- রাজ্যের আর্জি খারিজ করল পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ
- ভোট পরবর্তী রাজনৈতিক হিংসা নিয়ে ১৮ জুনের নির্দেশ বহাল
- রাজ্য সরকারের ওপর আস্থা নেই আদালতের
- রাজনৈতিক হিংসা নিয়ে লুকোছাপা করছে রাজ্য , আদালতের পর্যবেক্ষণ
কলকাতা : ভোট পরবর্তী হিংসা মামলায় ১৮ জুনের রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি জানিয়ে হাইকোর্টে মুখ পুড়ল রাজ্য সরকারের । সোমবার রাজ্য সরকারের আর্জি খারিজ করে দিয়ে আগের রায়ই বহাল রাখার নির্দেশ দিল প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দলের নেতৃত্বে গঠিত পাঁচ সদস্যের বৃহত্তর বেঞ্চ । আর্জি খারিজ করার সময় রাজ্য প্রশাসনকে তীব্র ভর্ৎসনা করেন প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দল । জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ভোট পরবর্তী হিংসার ঘটনার তদন্ত শুরু করলে রাজ্যের অসুবিধাটা কোথায় জানতে চান ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি ।
পশ্চিমবঙ্গে ভোট পরবর্তী হিংসার ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আনার আর্জি জানিয়ে মে মাসে কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করা হয়েছিল । রাজনৈতিক হিংসায় প্রাণহানি ও ঘরছাড়া হওয়ার ঘটনাকে হালকা ভাবে নেয় নি আদালত । রাজনৈতিক হিংসা নিয়ে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হওয়া মাত্রই ঘরছাড়াদের ফিরিয়ে আনতে তিন সদস্যের কমিটি গড়ে দেয় কলকাতা হাইকোর্ট । কমিটিতে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ও রাজ্য মানবাধিকার কমিশন ছাড়াও স্টেট লিগাল এইড সার্ভিসের একজন করে সদস্য ছিলেন । এই কমিটির কাছে আক্রান্তরা যাতে অভিযোগ জানাতে পারে তার জন্য একটি পৃথক মেল আইডিও খোলার নির্দেশ দেয় আদালত । রাজ্য প্রশাসন ভোট পরবর্তী হিংসার কথা অস্বীকার করলেও ওই আইডিতে ৩ হাজার ২৪৩ টি অভিযোগ জমা পড়ে ।
গত ১৮ জুনের শুনানিতে ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের পাঁচ বিচারপতির বৃহত্তর বেঞ্চের নির্দেশ রাজ্য সরকারের গাত্রদাহের কারণ হয় । সেদিন হাইকোর্ট নির্দেশ দেয় , জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের একটি প্রতিনিধি দল পশ্চিমবঙ্গে ভোট পরবর্তী হিংসার অভিযোগ গুলি সরেজমিনে অনুসন্ধান করে দেখবে । অনুসন্ধানের কাজে কেন্দ্রীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্যদের সাহায্য করবে রাজ্য মানবাধিকার কমিশন ও পুলিশ – এমনই নির্দেশ ছিল বিচারপতিদের । পুলিশ ও রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্যদের সঙ্গে অসহযোগিতার অভিযোগ উঠলে ওই দুই সংস্থাকেই তার দায়ভার নিতে হবে বলেও সতর্ক করে দেয় আদালত । ভোট পরবর্তী রাজনৈতিক হিংসা সংক্রান্ত জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের প্রতিবেদন ৩০ জুনের মধ্যে আদালতে পেশ করার নির্দেশ দেওয়া হয় ।
কলকাতা হাইকোর্টের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চের ১৮ জুনের রায়ের পুনর্বিবেচনা চেয়ে রাজ্য সরকার ওই বেঞ্চের কাছেই আবেদন জানায় । সোমবার মামলাটির শুনানি শুরু হলে রাজ্য প্রশাসনকে রীতিমতো তিরস্কার করে পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ । ভোট পরবর্তী রাজনৈতিক হিংসা নিয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কাছে ৫৪১টি অভিযোগ জমা পড়লেও রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের ঘরে অভিযোগের সংখ্যা শূন্য । রাজ্য সরকারের আইনজীবীর মুখ থেকে এই তথ্য জানা মাত্রই তেতে ওঠেন কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি । এই ঘটনাকে রাজ্য প্রশাসনের প্রতি আক্রান্তদের আস্থাহীনতা হিসেবেই দেখেছে আদালত । রাজনৈতিক হিংসার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্য প্রশাসন এখনও পর্যন্ত কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে সেই রিপোর্ট রাজ্যের তরফে আদালতে জমা করা হলেও সরকারের রিপোর্টের প্রতি কোনও আগ্রহই দেখান নি বিচারপতিরা ।
কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দল রাজ্য সরকারের আইনজীবীর উদ্দেশ্যে বলেন, ‘ এইসব দেখতে চাই না । রাজনৈতিক হিংসার অভিযোগ গুলির তদন্তই ঠিকমতো হয় নি । পুলিশ তো এফআইআর’ই দায়ের করে নি অধিকাংশ ঘটনায় । যেখানে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রাজ্য প্রশাসনেরই ব্যবস্থা গ্রহণ করে আক্রান্তদের পাশে দাঁড়ানো উচিত ছিল সেখানে ঘটনা লুকোতে ব্যস্ত সরকার । ‘ রাজ্যের উদ্দেশ্যে প্রধান বিচারপতির প্রশ্ন – এত লুকোছাপা কেন ? একটা ব্যাপার পরিস্কার রাজনৈতিক হিংসা মোকাবিলায় রাজ্য প্রশাসনের কাজকর্ম দেখে আদালতের মনে দৃঢ় ধারণা জন্মেছে যে অভিযোগকারীদের বক্তব্যকে গুরুত্বই দিচ্ছে না পুলিশ । সব শেষে পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ জানিয়ে দেয় – রাজ্য সরকারের রিপোর্ট ভরসা জোগানোর মতো নয় । ১৮ জুনের নির্দেশই বহাল থাকবে এবং সেই নির্দেশ অনুযায়ীই রাজ্য সরকারকে চলতে হবে ।
রাজনৈতিক হিংসা নিয়ে সোমবার হাইকোর্টের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ ও পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে রাজ্য বিজেপি । আদালতের রায় সরকারের জন্য অস্বস্তিকর হলেও রাজ্যের সাধারণ মানুষকে তা ভরসা জোগাবে বলেই রাজনৈতিক মহলের ধারণা ।
Photo Credit -India TV/ ANI