প্রদ্যুৎ দাস , জলপাইগুড়ি , ১৭ জানুয়ারি : দীর্ঘ ৫৫ বছর পরিত্যক্ত থাকার পর ২০২০’র ১৭ ই ডিসেম্বর দুপুর থেকে ফের সচল হল ইতিহাসের রেলপথ। বৃহস্পতিবার সকাল এগারোটায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যে ভার্চুয়াল কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধন পর্ব শেষ হতেই চিলাহাটি ও হলদিবাড়ি রেলপথে আনুষ্ঠানিক ভাবে রেল যোগাযোগ পুনরায় শুরু হয়ে গেল । যেন ইতিহাসের হাত ধরেই প্রাণ ফিরল মৃত রেলপথে ।
ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রেল যোগাযোগের উদ্বোধন করেন দু’দেশের প্রধানমন্ত্রী |
দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর ভার্চুয়াল কনফারেন্সের ঘন্টা খানেক পরেই বাংলাদেশের চিলাহাটি স্টেশন থেকে পণ্যবাহী ট্রেন জিরো লাইন অতিক্রম করে ভারতীয় ভূখন্ডের রেল লাইনে প্রবেশ করতেই রচিত হল নতুন ইতিহাস । ১৯৬৫’র ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের ঠিক আগেই এই রেলপথে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এরপর পদ্মা-গঙ্গা-যমুনা-তিস্তা দিয়ে অনেক জল গড়িয়ে গেছে । কিন্তু চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রেলপথ চালু হয় নি । অবশেষে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী বর্ষ শুরু হওয়ার ঠিক আগেই ৫৫ বছরের পরিত্যক্ত রেলপথ পুনরায় চালু করা গেল । দেশভাগের আগে দীর্ঘসময় ধরে তো বটেই এমনকি দেশভাগের পরেও বহুদিন জলপাইগুড়ির ওপর দিয়ে হলদিবাড়ি-চিলাহাটি হয়ে সান্তাহার এবং দর্শনা পেরিয়ে শিয়ালদহ পর্যন্ত দার্জিলিং মেল চলাচল করত । দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের নশ্বর দেহ দার্জিলিং থেকে নামিয়ে এই পথ দিয়েই ট্রেনে চাপিয়ে কলকাতায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল । রবীন্দ্রনাথ থেকে নেতাজি এই রেলপথ দিয়েই কলকাতা ও উত্তরবঙ্গের মধ্যে যাতায়াত করেছেন । ১৭ই ডিসেম্বর থেকে চিলাহাটি-হলদিবাড়ি হয়ে নিউজলপাইগুড়ি পর্যন্ত নিয়মিত পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল করবে দুই দেশের মধ্যে ।
জিরো পয়েন্ট পেরিয়ে ভারতে ঢোকার প্রাক মুহুর্তে বাংলাদেশের ট্রেন |
আগামী ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী বর্ষ উদযাপনের দিন এই রেলপথ দিয়ে ঢাকা-শিলিগুড়ি যাত্রীবাহী ট্রেন চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে দু’ দেশের সরকারের । জলপাইগুড়ি সহ উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষের অন্য আরেকটি প্রত্যাশাও আছে । তা হল হলদিবাড়ি-চিলাহাটি-সান্তাহার রেলপথ দিয়ে শিয়ালদহ পর্যন্ত দার্জিলিং মেলের পুনরায় যাতায়াতের সূচনা । এই পথে জলপাইগুড়ির সঙ্গে কলকাতার দূরত্ব অনেকটাই কমবে ।
হলদিবাড়ি স্টেশনে সুসজজিত বাংলাদেশী লোকোমেটিভ |
হলদিবাড়ি- চিলাহাটি রেলপথে ফের ট্রেন যোগাযোগ চালু হওয়ায় খুশি জলপাইগুড়ি , হলদিবাড়ির সাধারণ মানুষ । এদিন এই ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী হতে হলদিবাড়ি স্টেশন চত্বরে অসংখ্য মানুষের জমায়েত হয়েছিল । জিরো লাইন অতিক্রম করে বাংলাদেশের দিক থেকে ৩২টি ওয়াগনের একটি পণ্যবাহী ট্রেন ভারতে প্রবেশ করতেই দুই পাড়ের মানুষ উল্লসিত হয়ে ওঠেন । খালি ওয়াগন গুলি হলদিবাড়ি স্টেশনে রেখে বাংলাদেশের লোকো ফিরে যায় । এই উপলক্ষে নতুন ভাবে সেজে ওঠা হলদিবাড়ি স্টেশনে উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলওয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ইতিহাসের সাক্ষী হতে হলদিবাড়ি স্টেশনে মানুষের ভিড় |
ছবি/ ভিডিও – নাগরিক