সাতবার সিবিআইকে এড়িয়ে যাওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছেন অনুব্রত মন্ডল। কেষ্টকে তাঁর নিরাপত্তার জন্যই সিবিআইয়ের কাছে ধরা দেওয়ার পরামর্শ দিলেন দিলীপ ঘোষ।
বিশেষ প্রতিবেদন : কী মানুষটা কী হয়ে গেল! বোলপুরের বাঘ। মুখ খুললেই হেডলাইন। যেমন মুখে রস তেমনি বিক্রম। বীরভূমে তৃণমূল মানেই অনুব্রত মণ্ডল। জেলার সভাপতি। কিন্তু দাপট রাজ্য নেতার। এই সেদিনও লালবাতি লাগানো গাড়ি চড়ে এসএসকেএম-এ ঢুকেছিলেন। সতেরো দিন পরে উডবার্ন ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে কলকাতায় চিনার পার্কের বাড়িতে ফিরেছেন বটে কিন্তু সেই চেনা কেষ্টদাকে আর কিছুতেই যেন ফিরে পাচ্ছেন না সাংবাদিকেরা।
মিডিয়া জনগণকে শেষ কবে কেষ্টদার বচনামৃত শুনিয়েছে মনে করা যাচ্ছে না। তিনি সত্যিই কেমন আছেন, আমরা কেউই জানি না। যেই শ্রীমুখ থেকে হিট হিট সব বাণী বেরুতো আজ তাঁর সেই মুখ বন্ধ। কবে তিনি আবার স্বাভাবিক হবেন। কবে আবার তাঁর মুখে খই ফুটবে। কবে তিনি আবার স্বারাজ্যে ফিরে গিয়ে স্বরাট হবেন এই নিয়ে বঙ্গজনে জল্পনার শেষ নেই। এদিকে সিবিআই তাঁর পিছু ছাড়ছে না। পরপর পাঁচবার সিবিআইকে কলা দেখিয়ে বহাল তবিয়তেই ছিলেন তিনি। শেষকালে আদালতও যখন পিঠ দেখালো তখন সিবিআই-কে একবার দয়া করে দর্শন দিয়েই দেবেন- এমন একটা হাবভাব নিয়ে বোলপুরের বাসা থেকে কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েও ছিলেন কেষ্টদা। কিন্তু মাহেন্দ্রক্ষণ যখন সমাগত তখন ভোকাট্টা। নিজাম প্যালেসের বদলে দাপুটে নেতা কেষ্টদা গেলেন চিরপরিচিত উডবার্নে। এরপরের গল্প সকলের জানা।
এসএসকেএম-এর উডবার্ন ওয়ার্ডে এই যাত্রায় ১৭ দিন ছিলেন অনুব্রত মণ্ডল। তাঁর অঙ্গে অঙ্গে রোগের খবর
সংবাদ মাধ্যম থেকে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। অথচ যেদিন বাড়ি থেকে নিজাম প্যালেসের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে তিনি এসএসকেএম-এ পৌঁছে গিয়েছিলেন তার দিন পাঁচেক আগেও বিন্ধ্যাচল তুল্য মানুষটাকে স্বমেজাজে দেখেছে জনতা। কী মানুষ কী হয়ে গেল! তবু সিবিআই ছাড়ে না। শুক্কুরবার সন্ধ্যায় ঘরে ফিরলেন। শনিবারেই নোটিশ। নিজাম প্যালেসে এসে দেখা দিয়ে যাও হে সখা। কেষ্টর কী জ্বালা! সিবিআই যেন রাধা। সপ্তমবারও দোঁহে দেখা হইল না। রবিবার ভোট পরবর্তী সন্ত্রাস মামলায় একটি খুনের ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদ করতে সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে অনুব্রত মণ্ডলকে ডেকেছিল সিবিআই। কিন্তু অনুব্রত অনড়। অনুব্রতর আইনজীবী জানিয়েছেন- তাঁর ভারী অসুখ। হাঁটাচলা বন্ধ।
এখন অনুব্রত মণ্ডলের রাজনৈতিক বিরোধীরাও তাঁকে নিয়ে ভীষণ উদগ্রীব- সত্যিই তো মানুষটার হলটা কী! গরু পাচার মামলায় তৃণমূলের সাংসদ দেবকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকেছিল সিবিআই। সেই পাট কবে চুকিয়ে এসে এখন বান্ধবী রুক্মিণীর সঙ্গে চুটিয়ে প্রেম করছেন টলিউডের সুপারস্টার। আর বীরভূমের বীর নেতা কিনা খাবি খাচ্ছেন! তৃণমূলের মুখপাত্র তথা সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ তো সংবাদ মাধ্যমকে বলেই দিয়েছেন- ” আমি এড়ানোয় বিশ্বাস করি না। আমি নিজে সিবিআইকে এড়াই নি। যতবার ডেকেছে হাজির থেকেছি। তবে অনুব্রতর কথা বলতে পারব না।” কুণালের কথা শুনে মনে হয় পারলে তিনি নিজে অনুব্রতকে নিজাম প্যালেসে পৌঁছে দিয়ে আসেন।
অনুব্রত মণ্ডল কি বুঝতে পারছেন না সিবিআইকে তিনি ফাঁকি দিচ্ছেন বটে কিন্তু জনগণের চোখকে নয়। যত হড়কে যাচ্ছেন ততই তাঁর প্রেস্টিজ পাংচার হচ্ছে জন পরিসরে। তাঁকে নিয়ে বদ রসিকতায় সামাজিক মাধ্যম ভরে গেছে। এখন রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে- অনুব্রতর দলও কি আর অনুব্রতর পাশে সেভাবে আছে? বিরোধীরা বাঁকা কথা শোনাতে শুরু করে দিয়েছে। অনুব্রত মণ্ডলের নিরাপত্তা নিয়েই টেনশনে আছেন বিরোধী নেতারা। দিন কয়েক আগেই অনুব্রতকে নিয়ে করা এক বিজেপি বিধায়কের মন্তব্যে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল। সোমবার মুখ খুললেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহসভাপতি দিলীপ ঘোষ। অনুব্রত মণ্ডলকে দিলীপ পরামর্শ দিলেন- ” সিবিআই এড়াবেন না। জেলে গিয়ে ঢুকে পড়ুন। বাইরে থাকলে মেরে দেবে।” দিলীপ ঘোষ আরও বলেন, ” হয়তো উনি অনেক কিছু জানেন। হয়তো জানেন বলেই ওঁকে সিবিআইয়ের কাছে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। হয়তো অনেক বড় নেতার পর্দা ফাঁস করে দিতে পারেন উনি।”
সত্যিই কি অনুব্রত মণ্ডল সিবিআই দফতরে যেতে চান? তিনি যেতে চাইলেও কি তাঁকে যেতে দেওয়া হচ্ছে না? কেউ কি তাঁকে নিজাম প্যালেসে যেতে বাধা দিচ্ছেন? কে তাঁকে বাধা দিচ্ছেন? বীরভূমের একদা দাপুটে নেতা অনুব্রত মণ্ডলকে ঘিরে এখন অনেক প্রশ্ন।
Feature image is representational.