আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ফের আন্তর্জাতিক রাজনীতির শিরোনামে ইজরায়েল-প্যালেস্টাইন সংঘর্ষ । জেরুজালেমের আলআকসা মসজিদকে ঘিরে পুলিশ ও প্যালেস্টানিয় যুবকদের মধ্যে গন্ডগোলের বদলা নিতে গাজা স্ট্রিপ থেকে হামাস গেরিলারা ইজরায়েলের রাজধানী তেলআভিভ লক্ষ্য করে রকেট ছোঁড়ে । জবাবে গাজায় হামাসের পরিকাঠামো বোমা মেরে মেরে ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছে ইজ্রায়েলের বিমান বাহিনী । ২০১৪ সালের পর ফের গাজা ভূখণ্ড থেকে রকেট হামলার ঘটনা ঘটল ইজরায়েলে । প্যালেস্টানিয় জনগোষ্ঠীর প্রধান রাজনৈতিক সংগঠন পিএলও বা প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন ইজরায়েল সরকারের সঙ্গে মোটের ওপর একটি রফা করে দেশটির পশ্চিম তীরে নিজেদের মতো করে পৃথক প্রশাসন চালিয়েই সন্তুষ্ট । কিন্তু সমস্যা গাজা স্ট্রিপের হামাসকে নিয়ে । হামাস রীতিমতো সন্ত্রাসবাদী সংগঠন যাদের এখনও ইজরায়েলকে পৃথিবীর মানচিত্র থেকে মুছে দেওয়ার খোয়াইশ কাটে নি । গাজা ভূখন্ডে প্যালেস্টানিয়দের প্রশাসন চলে উগ্রবাদী হামাসের নেতৃত্বে । ইজরায়েল আর প্যালেস্টাইনের মধ্যে অশান্তি জিইয়ে রাখার জন্য হামাসকেই দায়ী করে থাকে ইজয়ায়েল সরকার ।
এমনিতেই প্যালেস্টানিয়দের সামনে ইজরায়েলের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ বোঝাপড়া করে নেওয়া ছাড়া খুব বেশি পথ খোলা নেই । মুশকিল হল পিএলও নেতৃত্ব এই বাস্তবতা বুঝতে পারলেও হামাস অনুধাবন করতে নারাজ । ইজরায়েল – প্যালেস্টাইন সংঘর্ষের আবহে আরব বিশ্বে যে আরব অস্মিতার সূচনা হয়েছিল গত শতাব্দীর ষাটের দশকে, বহু দিন হল তা অস্তমিত । এখন খোদ আরব বিশ্বেই প্যালেস্টানিয়রা বান্ধবহীন । গত এক দশকে মধ্যপাচ্যের রাজনীতি সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে । সিরিয়া ব্যতীত বাকি আরব রাষ্ট্র গুলি ভয়ে অথবা ভক্তিতে অথবা নিজের স্বার্থে ইজরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক প্রায় স্বাভাবিক করে ফেলেছে । জর্ডনের সঙ্গে ইজরায়েলের মিত্রতা বহু আগেই স্থাপিত হয়েছে । গতবছর ঐতিহাসিক এক চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে ইজরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করে নিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরশাহি ( UAE ) । যে মিশর দু’দুবার আরব-ইজরায়েল যুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছিল , পরাজয় থেকে শিক্ষা নিয়ে ১৯৭৯ সালেই ইজরায়েলের সঙ্গে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করে ফেলে তারা । মিশরের বর্তমান প্রেসিডেন্ট আবদেল ফতাহ আল- সিসি তো প্যালেস্টাইনের দায় ঘাড় থেকে ঝেড়ে ফেলে দিয়ে ইজরায়েলের সঙ্গে কষে বন্ধুত্বে মেতেছেন । আগে গাজা স্ট্রিপ থেকে সুরঙ্গ পথে মিশরে গিয়ে আশ্রয় নিত হামাসের যোদ্ধারা । ইজরায়েলের সঙ্গে দোস্তির আনন্দে সেইসব সুরঙ্গ বুজিয়ে দিয়ে সীমান্তে কড়া পাহারা বসিয়ে হামাস জঙ্গিদের মিশরে ঢোকার পথ বন্ধ করে দিয়েছে আল-সিসি প্রশাসন ।
তেলআভিভে রকেট হামলার জবাবে গাজায় হামাসের ঠিকানায় বোমা বর্ষণ ইজরায়েলের । |
পিএলও ইজরায়েল সরকারের সঙ্গে বোঝাপড়া করে নিলেও সংঘাতের পথ ছাড়তে নারাজ হামাস । |
মধ্যপাচ্যের যে দেশটি এখনও ইজরায়েলের অস্তিত্ব স্বীকার করে না এবং ইজরায়েল যাকে নিজের নিরাপত্তার জন্য হুমকি মনে করে সেই দেশটির নাম ইরান । শিয়া সম্প্রদায়ের ইরান আরব দেশ নয় । সৌদি আরব সহ আরবের সুন্নি মুসলিম প্রধান দেশগুলোর সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক ইসলামিক বিপ্লবের পর থেকেই স্পর্শকাতর । সৌদি আরব ও ইরান মনেপ্রাণে পরস্পরের বিনাশ চায় । প্রতিবেশি সিরিয়ার সঙ্গে ইজরায়েলের বিবাদ নিষ্পত্তি হওয়ার ততদিন পর্যন্ত কোনও সম্ভাবনা নেই যতদিন পর্যন্ত দামাস্কাসে ইরানের মদতপুষ্ট সরকার থাকবে । তবে গৃহযুদ্ধ বিধ্বস্ত সিরিয়াকে সবসময় চোখে চোখে রাখে ইজরায়েল এবং সময় সময় কড়কানি দিতে ভোলে না । শিয়াপন্থী হিজবুল্লাহ গেরিলারা ইজরায়েল-লেবানন সীমান্ত জুড়ে একটি বড় অংশে বিকল্প সরকার চালায় ইরানের প্রত্যক্ষ মদতে । এখন গাজা স্ট্রিপের হামাস আর লেবাননের হিজবুল্লাহ গেরিলা ব্যতীত আর কারও সঙ্গেই সশস্ত্র সংঘাতের জায়গায় নেই ইজরায়েল । ১৯৪৮ সালে স্থাপিত মাত্র ২২ হাজার ৭২ বর্গ কিলোমিটারের এই ক্ষুদ্র জাতিরাষ্ট্র অতুলনীয় সমরশক্তি , বিজ্ঞান-প্রযুক্তি , সফল কূটনীতি ও উন্নত অর্থনীতির জোরে বিশাল আরব দুনিয়াকে নাকে রশি দিয়ে ঘুরিয়েই চলেছে বিংশ শতাব্দীর ষাটের দশক থেকে ।
Picture Courtesy – Twitter of Israel Govt./Twitter@HanaaWaelNassa1/ sky news