শক্তিগড়ে অনুব্রত মণ্ডল ও পুলিশ কর্মীদের খাবারের বিল পর্যন্ত মিটিয়েছেন বাইরের একজন! এর নাম নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয়?
কলকাতা: মঙ্গলবার জোকার ইএসআই হাসপাতালে তিন ঘণ্টা ধরে শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয় অনুব্রত মণ্ডলের। চিকিৎসকেরা অনুব্রতের শরীরে তেমন কোনও জটিল অসুখ খুঁজে পান নি, যার কারণে দিল্লি গেলে তাঁর কোনও বিপদ হতে পারে। ইএসআই-এর চিকিৎসকেরা ফিট সার্টিফিকেট দেওয়া মাত্রই হাসপাতাল চত্বরেই অনুব্রত মণ্ডলেকে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট-এর আধিকারিকদের কাছে হস্তান্তর করেন আসানসোল সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ। সোমবার আসানসোলের বিশেষ সিবিআই আদালতের তেমনই নির্দেশ ছিল।
এরপর অনুব্রতকে গাড়িতে তুলে দমদম বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা দেন ইডির আধিকারিকেরা। এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে উড়িয়ে কেষ্টকে দিল্লি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। বুধবার গরু পাচার মামলায় ধৃত বীরভূম জেলা তৃণমূলের সভাপতিকে দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউ আদালতে তুলবে ইডি। আদালতের নির্দেশ মেনে মঙ্গলবার সকালে অনুব্রত মণ্ডলকে বের করে এনে কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা দেন আসানসোল সংশোধনাগারের আধিকারিকেরা। অনুব্রতের নিরাপত্তায় ছিল আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেটের পুলিশ। দোলের দিনই বিরসবদনে কেষ্টকে দিল্লি যাত্রা করতে হল। অন্যান্য বছর দোলের দিন সকাল থেকেই বোলপুরের বাড়িতে দলের কর্মী-সমর্থক ও অনুগামীদের নিয়ে উৎসবে মাতোয়ারা থাকতেন অনুব্রত। এই বছর অনেক চেষ্টা করেও দিল্লিযাত্রা এড়াতে পারলেন না কেষ্টদা, এই সেদিনও যাঁর কথায় উঠত -বসত বীরভূম জেলা প্রশাসন।
তবে অনুব্রতকে নিয়ে আসানসোল থেকে কলকাতায় আসার পথে এমন ঘটনা ঘটল, যা পুলিশি নিরাপত্তা নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। প্রাতরাশের জন্য বর্ধমানের শক্তিগড়ে থামে পুলিশের কনভয়। অনুব্রতকে নিয়ে একটি রেস্তোরাঁয় ঢোকেন পুলিশকর্মীরা। গাড়ি থেকে নেমে ভেতরে ঢোকেন আসানসোল সংশোধনাগারের আধিকারিকেরাও। অনুব্রত কচুরি, ছোলার ডাল, ল্যাংচা ও রাজভোগ দিয়ে জলযোগ সারেন। এই সময় অনুব্রতের ধারেকাছে বাইরের কারও থাকার কথা নয়। কিন্তু রেস্তোরাঁর ভেতরে যে টেবিলে বসে অনুব্রত মণ্ডল প্রাতরাশ সারছিলেন, আরও তিনজনকে সেই টেবিলে বসে কচুরি-ছোলার ডাল খেতে দেখেন সংবাদমাধ্যমের কর্মীরা। ‘সিভিল ড্রেসে’ থাকা এরা কেউই পুলিশ নন। তবে অনুব্রতকে ঘিরে এই তিনজন কারা?
সূত্র মারফত সংবাদ মাধ্যম যা জেনেছে, এদের একজন কৃপাময় ঘোষ। কেষ্টদার ছায়াসঙ্গী বলে বোলপুরে কৃপাময়ের পরিচিতি আছে। আরেক জন তুফান মিদ্দা। তুফান অনুব্রত কন্যা সুকন্যার গাড়িচালক। সাদা পোশাকে থাকা তৃতীয় ব্যক্তি পরে নিজেকে আসানসোল সংশোধনাগারের কর্মী বলে দাবি করেন বলে জানা গেছে। অনুব্রতের প্রাতরাশ সারতে ৩৫ মিনিট সময় লাগে। আর এই পুরো সময়টাই অনুব্রতকে ঘিরে বসে থাকেন তিনজন। শক্তিগড়ের রেস্তোরাঁয় জলখাবারের বিল হয়েছে ৯৯৫ টাকা। অনুব্রত মণ্ডলের নিরাপত্তায় মোতায়েন সকল পুলিশ কর্মী, কনভয়ে যুক্ত প্রতিটি গাড়ির চালক এবং সঙ্গে সংশোধনাগারের প্রতিনিধিরাও প্রাতরাশ সারেন। পুরো টাকাটাই নাকি মিটিয়েছেন কৃপাময় ঘোষ।
অনুব্রত মণ্ডলকে আসানসোল সংশোধনাগার থেকে কলকাতায় আনা নিয়ে একটা টানাপোড়েন তৈরি হয়েছিল। সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষ না আসানসোল পুলিশ নাকি ইডি- কে অনুব্রতকে কলকাতায় আনবে, তা নিয়ে টানাটানি শুরু হয়েছিল। পরে আসানসোলের বিশেষ সিবিআই আদালতের নির্দেশে জটিলতার নিরসন হয়। আদালতের নির্দেশ ছিল সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষ অনুব্রত মণ্ডলকে কলকাতায় ইএসআই-এর হাসপাতালে পৌঁছে দেবেন। আর যাত্রাপথে অনুব্রতের নিরাপত্তার যাবতীয় বন্দোবস্ত করবে আসানসোলের পুলিশ। কিন্তু শক্তিগড়ে অনুব্রতকে ঘিরে থাকা পুলিশের নিরাপত্তা বলয়ের ভেতরে বাইরের লোক ঢুকল কীভাবে? ৩৫ মিনিট অনুব্রতের সঙ্গে ছিল বাইরের তিনজন। আবার এদের মধ্যে কৃপাময় বলে একজন খাবারের বিল মেটান! কর্তব্যরত অবস্থায় থাকা পুলিশকর্মীদের খাবারের বিল বাইরের কেউ মেটাবে কেন? পুলিশের হেফাজতে থাকা কোনও ব্যক্তির খাবারের টাকাই বা বাইরের লোক দেবে কেন? এই ঘটনায় স্পষ্টতই আইন ভাঙা হয়েছে বলেই মনে করছেন প্রাক্তন পুলিশ ও কারা আধিকারিকেরা।
এই ঘটনায় পুলিশের দেওয়া নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কীভাবে অনুব্রত মণ্ডলের মতো একজন হাই প্রোফাইল ধৃতের কাছ তিনজন বাইরের মানুষকে ঢুকতে দেওয়া হল? কোনও ঘটনা ঘটে গেলে কে দায় নিত? যাই হোক, অনুব্রত মণ্ডলকে নিয়ে এখন দমদম বিমানবন্দরে অবস্থান করছেন ইডির আধিকারিকেরা। সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিট নাগাদ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে অনুব্রতকে চাপিয়ে দিল্লি রওনা দেবে ইডির টিম। দিল্লিতে নামার পর রাতেই অনুব্রত মণ্ডলের আরেক দফা স্বাস্থ্য পরীক্ষা হবে রামমনোহর লোহিয়া হাসপাতালে। বুধবার সকালে তাঁকে আদালতে তুলবে ইডি।
Profile Photo Source- Collected.