রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির সরকারের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত জানাতে কেন্দ্রকে তিনমাস সময় দিয়েছে দেশের শীর্ষ আদালত।
ডেস্ক রিপোর্ট : ভারতের ছটি রাজ্য এবং তিনটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে হিন্দুরা সংখ্যালঘু। এই নয় রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে হিন্দুদের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মর্যাদা দেওয়ার দাবি পুনর্বিবেচনা করার আশ্বাস দিল কেন্দ্রীয় সরকার। সোমবার সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা দিয়ে বিষয়টি জানিয়েছে কেন্দ্র। দীর্ঘদিন ধরেই এই সংক্রান্ত মামলা ঝুলছে আদালতে।
রাজ্য ওয়াড়ি জনবিন্যাস অনুযায়ী সংখ্যালঘু স্বীকৃতির দাবি
সুপ্রিমকোর্টের সামনে দাবিটি প্রথম রাখেন দিল্লির বিজেপি নেতা তথা আইনজীবী অশ্বিনীকুমার উপাধ্যায়।কেন্দ্রীয়ভাবে নয় বরং রাজ্য ওয়াড়ি জনবিন্যাসের ভিত্তিতেই সংখ্যালঘুদের মর্যাদা ঠিক করুক সরকার- আদালতের কাছে এই ছিল আর্জি অশ্বিনী উপাধ্যায়ের। এর আগে অবশ্য এই সংক্রান্ত এক গুচ্ছ মামলায় হিন্দুদের সংখ্যালঘু মর্যাদা দেওয়ার দায় নিজের ঘাড় থেকে ঝেড়ে দিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। সোমবার যদিও আগের হলফনামা থেকে সরে এসে নতুন করে হলফনামা দিয়ে বিষয়টি পুনর্বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছে মোদী সরকার।
দেশের যেই ৯ রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে হিন্দুরা সংখ্যালঘু
দেশে ২০১১-র পর আর জনগণনা হয় নি। অতিমারির কারণে একুশে সেনসাসের কাজ স্থগিত হয়ে যায়। এগারো বছর আগের জনগণনা অনুযায়ী এই মুহুর্তে হিন্দুর সংখ্যা মণিপুরে ৪১.২৯ শতাংশ, পাঞ্জাবে ৩৮.৪৯ শতাংশ, অরুণাচল প্রদেশে ২৯ শতাংশ, মেঘালয়ে ১১.৫২ শতাংশ,নাগাল্যান্ডে ৮.৭৪ এবং মিজোরামে মাত্র ২.৭৫ শতাংশ। ২০১৯-এ জম্মু ও কাশ্মীরের রাজ্য তকমা ঘুচিয়ে দিয়েছে কেন্দ্র। এই মুহুর্তে কেন্দ্রীয় শাসনাধীন জম্মু-কাশ্মীরে হিন্দুর সংখ্যা চার শতাংশ এবং লাদাখে এক শতাংশ। কেন্দ্র শাসিত লাক্ষাদ্বীপে হিন্দুর সংখ্যা মাত্র ২.৭৭ শতাংশ। ভারতে সংখ্যালঘুর স্বীকৃতি পায় মুসলমান, খ্রিস্টান, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন এবং পার্সি- এই ছয়টি ধর্মীয় সম্প্রদায়। এই ছয় ধর্মীয় জনগোষ্ঠীকে সংখ্যালঘুর স্বীকৃতি দিয়েছে ন্যাশনাল কমিশন ফর মাইনোরিটিজ অ্যাক্ট-১৯৯২‘এর ২-সি ধারা। অশ্বিনী উপাধ্যায়ের যুক্তি- দেশের নয়টি এলাকায় তো হিন্দুরাই সংখ্যালঘু। এই সব রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে হিন্দুদের সংখ্যালঘু স্বীকৃতি দিতে কেন্দ্রকে নির্দেশ দিক আদালত- এই দাবি নিয়েই সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছেন অশ্বিনী।
আগের হলফনামা থেকে সরল কেন্দ্র
এই সংক্রান্ত মামলায় গত ২৭ মার্চও সুপ্রিম কোর্টে একটি হলফনামা দেওয়া হয়েছিল কেন্দ্রের তরফে। সেই সময় রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকেই এই দায়িত্ব নিতে বলেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। কেন্দ্র জানিয়েছিল, জাতীয় স্তরে ছয়টি ধর্মীয় সম্প্রদায়কে সংখ্যালঘুর তকমা দেওয়া হলেও চাইলে রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ভেদে এই সংখ্যাটা আরও বাড়তে পারে। যেইসব রাজ্য ও কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলে হিন্দু জনগোষ্ঠীর সংখ্যা কম সেইসব রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের সরকার মনে করলে হিন্দুদের সংখ্যালঘুর স্বীকৃতি দিতেই পারে- এমনই ছিল কেন্দ্রীয় সরকারের বক্তব্য।
যদিও ধর্মীয় ও ভাষাগত কোনও জনগোষ্ঠীকে সংখ্যালঘু হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার অধিকার কেন্দ্রের হাতেই ন্যস্ত করেছে সংবিধান।নতুন হলফনামায় তা স্বীকারও করে নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু তারপরেও দেশের ছয়টি রাজ্য ও তিনটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে হিন্দুদের সংখ্যালঘুর মর্যাদা প্রদান করার আগে সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলির সঙ্গে কথা বলতে চায় কেন্দ্রীয় সরকার। হলফনামায় এমনটাই জানিয়েছেন কেন্দ্রের প্রতিনিধি।
কেন্দ্রের সিদ্ধান্তহীনতায় ক্ষুব্ধ সুপ্রিম কোর্ট
মঙ্গলবারও সুপ্রিম কোর্টে এই মামলার শুনানি চলে। কেন্দ্রীয় সরকারের অবস্থান বদলে কিঞ্চিৎ উষ্মাই প্রকাশ করেছে সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতাকে রীতিমতো বিচারপতিদের ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হয় এজলাসে। এদিন বিচারপতিরা কেন্দ্রীয় সরকারকে বলেন, “আপনারা আপনাদের আগের অবস্থান থেকে ঘুরে গেছেন। আপনাদের কী করা উচিত আপনারা নিজেরাই তা বুঝতে পারেন না। আপনাদের কথাবার্তায় অনিশ্চয়তায় ভরা। আপনারা যদি রাজ্যগুলির সঙ্গে কথা বলতে চান তবে কে ভারত সরকারকে আটকাচ্ছে। দ্বিচারিতা কখনও সমস্যার সমাধান করে না।” হিন্দুদের সংখ্যালঘু স্বীকৃতির বিষয়টি নিয়ে রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের সরকারগুলির সঙ্গে কথা বলার পরেই কেন্দ্রের আদালতে দ্বিতীয় হলফনামা দেওয়া উচিত ছিল বলে মনে করছে সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির সঙ্গে এই নিয়ে কথা শেষ করতে কেন্দ্রীয় সরকারকে তিনমাস সময় দিয়েছে দেশের শীর্ষ আদালত।
Feature image is representational.