েক হাজার মেরিন সেনা পাঠালেও তালিবানদের মোকাবিলা করা নয় তাদের ওপর দায়িত্ব পড়েছে নিরাপদে নিজেদের কুটনীতিক ও নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে আনা। ইতিমধ্যে কাবুলে বিমান পাঠিয়ে নিজেদের নাগরিক ও দূতাবাসের কর্মীদের ফিরিয়ে এনেছে ভারত সরকারও । আফগানিস্তানের কয়েকজন সাংসদ ও সরকারের আধিকারিকও ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে ।
কাবুলে তালিবান শাসনের প্রত্যাবর্তনকে সুপার পাওয়ার আমেরিকার শোচনীয় পরাজয় বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক মহল । আলকায়দার আত্মঘাতী বিমান হামলায় ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার ধ্বংস হয়ে যাওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই আফগানিস্তানে হামলা চালিয়েছিল মার্কিন সেনাবাহিনী । মার্কিন অভিযানে আফগানিস্তান তালিবান মুক্ত হলেও গৃহযুদ্ধ থামে নি । আমেরিকার সব থেকে বড় ব্যর্থতা বিশ্বের সবথেকে বড় সামরিক শক্তি হওয়ার পরেও তালিবান জঙ্গিদের ধ্বংস করতে না পারা । আফগানিস্তানে তালিবানের বিজয়ে সবথেকে খুশি পাকিস্তান । পাকিস্তানের প্রত্যক্ষ মদত ছাড়া তালিবানের পক্ষে এত বড় জয় হাসিল করা সম্ভব হতো না বলে মনে করছেন সামরিক বিশেষজ্ঞরা । তালিবানের পেছন থেকে পাকিস্তানকে সরিয়ে আনতে না পারাটা আমেরিকার আরও একটি বড় কূটনৈতিক ব্যর্থতা । তালিবানের বিজয়ে খুশি বেজিংও । তালিবানের মতো ধর্মান্ধ জঙ্গিগোষ্ঠীর আফগানিস্তান দখলে সঙ্গত কারণেই দক্ষিণ এশিয়ায় সব থেকে বেশি অস্বস্তিতে ভারত ।
Photo credit – The Guardian ,Reuters .