বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও ঢাকার ঐতিহাসিক রমনা কালীবাড়ি যেন একসূত্রে গাঁথা। একাত্তরের ২৭ মার্চ রমনা কালীমন্দির গুঁড়িয়ে দিয়েছিল পাক সেনা। ভক্তদের রক্তে ভেসে গিয়েছিল মন্দির চত্বর। পঞ্চাশ বছর পর ঐতিহাসিক মন্দিরটিকে নতুন রূপ দিল ভারত সরকার।
ঢাকা : বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণ জয়ন্তীবর্ষে নতুন রূপ পেল ঢাকার ঐতিহাসিক রমনা কালীবাড়ি। মুক্তিযুদ্ধ আর রমনা কালীবাড়ি যেন একসূত্রে গাঁথা। ১৯৭১-এর ২৫ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাক আর্মির হাতে গ্রেফতার হলেন। ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণা করল বাংলাদেশ। ২৭ মার্চ থেকে বাংলাদেশ জুড়ে অপারেশন সার্চলাইট অভিযান শুরু করে পাক আর্মি। প্রথম দিনই খান সেনাদের রোষ গিয়ে পড়ল ঐতিহাসিক রমনা কালীমন্দিরের উপর। কামানের গোলা মেরে বিরাট মন্দিরটি গুঁড়িয়ে দিল কষাই ইয়াহিয়ার বাহিনী। মন্দির চত্বরেই ছিল মা আনন্দময়ীর আশ্রম। সেটিও বুলডোজার চালিয়ে নিশ্চিহ্ন করে পাকিস্তানের আর্মি। মন্দির চত্বরে আশ্রয় নেওয়া ভক্তদের খুন করা হয় নির্বিচারে। সেনার মেশিনগানের সামনে বুক পেতে দিয়ে ভক্তমন্ডলীকে রক্ষা করতে যান মন্দিরের সেবাইত স্বামী পরমানন্দ গিরি। তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করে পাক হানাদার বাহিনী।
ঢাকা রেসকোর্সের মাঠে রমনা কালীমন্দির আপন মাহাত্ম্য নিয়ে সগৌরবে দাঁড়িয়ে ছিল ১৯৭১-এর ২৬ মার্চ পর্যন্ত। দ্বিতল মন্দিরের চূড়োটি ছিল ১২০ ফুট লম্বা। বহুদূর থেকে ওই চূড়ো নজরে পড়ত। মাঠটির রমনা পার্ক নামেও পরিচিতি ছিল। যদিও পরে একে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান নাম দেওয়া হয়। অনেক কিংবদন্তি ও লোকশ্রুতি জড়িয়ে আছে রমনা কালীবাড়িকে ঘিরে। ৫০০ বছর আগে এখানে প্রথম আখড়া স্থাপন করেন বদ্রীনাথ ধামের যোশীমঠ থেকে প্রত্যাগত সাধক গোপাল গিরি। এর ঠিক ২০০ বছর পরে কালীমন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন সন্ন্যাসী হরিচরণ গিরি।
বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণের ছবিতে দূরে রমনা কালীবাড়ির চূড়োটি দৃশ্যমান। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ পাক জল্লাদদের কবল মুক্ত হয়। বাংলাদেশ স্বাধীন করতে রক্ত দেয় আড়াই হাজারের বেশি ভারতীয় সেনা। স্বাধীনতার পর রমনা কালীবাড়ি আর যথাস্থানে থাকতে দেয় নি শেখ মুজিবের সরকার। এক কিলোমিটার দূরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে মন্দিরটি সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন শেখ মুজিবুর রহমান। কেন তিনি ঐতিহাসিক মন্দিরটি যথাস্থানে রেখে সংস্কারের উদ্যোগ নিলেন না, এই নিয়ে একটা বড় প্রশ্ন রয়ে গেছে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মনে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর দীর্ঘ পঞ্চাশ বছর লাগল ঐতিহাসিক রমনা কালীবাড়ি নতুন করে সাজিয়ে তুলতে। মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণ জয়ন্তীবর্ষকে সামনে রেখে রমনা কালীবাড়ির পুনর্নির্মাণে উদ্যোগ নেয় ভারত সরকার। সাত কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন মন্দিরটি নির্মাণ করা হয়েছে। মন্দির চত্বরে একটি অতিথিশালাও গড়ে তোলা হয়েছে। আগের মন্দিরের অনুকরণে নব নির্মিত মন্দিরেও একটি সুউচ্চ চূড়া স্থাপন করা হয়েছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণ জয়ন্তীবর্ষের প্যারেডে প্রধান অতিথি ছিলেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। শুক্রবার সকালে দেশে ফেরার আগে নবনির্মিত রমনা কালীমন্দিরের দ্বারোদ্ঘাটন করেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। সেই সময় স্ত্রী সবিতা ও কন্যা স্বাতীও রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ছিলেন।
ছবি- সংগৃহীত।