ব্যক্তিগত জীবনে কৃষ্ণকুমার কল্যাণীর সততা প্রশ্নাতীত। সফল উদ্যোগপতি। রাজনীতি থেকে খ্যাতি ও ক্ষমতা ছাড়া তাঁর আর কিছুই উপার্জনের ছিল না।
নিজস্ব সংবাদদাতা :জলপাইগুড়ির তৃণমূল নেতা কৃষ্ণকুমার কল্যাণীর মৃত্যুতে শোক জানিয়ে ট্যুইট করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার গভীর রাতে শহরের একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে কৃষ্ণকুমার কল্যাণীর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল একাত্তর। একুশের বিধানসভা নির্বাচনের কিছুদিন পরেই জেলা তৃণমূল সভাপতির পদ হারান তিনি। দলের রাজ্য কমিটির সাধারণ সম্পাদক করা হলেও তাতে খুব একটা আগ্রহী ছিলেন না কৃষ্ণকুমার কল্যাণী। জেলা সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি পাওয়ার পর অধিকাংশ সময় বাড়িতেই থাকতেন। ইদানিং বেশ কিছুদিন ধরেই স্বাস্থ্য ভাল যাচ্ছিল না। মঙ্গলবার শ্বাসকষ্ট শুরু হলে তাঁকে নার্সিংহোমে ভর্তি করা হলেও শেষ রক্ষা হয় নি। বুধবার চিকিৎসার জন্য বাইরে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু রাতেই সব শেষ।
জলপাইগুড়ির রাজনৈতিক মহলে কিষাণ কল্যাণী নামেই পরিচিত তিনি। অনুগামীদের কিষাণদা। বরাবরই কংগ্রেসী ঘরানার রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন কল্যাণী। প্রণব মুখোপাধ্যায়ের অনুপ্রেরণায় তিনি রাজনীতিতে নামেন বলে শোনা যায়। যদিও কংগ্রেসের ভেতরে সোমেন মিত্র শিবিরের লোক হিসেবেই পরিচয় ছিল তাঁর। এআইসিসির সদস্যতাও লাভ করেছিলেন। ছিলেন প্রদেশ কংগ্রেসের কোষাধ্যক্ষও। দু’হাজার সালে যোগ দেন তৃণমূলে। তিন বছর পর আবার কংগ্রেসে প্রত্যাবর্তন। ২০০৪-এ সোমেন মিত্রের প্রগতিশীল ইন্দিরা কংগ্রেসে যোগদান। এরপর ফের শিবির বদলে তৃণমূলে। রাজনীতির বাইরেও কৃষ্ণকুমার কল্যাণীর আরও একটি বড় পরিচয়- তিনি সফল চা শিল্পপতি। ডুয়ার্স ও অসমে একাধিক চা-বাগান আছে কল্যাণী গ্রুপের।
এগারোতে তৃণমূল কংগ্রেস যখন রাজ্যে ক্ষমতায় আসে তখন দলের জেলা সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন কৃষ্ণকুমার কল্যাণী। সে’বারও তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরপরই পদ হারান কল্যাণী। উনিশের লোকসভা নির্বাচনে জলপাইগুড়ি আসনে জোড়াফুলের ভরাডুবির পর ফের কিষাণ কল্যাণীকে জেলা তৃণমূলের সভাপতি পদে নিয়োগ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একুশের বিধানসভা নির্বাচনে জলপাইগুড়ি জেলায় তৃণমূল ভাল ফল করলেও সভাপতির পদ ধরে রাখতে পারেন নি বর্ষীয়ান নেতা। ব্যক্তিগত জীবনে কৃষ্ণকুমার কল্যাণীর সততা প্রশ্নাতীত। সফল উদ্যোগপতি। রাজনীতি থেকে খ্যাতি ও ক্ষমতা ছাড়া তাঁর আর কিছুই উপার্জনের ছিল না।
কৃষ্ণকুমার কল্যাণীর মৃত্যুর খবর পাওয়া মাত্রই শোক প্রকাশ করে বার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজের ট্যুইটার হ্যান্ডেলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন- “উত্তরবঙ্গের একজন শীর্ষস্থানীয় চা শিল্পপতি কৃষ্ণকুমার কল্যাণীর অকাল মৃত্যুতে আমি গভীর শোক প্রকাশ করছি। আমি তাঁকে ডুয়ার্সে মা মাটি মানুষের একজন নেতৃস্থানীয় মুখ হিসেবেই চিনতাম। তাঁর পরিবার ও অনুগামীদের প্রতি আমার আন্তরিক সমবেদনা রইল।”
Photo source – Facebook.