নিজস্ব সংবাদদাতা ,৪ এপ্রিল,২০২১ : বাংলায় বিজেপির আসা কেউ আটকাতে পারবে না বলে দাবি করলেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ । রবিবার চন্দননগরে বিজেপির নির্বাচনী সভায় এই দাবি করলেন আদিত্যনাথ । পশ্চিমবঙ্গে ভোট প্রচারে বিজেপির স্টার ক্যাম্পেইনারদের মধ্যে যোগী আদিত্যনাথের ডিমান্ড মোদী-শাহের ঠিক পরেই । প্রায় রোজই ভোট প্রচারে লখনৌ থেকে বাংলায় উড়ে আসছেন যোগী আদিত্যনাথ , যাকে বলা হয়ে থাকে হিন্দুত্বের পোস্টারবয় । রবিবাসরীয় প্রচারে এসে চন্দননগরের পর হাওড়ার আমতায়ও সভা জমিয়ে দিলেন উত্তরপ্রদেশের গেরুয়াবসনধারী মুখ্যমন্ত্রী ।
সভায় যোগী আদিত্যনাথ বলেন, ‘ দ্বিতীয় দফাতেই হার স্বীকার করে নিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । ‘ যোগীর কটাক্ষ , ‘ আপনারা দেখেছেন নন্দীগ্রামে ভোটের দিন উনি একটি বুথেই দুই ঘন্টা বসে ছিলেন । একজন সিটিং চিফ মিনিস্টার যদি একটি বুথেই দুই ঘন্টা বসে থাকেন তবে এই ঘটনার আপনারা কী মানে করবেন ? এর মানে হল উনি হার স্বীকার করে নিয়েছেন । ‘ এরপরেই যোগী যোগ করেন – সব থেকে ভালো হয় যদি উনি সততার সঙ্গে পরাজয় মেনে নেন ‘
চন্দননগরে বিজেপির সভায় ভাষণ দিচ্ছেন যোগী আদিত্যনাথ । |
শুধু মোদী-শাহ আর বিজেপিই নয় প্রচারে নির্বাচন কমিশনকেও নিশানা করে চলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । ইভিএমের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও হামেশাই প্রশ্ন তোলেন তিনি । এদিন মমতা সহ বিরোধীদের বিঁধে শ্লেষের সুরে যোগী আদিত্যনাথ বলেন, ‘ হারলে পরেই মমতাজির গুস্সা গিয়ে পড়বে ইভিএমের ওপর । ভোটে জিতে গেলেই ইভিএম এনার কাছে তমেব মাতা তমেব পিতার ন্যায় পূতপবিত্র হয়ে যায় । আর হারলেই ইভিএমকে তিনি গালি দিতে শুরু করেন । আমেথিতে হারার পর যেমন গালি দেন রাহুল গান্ধী । ‘
নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে ভারত বিশ্বসভায় মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছে বলে সভায় দাবি করেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী । তিনি বলেন এবার বাংলার যুবশক্তি , মা-ভাই-বোনেরাও মোদীর পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন । তাই বাংলায় বিজেপির জিত নিশ্চিত বলে মনে করেন যোগী আদিত্যনাথ । যোগী আদিত্যনাথ বলেন ভাজপা যা ওয়াদা করে তা পালন করে । এই প্রসঙ্গে নিজের রাজ্যের উদাহরণ দেন আদিত্যনাথ । উত্তরপ্রদেশ থেকে তাঁর সরকার গুন্ডাগর্দি নিকেশ করে দিয়েছে বলে দাবি করেন যোগী । তিনি বলেন , ‘ মাত্র চার বছরের মধ্যে উত্তর প্রদেশের ছবি পাল্টে দেওয়া হয়েছে । গুন্ডাগর্দি গায়েব হয়ে গেছে । ইউপির গুন্ডাবদমাইশরা হয় জেলের ঘানি টানছে । নয় রাজ্য ছেড়ে পালিয়েছে । নয় তাদের রাম নাম সত্য করে দেওয়া হয়েছে । ‘ বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে