প্রদ্যুৎ দাস , জলপাইগুড়ি , ২১ ডিসেম্বর : ‘আমরা যেটা জানি উলেন রায় এক্সাক্টলি বিজেপি কর্মী নয় । আমরা যেটা জানি শুনি সে সবসময় মদ খেয়ে থাকত । রাস্তায় ঘুরে বেড়াত । হয়ত ঝোঁকের মাথায় নিয়ে গিয়েছিল । ‘ সোমবার জলপাইগুড়িতে সাংবাদিক সম্মেলনে এই মন্তব্যই করলেন জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান ও রাজগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক খগেশ্বর রায় । গত ৭ ডিসেম্বর উত্তরকন্যা অভিযানে বিজেপি অসম , বিহার এবং ঝাড়খন্ড থেকে মস্তান নিয়ে এসেছিল বলেও খগেশ্বরবাবুর অভিযোগ । খগেশ্বর রায় বলেন, ‘ পুলিশ পুলিশের মতো তদন্ত করবে কিন্তু আমার যেটা ব্যক্তিগত মতামত, যেহেতু বাইরে থেকে মস্তান এনেছে । বাইরের মস্তান । বিহারের মস্তান । তাদের নিজেদের পকেটে, দুপাশে বিভিন্ন রকম ছোট্ট রিভলবার থাকে । তাদের গুলিতেই হয়তো উলেন রায় মারা গেছে । পুলিশের গুলিতে মারা যায় নাই । আমার যেটা দৃঢ় বিশ্বাস ।’খগেশ্বরবাবুর কটাক্ষ, যেহেতু উলেন রায় মারা গেছে তাই বিজেপি এখন নিজেদের কর্মী বলে দাবি করছে ।
দলনেত্রীর নির্দেশেই এদিন তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি বলে জানিয়েছেন খগেশ্বর রায় । শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গেই একই মঞ্চে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন নাগরাকাটার তৃণমূল বিধায়ক শুক্রা মুন্ডা । শুক্রা মুন্ডা বিজেপিতে যাওয়ায় ওই বিধানসভা কেন্দ্রের ভোটের ফলে কোনও প্রভাব পড়বে না বলে সাংবাদিক সম্মেলনে দাবি করেছেন খগেশ্বরবাবু । জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান বলেন, ‘ শুক্রা মুন্ডা চলে গেছে । কর্মীরা ফোন করে জানাচ্ছে , ও গেছে ভাল হয়েছে । ও থাকলে আমরা হারতাম । শুক্রা মুন্ডা বিজেপিতে যাওয়ায় নাগরাকাটার প্রকৃত তৃণমূল কর্মীরা উৎসাহিত যে আপদ চলে গেছে । ‘ তৃণমূলের ভাঙনে অবিচলিত খগেশ্বর রায়ের মন্তব্য,’ তৃণমূল বিরাট দল । দু’একজন ছেড়ে গেলে কোনও ক্ষতি হবে না । তৃণমূল দলটা এখন সমুদ্র। সেই সমুদ্র থেকে চারপাঁচ বালতি জল তুলে নিলে সমুদ্র সমুদ্রই থাকে । ‘ অমিত শাহ যতই চেষ্টা করুক ২০২১ এ তৃণমূলই ক্ষমতায় ফিরছে বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন খগেশ্বর রায় । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ২০১১ থেকে আজ পর্যন্ত যতগুলো জনমুখী প্রকল্পের মাধ্যমে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষের কাছে পরিষেবা ও সুযোগ সুবিধা পৌঁছে দিচ্ছে দেশের আর কোনও রাজ্যে তা নেই বলে দাবি করেন তিনি । এবার বিমল গুরুং পাশে থাকায় পাহাড়ের পাশাপাশি সমতলের ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি , শিলিগুড়ি সহ তরাই-ডুয়ার্সের একাধিক আসনে তৃণমূলের জয় নিশ্চিত বলেও দাবি করেন রাজগঞ্জের বিধায়ক ।
খগেশ্বর রায়ের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন জলপাইগুড়ি জেলা বিজেপির সভাপতি বাপী গোস্বামী । খগেশ্বরবাবুর উদ্দেশ্যে পাল্টা কটাক্ষ ছুঁড়ে বাপী গোস্বামীর মন্তব্য, ‘জলপাইগুড়ি জেলার মানুষ জানে কারা মদ খায় । মাতাল কারা । সেটা আমি আর বলতে চাই না ।’ প্রয়াত উলেন রায়কে গ্রামের রাজবংশী সম্প্রদায়ের একজন সাধারণ মানুষ বলে দাবি করেন বাপীবাবু বলেন, ‘ একটা রাজবংশী সম্প্রদায়ের মানুষকে পুলিশ দিয়ে তৃণমূলের গুন্ডারা হত্যা করল । ‘ জেলা বিজেপির সভাপতি আরও বলেন, ‘ খগেশ্বর রায় কীভাবে জানলেন উলেন রায় আমাদের দলের কর্মী ছিলেন কিনা । উনি কি আমাদের দলের নেতৃত্বে আছেন ? ‘
বিমল গুরুংদের সমর্থন পাওয়ায় এই যাত্রা পাহাড় , তরাই এবং ডুয়ার্সে তৃণমূলের ভাল ফলের ব্যাপারে খগেশ্বর রায় যে আশার কথা শুনিয়েছেন তাকে কটাক্ষ করে বাপী গোস্বামী বলেন, ‘ভোটের স্বার্থের জন্য তৃণমূল পাকিস্তানের মৌলবাদী শক্তির সঙ্গেও হাত মেলাতে পারে বিমল গুরুং তো দূরের কথা । ‘
ভিডিওতে দেখুন –