রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে মমতার উৎসাহে ইতিমধ্যেই ভাঁটা পড়েছে বলে মনে হচ্ছে।
ডেস্ক রিপোর্ট : রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের দিন ঘোষণা হতেই তেড়েফুঁড়ে ময়দানে নেমে পড়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতার উদ্দেশ্য ছিল- বিরোধীরা সবাই মিলে সর্বসম্মত একজন প্রার্থী দাঁড় করিয়ে জোর টক্কর দেবে বিজেপিকে। নির্বাচন কমিশন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের দিন ঘোষণার সাথে সাথেই দিল্লির কনস্টিটিউশন ক্লাবে গিয়ে তড়িঘড়ি বিরোধী দলগুলিকে নিয়ে জমকালো বৈঠকও সেরে আসেন মমতা। কিন্তু সেই বৈঠকের সপ্তাহ না ঘুরতেই বিরোধী শিবিরকে দেখে হতোদ্যম বলে মনে হচ্ছে। বিরোধী শিবিরের রকমসকম বুঝতে পেরে ইতিমধ্যেই গা ছাড়া মনোভাব নিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমোও।
‘থ্যাঙ্ক ইউ’ কিন্তু প্রার্থী হব না হে!
ইলেক্টোরাল কলেজের অঙ্ক যা দেখাচ্ছে তাতে বিরোধী প্রার্থীর রাইসিনা হিলে পৌঁছানোর কোনও সম্ভাবনাই নেই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনেক হেভিওয়েটকেই প্রার্থী হওয়ার জন্য চেপে ধরেছিলেন। কিন্তু মমতাকে ‘থ্যাঙ্ক ইউ’ জানিয়ে ফস্কে গেছেন সবাই। হয়তো হারা ম্যাচে খেলতে আগ্রহ নেই কারোরই। সবার আগে লিস্ট থেকে নাম কাটিয়েছেন এনসিপি নেতা শরদ পাওয়ার। শরদ শুধু মহারাষ্ট্রেরই নন জাতীয় রাজনীতিরও অন্যতম মহীরুহ। মোদীর সঙ্গেও ব্যক্তিগত ভাবসাব যথেষ্টই মজবুত শরদের। শেষ বয়সে জেনেশুনে ‘হেরো’ হতে চান নি এই প্রবীণ নেতা। পাওয়ার পিছলে যেতেই আরও দু’জনের নাম নিয়ে বিরোধী শিবিরে আলোচনা শুরু হয়ে যায়। একজন পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন রাজ্যপাল গান্ধী পৌত্র গোপালকৃষ্ণ গান্ধী। আরেকজন জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ফারুক আবদুল্লা।
দু’দিন আগেই প্রার্থী হিসেবে তাঁর নাম বিবেচনা করায় মমতাকে বহুত বহুত বাধাই জানিয়ে দেশের রাষ্ট্রপতি হওয়ার দৌড় থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন ফারুক। বাকি ছিল গোপালকৃষ্ণ গান্ধী। শরদ পাওয়ারের পরে তাঁকে নিয়েই সবথেকে বেশি আগ্রহ ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। দিন কতক ভাবনা চিন্তা করে সোমবার রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাব সবিনয়ে প্রত্যাখ্যান করেছেন গোপালকৃষ্ণও। মিষ্টভাষী গোপালকৃষ্ণ জানিয়েছেন, তাঁর চেয়েও ভাল কাউকে খুঁজে প্রার্থী করুক বিরোধীরা। শরদ পাওয়ার, গোপালকৃষ্ণ এবং ফারুক আবদুল্লা- দেখা যাচ্ছে প্রত্যেকেই রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসেবে তাঁদের নাম বিবেচনা করায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞ কিন্তু ভোটে দাঁড়াতে প্রবল অনিচ্ছুক।
বৈঠকের ঢক্কানিনাদই সার
সব মিলিয়ে দেশের রাজধানীর বুকে কনস্টিটিউশন ক্লাবে এত ঢক্কানিনাদ সহযোগে অনুষ্ঠিত মমতার ডাকা বিরোধী দলীয় বৈঠক যে নিষ্ফলা হতে বসেছে সেই বিষয়ে আর কোনও সন্দেহই নেই রাজনৈতিক মহলের। মমতার ডাকা বৈঠক নিয়ে প্রথম থেকেই বিশেষ কোনও আগ্রহ ছিল না কংগ্রেসের। মুখ রক্ষার খাতিরে সোনিয়া গান্ধী দু’জন প্রতিনিধি বৈঠকে পাঠিয়েছিলেন বৈকি কিন্তু রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে খুব সঙ্গত কারণেই কোনও উৎসাহ নেই কংগ্রেসের। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী নিয়ে আলোচনা করতে দিল্লিতে মঙ্গলবার আবার বৈঠকে বসতে চলেছে বিরোধীরা। সেই বৈঠকের আমন্ত্রণপত্রে শরদ পাওয়ারের নাম। পাওয়ারের আমন্ত্রণপত্র পড়েই নাকি রুষ্ট মমতা। চিঠির ভাষা নিয়েই আপত্তি তৃণমূল সুপ্রিমোর। অতএব নিয়ম রক্ষার জন্য ভাইপো অভিষেককে বৈঠকে পাঠাচ্ছেন মমতা। বোঝাই যাচ্ছে, মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যেই রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে যাবতীয় আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী।
শিবসেনার খোঁচা
রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী এখনও ঘোষণা করে নি এনডিএ। কিন্তু প্রার্থী বাছাই নিয়ে বিরোধী শিবিরের গাছাড়া ভাব দেখে নানা প্রশ্ন তুলতে শুরু করে দিয়েছে রাজনৈতিক মহল। শিবসেনা প্রধান উদ্ধব থ্যাকারে তো প্রশ্নই তুলে দিয়েছেন- রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে সর্বসম্মত প্রার্থী বাছাই নিয়েই যদি বিরোধী শিবিরের এমন ছন্নছাড়া দশা হয়, তবে দেড় বছর পর যখন প্রধানমন্ত্রী পদ নিয়ে লড়াই শুরু হবে, তখন তারা মোদীর সঙ্গে টক্কর দেবেন কীভাবে?
Feature image is representational.