সরকারে এলে এই রাজ্যের গুন্ডা-মস্তানদেরও একই পরিণতি হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন যোগী আদিত্যনাথ । যোগীর কটাক্ষ, ‘ তৃণমূলের গুন্ডাবদমাইশরা এখন থেকেই ভেবে রাখুক দোসরা মে ভাজপা সরকারে আসার পর জেল , পলায়ন অথবা এনকাউন্টারের মধ্যে কোনটি বেছে নেবে তারা । ‘ বিজেপি বাংলার প্রশাসনে এলে প্রত্যেকটি অপরাধীকে অপরাধে অনুযায়ী সাজা দেওয়া হবে বলে জানান তিনি ।
উত্তরপ্রদেশে বিজেপি সরকার চার বছরে চার লক্ষ ছেলেমেয়েকে সরকারি চাকরি দিয়েছে বলে দাবি করেন যোগী আদিত্যনাথ । দেড় কোটি যুবকযুবতীকে স্বরোজগারী হতে তাঁর সরকার সহায়তা দিয়েছে বলেও দাবি করেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী । বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর বাংলাতেও যুবকদের অনুরূপ কর্মসংস্থান হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন যোগী আদিত্যনাথ । উত্তরপ্রদেশের সমসো সরকারি কর্মচারীকে সপ্তম পে কমিশনের আওতায় আনা হয়েছে বলে সভায় জানান আদিত্যনাথ । বিজেপি সরকারে এলে বাংলার সরকারি কর্মচারীরাও শীঘ্রই সপ্তম পে কমিশন নির্ধারিত হারে বেতন পাবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি ।
আমতার সভায় বক্তব্য রাখছেন যোগী আদিত্যনাথ । |
ভোটের সময়েও পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ ও প্রশাসন নিরপেক্ষতা জলাঞ্জলি দিয়ে বিজেপির নেতাকর্মীদের হেনস্থা করে চলেছে বলে রবিবার চন্দননগরের সভায় অভিযোগ করেন যোগী আদিত্যনাথ । যোগী হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘ প্রশাসনকে বলছি । এটা তৃণমূলের বিদায়বেলা । বিদায়বেলায় সুন্দরভাবে তাদের বিদায় দিন । দায়বদ্ধতার সঙ্গে নির্বাচন পরিচালনা করুন । কিন্তু খোঁজ পাচ্ছি জায়গায় জায়গায় বিজেপির কর্মীদের হয়রানি করা হচ্ছে । ‘ সরকার পাল্টে যাওয়ার পর পক্ষপাতদুষ্ট পুলিশ ও প্রশাসনিক আধিকারিকদের পরিণাম ভাল হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেন যোগী আদিত্যনাথ ।
পশ্চিমবঙ্গের মানুষের কাছে ভাজপাকে একটি বারের জন্য সুযোগ দিয়ে দেখার আবেদন জানান উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ । যোগী বলেন, ‘ আপনারা ৩০ বছর কংগ্রেস , ৩৪ বছর বামপন্থীদের , ১০ বছর তৃণমূলকে সুযোগ দিয়েছেন । পরিণামে বাংলার শিল্প-ব্যবসা-বাণিজ্য ধংস হয়ে গেছে । দুর্নীতি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে । ‘ কংগ্রেস-বাম ও তৃণমূল মিলে পশ্চিমবঙ্গের অগ্রগতিকে বরবাদ করে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন যোগী আদিত্যনাথ । যোগী বলেন, ‘ এদের শাসনে বাংলার আত্মবিশ্বাসের মূলে কুঠারাঘাত করেছে । বাংলার যুবপ্রজন্মকে বেকারত্বের জ্বালা উপহার দিয়েছে । বাংলার ব্যবসায়ীদের রাজ্য ছেড়ে পালাতে বাধ্য করেছে । ‘