কিয়েভ ঘিরে জোর লড়াইয়ের মধ্যেই রাশিয়ার দেওয়া আলোচনার প্রস্তাবে রাজি ইউক্রেন - nagariknewz.com

কিয়েভ ঘিরে জোর লড়াইয়ের মধ্যেই রাশিয়ার দেওয়া আলোচনার প্রস্তাবে রাজি ইউক্রেন


শনিবার কিয়েভ ঘিরে জোর লড়াই। অসামরিক জনতা বা পরিকাঠামো নয় ইউক্রেনের সামরিক সক্ষমতা ধ্বংস‌ই অভিযানের লক্ষ্য- দাবি রাশিয়ার। মুখে হম্বিতম্বি করলেও যুদ্ধের পরিণতি ভেবে নরম হচ্ছেন জেলেনস্কি। পুতিনের আলোচনার প্রস্তাবে তারা রাজি বলে জানিয়েছে ইউক্রেন।

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : রাশিয়া ও ইউক্রেনের দাবি পাল্টা দাবির মধ্যেই রাজধানী কিয়েভে তুমুল লড়াই চলছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। শনিবার ভোরে কিয়েভে রুশ বাহিনীর একটি বড়সড় হামলা তারা প্রতিরোধ করেছে বলে ইউক্রেনিয় সেনার দাবি। শনিবার ভোরের আলো ফোটার আগেই রুশ সেনা কিয়েভের দখল নিতে পারে বলে এর আগে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদেমি জেলেনস্কি। কিয়েভের সর্বশেষ পরিস্থিতি এখন‌ও স্পষ্ট না হলেও একটা ব্যাপার পরিস্কার- শেষ রাতে কিয়েভের উপর চাপ প্রবল বাড়িয়েছিল রাশিয়ান বাহিনী। ইউক্রেনের সেনা রুশ হামলা সফলভাবে প্রতিরোধের দাবি করলেও একাধিক সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে, কিয়েভ জুড়ে লড়াই ছড়িয়ে পড়েছে।

রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের দাবি, এখন‌ও পর্যন্ত ইউক্রেনের ২১১টি সামরিক ঘাঁটি সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়েছে তাদের বাহিনী। ইউক্রেনের পাল্টা দাবি-রাশিয়ার ৮০টি ট্যাঙ্ক, ৫১৬টি সাঁজোয়া গাড়ি, সাতটি হেলিকপ্টার, ১০টি যুদ্ধবিমান এবং ২০টি ক্রুজ মিসাইল ধ্বংস করেছে তারা। যদিও দাবির সমর্থনে কোনও প্রমাণ দিতে পারে নি ইউক্রেনিয়ান কর্তৃপক্ষ। কিয়েভের ভিকট্রি অ্যাভিনিউতে রাশিয়ার সেনার একটি জোরালো হামলার কথা শনিবার সকালে স্বীকার করে নিয়েছে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। তবে রুশ ফৌজের আক্রমণ তাদের মিলিটারি প্রতিহত করেছে বলেই ইউক্রেনের দাবি।

কিয়েভের পথে রুশ বাহিনীর সাঁজোয়া বহর। ফটো ক্রেডিট-এপি

কিয়েভের পতন ঠেকাতে সাধারণ নাগরিকদের হাতে অস্ত্র তুলে নিতে আবেদন জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদেমি জেলেনস্কি। যদিও গত ৪৮ ঘন্টায় কিয়েভ থেকে কমপক্ষে ৫০ হাজার মানুষ পালিয়ে গেছে বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে। রুশ বাহিনীর হাতে কিয়েভের পতন আসন্ন বুঝেই অসামরিক জনতা নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাচ্ছেন বলে আন্তর্জাতিক মহল মনে করছে।যুদ্ধ শুরু হ‌ওয়ার পর থেকে এখনও পর্যন্ত সামরিক ও অসামরিক মিলিয়ে ১৩৮ জনের মৃত্যুর কথা সরকারিভাবে স্বীকার করেছে ইউক্রেন।

তবে মুখে‌ শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত রুশ আগ্রাসন প্রতিহত করার কথা বললেও যুদ্ধের চরম পরিণতির কথা ভেবে জেলেনস্কি চিন্তিত বলেই মনে হচ্ছে। শুক্রবার প্রচারিত এক ভিডিও বার্তায় পুতিনকে আলোচনায় বসার আবেদন জানিয়েছিলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট। রাশিয়ার অভিযোগ, বারংবার আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের আবেদন জানানো হলেও তাতে কর্ণপাত করে নি ভোলোদেমি জেলেনস্কি। নিজের বাহিনীকে পুরোদমে অভিযানে নামিয়ে দেওয়ার পরেও শান্তির বার্তা দিতে ভুলেন নি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। রুশ প্রেসিডেন্টের প্রেস সচিব দিমিত্রি পেসকভ এর আগে দাবি করেছেন, ইউক্রেনের সঙ্গে আলোচনায় বসতে বেলারুশের রাজধানী মিনস্কে প্রতিনিধি পাঠাতে প্রস্তুত ছিলেন পুতিন। কিন্তু ইউক্রেন সরকার প্রথমে মিনস্কের পরিবর্তে ওয়ারশতে আলোচনায় বসার কথা বললেও পরে বিষয়টি নিয়ে আর কোনও আগ্রহ দেখায় নি বলে দিমিত্রি পেসকভের অভিযোগ।

আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ বলছেন, ন্যাটোর ভয়ে শেষ মুহুর্তে রাশিয়া সামরিক অভিযান থেকে পিছিয়ে আসবে, এই রকম একটা কিছু ভেবেই সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানের ব্যাপারে অনমনীয় মনোভাব দেখিয়েছিলেন জেলেনস্কি। যদিও শনিবার এক বিবৃতি প্রকাশ করে রাশিয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছে ইউক্রেন। ভোলোদেমি জেলেনস্কির প্রেস সচিব সের্গেই নিকোফোরভ ফেসবুকে এক বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, ”ইউক্রেন সবসময়‌ই শান্তির স্বার্থে সমঝোতা ও যুদ্ধবিরতির জন্য প্রস্তুত। আলোচনার প্রস্তাবে আমাদের তরফে সাড়া না দেওয়ায় অভিযোগ ঠিক নয়। রুশ প্রেসিডেন্টের আলোচনার প্রস্তাবে আমরা গ্রহণ করছি।”

এদিকে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রক থেকে আবার‌ও স্পষ্ট করে জানানো হয়েছে, ইউক্রেনের কোনও অসামরিক পরিকাঠামোকে লক্ষ্যবস্তু করছে না তাদের বাহিনী। ইউক্রেনের কোনও শহর‌ও ধ্বংস করা হচ্ছে না। শুধুমাত্র ইউক্রেনের সামরিক সক্ষমতাকে হ্রাস করাই তাদের লক্ষ্য বলে দাবি করেছে রাশিয়া। রুশ সামরিক অভিযানের কারণে ইউক্রেনের সাধারণ নাগরিকদের কোন‌ও ঝুঁকি নেই বলে আশ্বাস দিয়েছে পুতিন প্রশাসন।

Photo and news sources- Tass and The Moscow Times.


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *