আফগানিস্তানে এখন তালিবানের শত্রু আইসিস। নামাজের মধ্যেও পড়ছে বোমা। মরছে শিশু।
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: যোহরের নামাজ শেষ করে সবে উঠেছেন শিক্ষক ও পড়ুয়ারা। আর ঠিক তখনই জোরালো বিস্ফোরণে কেঁপে উঠল গোটা মাদ্রাসা। বোমা হামলায় ঘটনাস্থলেই দেহ ছিন্নভিন্ন হয়ে মৃত্যু কমপক্ষে ১৬ জনের। যাদের অধিকাংশই শিশু। আফগানিস্তানের সমঙ্গন প্রদেশের রাজধানী আয়বাক শহরের একটি মাদ্রাসায় এই বোমা হামলার ঘটনা ঘটেছে বুধবার স্থানীয় সময় দুপুর ১২ টা ৪৫ মিনিট নাগাদ। বিস্ফোরণে আরও ২০ জন আহত বলে প্রদেশটির তালিবান শাসিত প্রশাসনের মুখপাত্র ইমদাদুল্লাহ মুহাজির জানিয়েছেন। আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল থেকে ২০০ কিলোমিটার উত্তরে আয়মান শহর।
ঘটনার দায়িত্ব এখনও কোনও সংগঠন স্বীকার করে নি। মাদ্রাসায় হামলার নেপথ্যে কারা আছে, জানতে তদন্ত শুরু করেছে তালিবানের গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক ও নিরাপত্তা বাহিনী। তালিবান সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের মুখপাত্র আব্দুল নাফি তাকোর সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিদের জানিয়েছেন, ” এই অমার্জনীয় অপরাধ যারা ঘটিয়েছে, তাদের ছাড়া হবে না। বিস্ফোরণের পেছনে কোন গোষ্ঠীর হাত আছে, তা খুঁজে বের করতে গোয়েন্দা বিভাগকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জড়িতদের ধরে এনে শীঘ্রই বিচারের জন্য তোলা হবে।” তবে মাদ্রাসায় বিস্ফোরণের পেছনে আইসিস- এর একটি গোষ্ঠীর হাত থাকার সম্ভাবনাই জোরালো বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক মহল।
গত বছর অগাস্টে নির্বাচিত সরকারকে কাবুল থেকে উৎখাত করে বিশ বছর পর আফগানিস্তানের ক্ষমতা ফের হাতে নেয় তালিবান। মার্কিন সেনা আফগানিস্তানে মোতায়েন থাকার পরেও একের পর এক প্রদেশ জয় করতে করতে এক সময় কাবুলের দোর গোড়ায় এসে পৌঁছায় তালিবান বাহিনী। তালিবানের কাবুল দখল যখন প্রায় নিশ্চিত, তখনই আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয় হোয়াইট হাউস। নির্ধারিত সময়ের আগেই কাবুল ছাড়ে মার্কিন সেনা। তার আগেই অবশ্য রাজধানী দখল করে নেয় তালিবান বাহিনী।
কাবুলে সরকার গঠনের পর আফগানিস্তানকে ইসলামিক রাষ্ট্রে পরিণত করে তালিবান। সেই সঙ্গে জারি হয় শরিয়া আইন। তবে তালিবান আফগানিস্তানে সরকার গঠন করার পরেও যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশটিতে শান্তি আসে নি। সাম্প্রতিক সময়ে আফগানিস্তানে হিংসাত্মক কার্যকলাপ উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে। কয়েকটি হামলা ও নাশকতার দায় আইসিস-এর একটি গোষ্ঠী স্বীকার করেছে। ইসলাম কায়েমের প্রশ্নে আইসিস তালিবান থেকেও কয়েক কাঠি উপরে। ইসলামিক স্টেট অফ খোরাসান প্রভিন্স বা আইসিস-কেপি নাম দিয়ে আফগানিস্তানে তালিবানের সঙ্গে টক্কর দিচ্ছে তারা। হাজারা সহ কয়েকটি সংখ্যালঘু উপজাতি গোষ্ঠীর ধর্মীয় উপাসনালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি নিশানা করেছে আইসিস-কেপি।
কাবুলে সরকার চালালেও আফগানিস্তানের সব এলাকায় সমান নিয়ন্ত্রণ নেই তালিবানের। তালিবান ক্ষমতায় আসার পর মোট ১৩ টি হামলার দায় স্বীকার করেছে আইসিস-কেপি। এই সব হামলার ঘটনায় কমপক্ষে ৭০০ মানুষ হতাহত হয়েছে বলে জানা গেছে। একদিকে অনাহার-অপুষ্টির কবলে আফগানিস্তানের প্রায় ৩৪ শতাংশ মানুষ। তীব্র শীতে খাদ্যাভাব আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা। অন্যদিকে জঙ্গি হামলা অব্যাহত। আফগানিস্তানের মানুষের দুর্ভোগ লাঘবের ক্ষীণ কোনও সম্ভাবনাও দেখছেন না কেউ।
Feature Image is Representational. Photo Credit- IQNA.