সোমবার সমীক্ষা চালানোর শেষ দিনে জ্ঞানবাপী মসজিদ চত্বরের কুয়ো থেকে একটি শিবলিঙ্গ উদ্ধার হয়েছে। জায়গাটা নামাজের আগে উজু করার স্থান হিসেবে ব্যবহৃত।
বারাণসী : হিন্দু জীবনদর্শনের প্রাণকেন্দ্র বারাণসীর জ্ঞানবাপী মসজিদের পুরাতাত্ত্বিক সমীক্ষার দিকে এখন গোটা দেশের নজর। কাশী বিশ্বেশ্বর মন্দির চত্বরেই অবস্থিত জ্ঞানবাপী মসজিদ নিয়ে মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই। এবং অবস্থানগত কারণে তা থাকাটাই স্বাভাবিক। কাশীধামে বিশ্বেশ্বর মন্দিরের গা ঘেঁষে মসজিদ কেন? এই প্রশ্ন তোলা এবং তার সদুত্তর পাওয়ার অধিকার শুধু হিন্দু ধর্মাবলম্বীদেরই নয় ইতিহাসের ছাত্র মাত্রেরই আছে।
দু’হাজার বছরের প্রাচীন মন্দিরের পাশে ৩৫৮ বছরের পুরোনো মসজিদ কেন?
এটা কোনও দাবি নয় বরং ঐতিহাসিক ঘটনা যে, ১৬৬৪ খ্রিস্টাব্দে মোগল সম্রাট অওরঙ্গজেব কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের একাংশ ধ্বংস করে সেখানে মসজিদ গড়ে তোলেন। মা জাহ্নবীতীরে অবস্থিত কাশী নগরীকে বলা হয় বিশ্বের প্রাচীনতম জীবিত নগরী। বারাণসী প্রাচীন ভারতীয় ধর্ম, সংস্কৃতি ও আধ্যাত্ম দর্শনের প্রাণকেন্দ্র। বারাণসীর আরেক নাম মন্দির নগরী। কাশী বিশ্বনাথ মন্দির দুই হাজার বছরেরও বেশি প্রাচীন। হিন্দুদের বিশ্বাস, দেবাদিদেব মহাদেবের ত্রিশূলের উপর কাশী দাঁড়িয়ে আছে এবং এখানে প্রাণত্যাগ করলে মোক্ষ নিশ্চিত। সেই কাশীতে দুই হাজার বছরের প্রাচীন ঐতিহাসিক মন্দিরের পাশে মাত্র ৩৫৮ বছরের পুরোনো মসজিদ! কীভাবে এল? রাজশক্তির বলপ্রয়োগ ছাড়াই কি নিজেদের পুণ্যভূমিতে পীঠস্থানের একেবারে পাশেই যেচে ভিন্ন ধর্মের উপাসনালয় নির্মাণে সম্মতি দিয়েছিল হিন্দুরা? উত্তরটা সকলের জানা। এই দেশের অজস্র হিন্দু মন্দির জোর করে ভেঙে দিয়ে মসজিদে রূপান্তরিত করা হয়েছিল সুলতানি ও মোগল যুগে। কাশী বিশ্বনাথ মন্দির চত্বরে স্বাভাবিকভাবে মসজিদ গড়ে ওঠার কোনও ঐতিহাসিক প্রেক্ষিত থাকতেই পারে না, যদি না গায়ের জোর খাটিয়ে সেটা নির্মাণ করা হয়। এবং সম্রাট আওরঙ্গজেব সেটাই করেছিলেন।
আদালতের নির্দেশে পুরাতাত্ত্বিক সমীক্ষার কাজ শেষ
এখন জ্ঞানবাপী মসজিদ ফেরত চাচ্ছে হিন্দুত্ববাদী একাধিক সংগঠন। এই নিয়ে আদালতেও মামলা গড়িয়েছে। গত বছরের এপ্রিলেই জ্ঞানবাপী মসজিদ চত্বরে আর্কিয়োলজিকাল সার্ভে অব ইন্ডিয়াকে সমীক্ষার নির্দেশ দেয় বারাণসী জেলা আদালত। বছর পেরিয়ে সেই সমীক্ষার কাজ শুরু হয়েছে শনিবার। সোমবার বেলা শেষে সেই সমীক্ষার কাজ সমাপ্ত হয়েছে বলে এএসআই সূত্রে জানা গেছে। কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে হিন্দু ও মুসলমান-দুই ধর্মের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে সমীক্ষা চালান এএসআই-এর পুরাতত্ত্ববিদেরা। আদালতের নির্দেশে গোটা কার্যক্রমের ভিডিওগ্রাফি করা হয়েছে।
জ্ঞানবাপী থেকে শিবলিঙ্গ উদ্ধার!
