২ মে,২০২১ : শেষ পর্যন্ত নিজের রাজনৈতিক জীবনের সবথেকে কঠিন লড়াইয়ে সবথেকে সহজ জয় পেলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । ২রা মে বাংলার জনাদেশ খুবই স্পষ্ট । আরও পাঁচ বছরের জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতেই রাজ্যের ভার তুলে দিল পশ্চিমবঙ্গের মানুষ । যাকে বলে হাত উপুড় করে ঢেলে দেওয়া , সমস্ত পূর্বাভাস , এক্সিটপোলকে ভুল প্রমাণ করে তৃণমূল নেত্রীর ঝুলিতে কার্যত সেভাবেই ভোট ঢেলে দিলেন জনতা জনার্দন । করোনা পরিস্থিতিতে গণনাকেন্দ্রে কঠোর স্বাস্থবিধি মেনে চলায় গণনার কাজ চলছে ঢিমেতালে । এখনও পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের সার্ভার থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ২৯২ আসনের মধ্যে ২১০টিতেই এগিয়ে রয়েছে তৃণমূল । মাত্র ৭৭টিতে বিজেপি । অন্যান্যরা ৩টিতে । টিমকে বিশাল স্কোরের জয় এনে দিলেও নন্দীগ্রামের ক্রিজে আউট ক্যাপ্টেন। দিনভর হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর এক সময় শুভেন্দুকে পেছনে ফেলে এগিয়ে গেলেও শেষ পর্যন্ত হার স্বীকার করতে হল মমতাকে। নন্দীগ্রামে শুভেন্দু অধিকারীকে ১৯৫৬ ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ি , কোচবিহার , আলিপুরদুয়ার ও দার্জিলিং বাদে রাজ্যের আর কোথাও ভাল ফল করতে পারে নি বিজেপি । দক্ষিণবঙ্গে কার্যত ভরাডুবি হয়েছে পদ্ম শিবিরের । লোকসভায় এগিয়ে থাকা আসন গুলিতেও সুবিধা করতে পারে নি বিজেপি ।
খেলা জয়ের পর কালীঘাটের বাড়িতে তৃণমূল সুপ্রিমো সাংবাদিকদের মাঝে । |
নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে বাম-কংগ্রেস-আব্বাস জোট । স্বাধীনতার পর এই প্রথম কোনও বিধানসভা নির্বাচনে শূন্য পেল বামপন্থীরা । একই অবস্থা কংগ্রেসেরও । সংখ্যালঘু ভোটে কোনও দাগ কাটতে ব্যর্থ আব্বাস সিদ্দিকির ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্ট । ২০১৬ র বিধানসভায় তৃণমূলের ভোটের হার ছিল ৪৪ শতাংশ । লোকসভায় কমে দাঁড়ায় ৪৩ শতাংশ । এবার এখনও পর্যন্ত তৃণমূল ভোট পেয়েছে ৪৮.৩৩ শতাংশ । লোকসভার থেকে পাঁচ শতাংশের বেশি ভোট বাড়িয়েছে তৃণমূল । উনিশের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির ভোট ছিল ৪০ শতাংশ । এবার বিজেপির ভোটের হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৭.৭৪ শতাংশ । দুই শতাংশের বেশি ভোট হাত থেকে বেরিয়ে গেছে বিজেপির । বামেরা সাত থেকে কমে হয়েছে ৫.৫৬ শতাংশ। কংগ্রেসের ভোট ২.৮৬ শতাংশ । বিজেপি বিরোধী সমস্ত ভোট ঝেঁপে তৃণমূলের ঘরে পড়াতেই ঘাসফুল পাঁচ শতাংশ ভোট বেশি পেয়েছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল । বাম-কংগ্রেস জোটের কিছু ভোটও টেনে নিয়েছে তৃণমূল ।
২ মে বিকেলে তৃণমূল ভবনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। |
ভোটে মেরুকরণের ছাপ স্পষ্ট । কিন্তু তাতে সুবিধা হয়েছে মমতারই । সংখ্যালঘু ভোটের পুরোটাই গিয়েছে তৃণমূলের ঘরে । এর পাশাপাশি সফল তৃণমূল সুপ্রিমোর জেন্ডার পলিটক্সও । ইস্তাহারে মেয়েদের জন্য ঢেলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তৃণমূল। তাতে আকৃষ্ট হয়ে রাজ্যের নারী সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠ তৃণমূলকে ঢেলে ভোট দিয়েছে বলেই ট্রেন্ড দেখে মনে হচ্ছে । স্বাস্থ্যসাথী , সবুজসাথী , কন্যাশ্রীর মতো জনকল্যাণ মূলক প্রকল্পের সুবিধাও ভোটবাক্সে ডিভিডেন্ড দিয়েছে তৃণমূলকে।
তৃণমূলকে উৎখাত করতে এবার অলআউট অভিযানে নেমে ছিলেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব । বঙ্গ বিজয়কে প্রেস্টিজ ফাইট করে তুলেছিলেন খোদ মোদী-শাহ জুটি । ভোটের মুখে তৃণমূলের ঘর ভেঙে শুভেন্দু অধিকারী , রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো হেভিওয়েট নেতাদের ছিনিয়ে এনেও বাজিমাৎ করতে ব্যর্থ হলেন মোদী-শাহ । নিঃসন্দেহে সাত বছরের মধ্যে এটা তাঁদের জন্য সবথেকে বড় রাজনৈতিক পরাজয় । ঘরে বাইরে চরম চাপের মুখে পড়েও স্রেফ একার ক্যারিশ্মায় ফের খেলা জিতে মমতা আবার প্রমাণ করলেন – এই মুহুর্তে বাংলায় তাঁর ধারেকাছে কেউ নেই । কোনও সন্দেহ নেই পিকের রণকৌশল মমতার লড়াইকে অনেক সহজ করেছে । রাজনীতিতে যো জিতা ওহি সিকান্দার । একুশের ফাইনালে চ্যাম্পিয়ন একজনই । তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ।