গোয়ায় একই দিনে তৃণমূলে ডবল ধাক্কা। সাধারণ সম্পাদক ইয়াতিশ নায়েকের পাশাপাশি দল ছাড়লেন প্রাক্তন ফুটবলার ডেনজিল ফ্র্যাঙ্কোও
ডেস্ক রিপোর্ট : মাস খানেক আগে অরবিন্দ কেজরিওয়াল পানাজি সফরে এলে সাংবাদিকেরা তাঁকে প্রশ্ন করে ছিলেন- আচ্ছা গোয়াতে তৃণমূলের সম্ভাবনা কতটা? খেঁকিয়ে উঠে কেজরিওয়াল বলেছিলেন – তৃণমূল! গোয়ায় তৃণমূল কোথায়? কেন গোয়ায় তৃণমূল অপ্রাসঙ্গিক, এর ব্যাখ্যা করতে গিয়ে কেজরিওয়াল বলেন, গণতন্ত্রে এইভাবে প্যারাশুট দিয়ে নেমে কিছু করা সম্ভব নয়। জনগণের মন পেতে সংগঠন, আন্দোলন এবং কর্মসূচি চাই। যদিও পরিশ্রম করে জনভিত্তি বাড়ানোর রাস্তায় না গিয়ে অন্য দল ভাঙিয়ে রাতারাতি গোয়া দখলের খোয়াব দেখেছিল তৃণমূল। আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি গোয়ায় ভোট। ভোটের দিন যতই এগিয়ে আসছে গোয়ায় তৃণমূলকে নিয়ে কেজরিওয়ালের ভবিষ্যদ্বাণী যেন ততই মিলে যাচ্ছে।
গোয়ায় তৃণমূলকে পার করার দায়িত্ব অভিষেকের ওপরেই ছেড়ে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পশ্চিমবঙ্গে ভোটের আগে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা যেমন দিল্লি-দমদম ডেলি প্যাসেঞ্জারি করতেন। খানিকটা সেভাবেই কলকাতা-পানাজি যাতায়াত করছেন তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কমান্ড। আজকে কলকাতা থেকে গিয়ে দলের কমিটি গড়ে দিয়ে আসছেন তো কাল যাচ্ছেন প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করতে। এদিকে কংগ্রেস সহ অন্যান্য দল ভাঙিয়ে গোয়ায় রাতারাতি যতটা দ্রুত বেড়ে ছিল ভোটের মুখে ততটাই দ্রুত ছোট হয়ে যাচ্ছে তৃণমূল। বুধবার গোয়ায় তৃণমূল ছাড়লেন দলের সাধারণ সম্পাদক ইয়াতিশ নায়েক। গত ১৮ জানুয়ারি ইয়াতিশকে গোয়া তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদকের পদ দেওয়া হয়। মাত্র আট দিনের মাথায় তিনি ভাগলবা! অভিষেক গোয়া ছাড়ার আগেই তৃণমূলকে ছেড়ে দিয়েছেন ইয়াতিশ নায়েক। পেশায় আইনজীবী এই রাজনীতিক পদত্যাগ পত্রে জানিয়েছেন,দলে থাকার আর কোনও উপযুক্ত কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না তিনি। একই দিনে গোয়ায় তৃণমূল ছেড়েছেন প্রাক্তন ভারতীয় ফুটবলার ডেনজিল ফ্র্যাঙ্কোও। দিন কয়েক আগেই তৃণমূল ছেড়েছেন কার্টোরিম কেন্দ্রের প্রাক্তন বিধায়ক অ্যালেক্সিও লুরেনকো। তৃণমূলে যোগ দেওয়ার আগে তিনি ছিলেন গোয়া কংগ্রেসের কার্যকরী সভাপতি। ডিসেম্বরেই তৃণমূল ছেড়েছেন আরেক প্রাক্তন বিধায়ক লাবু মামলেডর। লুরেনকো ও মামলেডরের মতো ইয়াতিশ নায়েকও কংগ্রেস ত্যাগ করে তৃনমূলে ঢুকে ছিলেন।
এক বছর আগেও এঁদের কেউ তৃণমূলের নাম পর্যন্ত ঠিকভাবে জানতেন কিনা সন্দেহ। একুশের ২ মের আগে স্বয়ং তৃণমূল সুপ্রিমোর মাথাতেও গোয়ায় অশ্বমেধের ঘোড়া পাঠানোর কোনও পরিকল্পনা ছিল না। বিজেপিকে দুরমুশ করে অভাবনীয় সাফল্যের সঙ্গে নবান্নে ফিরতেই মমতার মনে ভারত বিজয়ের স্বপ্ন চাগিয়ে ওঠে। বাংলার বাইরে প্রভাব বিস্তারে ত্রিপুরা-মেঘালয়-অরুণাচল প্রদেশ এবং গোয়ার মতো ছোট রাজ্য গুলিকে টার্গেট করেছে তৃণমূল। শোনা যায় পিকের পরামর্শেই নাকি তৃণমূলের এমন পরিকল্পনা। রাজ্য ছোট হোক আর বড় – তৃণমূলের তরিকা এক। দল ভাঙানো। এর আগে ত্রিপুরায় ঘাঁটি গাড়তে গিয়েও সফল হন নি মমতা। আবার নতুন উদ্যমে নেমেছেন। বহির্বঙ্গে জমি পেতে রাজ্যসভার আসন পর্যন্ত ভিন রাজ্যের নেতাদের বিলিয়ে দিচ্ছে তৃণমূল। সেই সুযোগেই রাজ্যসভার সাংসদ হয়েছেন গোয়ার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লুইজিনহো ফালেইরো, আসামের সুস্মিতা দেব। দু’জনেই কংগ্রেস করতেন।
গোয়ায় কংগ্রেস থেকে লোক ভাঙিয়ে দল গড়ার পর ভোটের মুখে কংগ্রেসের সঙ্গেই জোট গড়ার আগ্রহ দেখায় তৃণমূল। পি চিদম্বরম পত্রপাঠ তৃণমূলের প্রস্তাব নাকচ করায় মুখ পোড়ে অভিষেকের। ডিসেম্বরের গোড়ায় কেজরিওয়ালও একবার গোয়ায় তৃণমূলের সঙ্গে আসন রফার কথা ভেবেছিলেন। কিন্তু পরে গোয়া চষে ঝানু কেজরি বুঝতে পারেন তৃণমূলের ফাঁকা কলসির আওয়াজ বেশি। শেষ পর্যন্ত মহারাষ্ট্রবাদী গোমন্তক পার্টির সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছে তৃণমূল। চল্লিশ আসনের গোয়া বিধানসভায় শেষ পর্যন্ত কটা আসনে প্রার্থী দিতে পারে তৃণমূল সেটাই দেখার। তার চেয়েও বড় কথা ১৪ ফেব্রুয়ারি আসার আগেই আরও কয়জন তৃণমূলের সংশ্রব ত্যাগ করেন।
Photo Credit – Twitter.