সোমবার সমীক্ষা চালানোর শেষ দিনে জ্ঞানবাপী মসজিদ চত্বরের কুয়ো থেকে একটি শিবলিঙ্গ উদ্ধার হয়েছে। জায়গাটা নামাজের আগে উজু করার স্থান হিসেবে ব্যবহৃত। শিবলিঙ্গটি দৈর্ঘ্যে ১২ ফুট এবং এর ব্যাস আট ইঞ্চি। এ’দিনই শিবলিঙ্গের সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন হিন্দুপক্ষের প্রতিনিধিরা। বারাণসীর দেওয়ানী আদালত শিবলিঙ্গটি নিরাপদে সংরক্ষণ করার নির্দেশ দিয়েছে বলেও জানা গেছে। জ্ঞানবাপী মসজিদের পশ্চিম দিকের দেওয়াল বরাবর মন্দিরের ধ্বংসাবশেষের চিহ্ন আজও বিদ্যমান। এবং সমীক্ষা চলাকালে পুরাতাত্ত্বিকদের তা চোখ এড়ায় নি বলে হিন্দুপক্ষের দুই আইনজীবী হরিশংকর জৈন ও বিষ্ণু জৈন সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের জানিয়েছেন।
শৃঙ্গার গৌরীর বিগ্রহ পূজার প্রমাণ মিলছে বলে দাবি
৩৫৮ বছর ধরে যা জ্ঞানবাপী মসজিদ নামে পরিচিত সেখানে আগে শৃঙ্গার গৌরীর বিগ্রহ পূজিতা হতেন বলে হিন্দু সম্প্রদায়ের দাবি। এই সমীক্ষায় মসজিদের অভ্যন্তরে শৃঙ্গার গৌরীর বিগ্রহ থাকার প্রমাণ মিলেছে- এমনটাই জানাচ্ছেন হিন্দুপক্ষের প্রতিনিধিরা। একাধিক হিন্দুত্ববাদী সংগঠন ইতিমধ্যেই এই দাবি জোরালো করতে শুরু করেছে যে, জ্ঞানবাপী শৃঙ্গার গৌরী চত্বরে পূজা করার অনুমতি দিতে হবে। নিজেদের দাবির যথার্থতা প্রমাণ করতেই জ্ঞানবাপীতে এএসআই-এর পর্যবেক্ষণের দাবিতে আদালতে গিয়েছিল হিন্দুরা। জ্ঞানবাপী মসজিদ কমিটির ( আঞ্জুমান ইন্তেজামিয়া মসজিদ ) যদিও দাবি মসজিদের পশ্চিম দেওয়ালের বাইরে শৃঙ্গার গৌরীর বিগ্রহের অবস্থান।
আদালতের নির্দেশে শিবলিঙ্গ উদ্ধারস্থল সিল
ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের তিনদিনের জ্ঞানবাপী সমীক্ষা শেষ। সমীক্ষার কাজ নির্বিঘ্ন করতে অভূতপূর্ব নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছিল যোগী প্রশাসন। সমীক্ষা শেষ হওয়ার পরেই শিবলিঙ্গ উদ্ধারের স্থানটি সিল করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে স্থানীয় আদালত। সেখানে জনসাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে বারাণসী জেলা প্রশাসন। মঙ্গলবার আদালতে সমীক্ষা রিপোর্ট জমা পড়ার কথা। ওইদিন সুপ্রিম কোর্টেও এই নিয়ে একটা শুনানি আছে।
Photo- collected.