নাগরিক পলিটিক্যাল ডেস্ক : শুভেন্দু মন্ত্রীত্ব ছাড়লেন । শুভেন্দু বিধায়ক পদ ছাড়লেন । অবশেষে শুভেন্দু দলও ছাড়লেন । শুভেন্দু অধিকারী । অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যদি হন তৃণমূলের যুবরাজ তবে কাঁথিকে কেন্দ্র করে যে অধিকারী সাম্রাজ্য , শিশির অধিকারী যদি হন তার বৃদ্ধ সম্রাট তবে নিঃসন্দেহে শুভেন্দু অধিকারী সেই সাম্রাজ্যের তরতাজা যুবরাজ ।
বৃহস্পতির বার বেলা থেকে শুভেন্দু অধিকারীকে নিয়ে একটি জল্পনার চূড়ান্ত অবসান হয়ে গেছে , তিনি আর তৃণমূলে নেই । শুভেন্দু আর তৃণমূলের বিচ্ছেদ চূড়ান্ত । দলত্যাগের বহুদিন আগে থেকেই তৃণমূলের ভেতরে স্বস্তিতে ছিলেন না শুভেন্দু অধিকারী । লোকসভা নির্বাচনের পর থেকেই দলের ভেতরে সুপ্রিমোর সঙ্গে শুভেন্দুর দূরত্ব । শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইগোর লড়াই নতুন নয় । অভিষেক রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার পর থেকে একটা জিনিস রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বারেবারে লক্ষ্য করেছেন, তৃণমূলের অন্দরে অভিষেকের সঙ্গে কারও ঠোকাঠুকি লাগলে পরের জনকে হয় নতিস্বীকার করে দলে থাকতে হয় নয় দল ছাড়তে হয় । তৃণমূলের একসময়ের সেকেন্ড ইন কমান্ড মুকুল রায়ও তিনবছর আগে পরেরটি বেছে নিয়ে কমলকাননে আশ্রয় নিয়েছেন ।
পঁচাত্তর থেকে সাতাত্তর সঞ্জয় গান্ধির বিরাগভাজন হয়ে কেউ কংগ্রেসে থাকতে পারত না । তৃণমূলের ভেতরে অভিষেক সঞ্জয়ের জায়গাটি নিয়ে ফেলেছেন বলে অনেকের ধারণা । ঘটনাপ্রবাহও সেই দিকেই ইঙ্গিত করে। নিঃসন্দেহে তৃণমূলের ভেতরে শুভেন্দু অধিকারীই একমাত্র নেতা ( ছিলেন ) যিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছত্রছায়ায় থেকেও নিজের ভাবমূর্তি ও ক্ষমতার জোরেই দলের ভেতরে ও বাইরে জনপ্রিয় । মমতার দলে মমতার ছায়ার নিচে থেকে নিজের আলোয় নিজে আলোকিত হওয়া যে সহজ ব্যাপার নয় তা তৃণমূলের যেকোনও নেতাকে নিভৃতে জিজ্ঞেস করলেই জানতে পারা যায় । যেইহেতু নিজের পৃথক জনভিত্তি আছে , তাই সঙ্গত কারণেই শিশির অধিকারীর জেষ্ঠ্য পুত্রের ইগোও আছে । অভিষেকের সঙ্গে ইগোর লড়াইয়ের পরেও হয়তো মনে গোঁসা নিয়েই শুভেন্দু অধিকারী আজ তৃণমূলেই থাকতেন যদি আগামী নির্বাচনে ক্ষমতায় ফেরাটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য অনিশ্চিত না হত । তৃণমূল থেকে যথেষ্ট দূরত্ব তৈরি করার পরেও দুই হাজার ষোলোর বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক আগে মাথা নিচু করেই দলে ফিরে এসেছিলেন মুকুল রায় । কারণ স্বীয় রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা থেকেই এই ঝানু নেতা বুঝে গিয়েছিলেন , এই যাত্রায় মমতার বিদায়ের কোনও সম্ভাবনা নেই ।
তৃণমূলে থেকে শুভেন্দু অধিকারীর প্রাপ্তিযোগ যে নেহাত সামান্য তেমন নয় । কিন্তু জীবনে চাওয়া পাওয়ার তো সীমা নেই । সবাই স্বাধীনতা চায় এবং আরও বড় হতে চায় । শুভেন্দু অধিকারী হিসেব কষে দেখেছেন এখন তৃণমূলে থেকে যতটা বড় হয়েছি তার থেকেও অনেক বড় হওয়ার সুযোগ আছে তৃণমূল ত্যাগ করলে । তৃণমূলের অনেকের ভেতরেই এই বাসনাটা সুপ্ত আছে । কিন্তু শুভেন্দুর প্লাস পয়েন্ট তাঁর শুধু সাধ নয় সাধ্যও আছে । জনপ্রিয়তায় নিঃসন্দেহে তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নন কিন্তু তিনি তৃণমূলের বর্তমান সেকেন্ড ইন কমান্ডের মতো বায়ু সর্বস্ব বেলুনও নয় । শুভেন্দু অপেক্ষায় ছিলেন । জল মেপেছেন দীর্ঘদিন । এখন হাওয়া অনুকূল বুঝেই পাল তুলে দিয়েছেন । শুভেন্দু অধিকারী এখনও বিজেপির ঘাটে নিজের তরী ভেড়ান নি । কিন্তু তরী যেই দিকে ভেসে চলেছে তাতে ধারণা হওয়া স্বাভাবিক আপাতত বিজেপির ঘাটেই তিনি নোঙর করতে চলেছেন ।
এই সম্পর্ক এখন অতীত |