মেডিকেল ডেস্ক : যখন করোনা সামাল দিতেই চিকিৎসকেরা নাজেহাল , তখন যমরাজের নতুন দূত হয়ে মানুষের দুয়ারে হাজির ব্ল্যাক ফাঙ্গাস বা কালো ছত্রাক । মিউকরমাইসিটিস ( Mucormycetes ) গোষ্ঠীর ছত্রাক এটা । মানব অঙ্গ -প্রত্যঙ্গে এর থেকে যে সংক্রমণ ছড়ায় চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় তার নাম মিউকরমাইকোসিস ( Mucormycosis ) । ভারতে ইতিমধ্যেই প্রায় নয় হাজার মানুষ ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হয়েছেন । এখনও পর্যন্ত মিউকরমাইকোসিসে আক্রান্ত হয়ে ২১৯ জনের মৃত্যুর খবর সরকারি ভাবে স্বীকার করা হয়েছে । কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পরামর্শ মেনে দেশের ২৯টি রাজ্য ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণকে মহামারী হিসেবে ঘোষণা করেছে । হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কোভিড আক্রান্তরাই ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের শিকার হচ্ছেন । দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিসে ভুগছেন এমন করোনা রোগীদের মধ্যেই সেরে ওঠার সময় ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ লক্ষ্য করছেন চিকিৎসকেরা । ক্যানসার বা অন্যান্য জটিল অসুখে আক্রান্ত ব্যক্তি, যাদের রোগ প্রতিরোধ শক্তি প্রায় তলানিতে তাদেরও কালো ছত্রাকের কবলে পড়ার ভয় আছে । এখনও পর্যন্ত কোভিড রোগীদের বাইরে কারও মিউকরমাইকোসিসে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য পাওয়া যায় নি ।
ব্ল্যাক ফাঙ্গাস রোগের মৃত্যু হার চিন্তায় রেখেছে চিকিৎসকদের । প্রতি ১০০ জন আক্রান্তের মধ্যে ৫৪ জনেরই মৃত্যু ঠেকানো সম্ভব হয় না । ঠিক সময়ে যথাযথ চিকিৎসা শুরু করা না গেলে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে মৃত্যু হার ৯৪ শতাংশে পর্যন্ত পৌঁছতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন এক চিকিৎসক । মিউকরমাইসিটিস ছত্রাকের উৎস সাধারণত ভেজা মাটি , পচা গাছপালা , জৈব সার এবং পচে যাওয়া ফল বা সবজি। হাসপাতাল গুলোর দীর্ঘদিন পরিস্কার না হওয়া জলাধার , আইসিইউর ভেন্টিলেটর মেশিন কিম্বা বহু ব্যবহৃত অক্সিজেন মাস্ক বা অপরিশোধিত নল থেকেও করোনা রোগীদের দেহে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ ছড়াতে পারে বলে চিকিৎসকদের একটি মহলের আশঙ্কা ।
ইলেক্ট্রোনিক্স মাইক্রোস্কোপে যেমন দেখায় ব্ল্যাক ফাঙ্গাসকে । |
স্টেরয়েডের অত্যধিক ব্যবহার শরীরে ফাঙ্গাল ইনফরমেশনের আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয় । ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সংক্রমণের ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ায় এবার করোনা নিরাময়ে বাছবিচার না করেই স্টেরয়েডের অত্যধিক ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে ডাক্তারদের পরামর্শ দিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা । স্টেরয়েডের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার রোগীদের রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ করে বাড়িয়ে দেয় । যে সমস্ত করোনা রোগী দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিসে ভুগছেন তাদের ক্ষেত্রে এই পরিস্থিতি খুব বিপজ্জনক বলে মনে করছেন চিকিৎসকেরা । এই ধরণের রোগীদেরই সেরে ওঠার পথে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের কবলে পড়ার ঘটনা বেশি ঘটছে বলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অনুমান ।
মিউকরমাইসিটিস ছত্রাক নাক-মুখ দিয়ে শরীরে প্রবেশ করে সাইনাস , চোখ , চোয়াল , ফুসফুস এমনকি মস্তিষ্কও আক্রান্ত করতে পারে । রোগীর প্রাণ বাঁচানোর প্রয়োজনে অতিদ্রুত সংক্রমিত অঙ্গ অস্ত্রপচার করে বাদ পর্যন্ত দিতে হয় । সব থেকে চিন্তার কথা এই রোগের চিকিৎসা যথেষ্টই ব্যয়বহুল এবং অ্যান্টি ফাঙ্গাল ড্রাগসের উৎপাদনও পর্যাপ্ত নয় । ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় ছত্রাক প্রতিরোধী ওষুধের উৎপাদন বৃদ্ধিতে পদক্ষেপ করতে সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন চিকিৎসক মহল । সংক্রমণ মস্তিষ্কে পৌঁছানোর আগেই নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারলে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস আক্রান্তের মৃত্যু অবধারিত । এই পরিস্থিতিতে দেশের হাসপাতাল গুলোর কোভিড ওয়ার্ডে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে সতর্কতা অবলম্বন করার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক।
সেরে উঠলেও সারা জীবনের মতো দৃষ্টিশক্তি হরাচ্ছেন অনেক ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত রোগী । |
ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সংক্রমণের সবথেকে বেশি খবর এসেছে মহারাষ্ট্র থেকে । সেখানে দেড় হাজারের বেশি কোভিড রোগী আক্রান্ত । গুজরাটে ৮০০ ছাড়িয়ে গেছে । দিল্লিতেও প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ জন করোনা রোগীর মধ্যে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের উপসর্গ ধরা পড়ছে । পশ্চিমবঙ্গে সাত জন করোনা রোগীর দেহে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের লক্ষণ ধরা পড়েছে । দু’দিন আগেই কলকাতার শম্ভুনাথ পন্ডিত হাসপাতালে মিউকরমাইকোসিসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে বছর বত্রিশের করোনা সংক্রমিত এক গৃহবধূর। তিনি ডায়াবেটিক রোগী ছিলেন বলে হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে ।
Photo Credits – Live Science, Glimore Health News