আফগানিস্তানের জনসংখ্যার ৫৫ শতাংশেরও বেশি ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের কবলে পড়তে চলেছে বলে আশঙ্কা। দেশের প্রধানমন্ত্রী বললেন-আমরা কী করব ! আল্লাহরে ডাকো।
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : এই শতাব্দীর দুই দশকের ইতিহাসে ভয়ঙ্করতম খাদ্যাভাবটি ঘটতে চলেছে আফগানিস্তানে । দুই কোটি ২৮ লক্ষ মানুষ,যা দেশটির মোট জনসংখ্যার ৫৫ শতাংশেরও বেশি, নিদারুণ অনাহারের কবলে পড়তে চলেছে বলে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার আশঙ্কা। শীত জাঁকিয়ে পড়ার আগেই আফগানিস্তানের ৮০ শতাংশ এলাকা আজন্মার কবলে । কাবুলে যতদিন পর্যন্ত তালিবান বিরোধী সরকার ছিল, জাতিসংঘ এবং ভারত ও আমেরিকা সহ বিভিন্ন দাতাদেশ বছরভর আফগানিস্তানে খাদ্য কর্মসূচি চালাতো । অগাস্টে কাবুল ফের তালিবানের দখলে যেতেই সাহায্যকারী সংস্থাগুলি পাততাড়ি গোটায় । আফগানিস্তানের শীত বড় ভয়ঙ্কর । তাপমাত্রা মাইনাসের নিচে ২০ ডিগ্রি পর্যন্ত নেমে যায়। একে প্রবল খাদ্যাভাব তায় হাড়হিম ঠান্ডা – আফগানিস্তানের দুর্গম অঞ্চলগুলিতে শীতে মানুষের দুঃখকষ্টের ভয়াবহতা কল্পনা করে বিচলিত আন্তর্জাতিক রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সদস্যরা। যদিও দেশের নাগরিকদের আল্লাহর ওয়াস্তে ছেড়ে দিয়ে কাবুলে তোফা আছেন তালিবান সরকারের মন্ত্রীরা। আফগানিস্তানের তালিবানি সরকারের প্রধানমন্ত্রী মোল্লা মহম্মদ হাসান আখুন্দ তো বলেই দিয়েছেন, ” রিজিকের মালিক আল্লাহ । মুখ যখন দিয়েছেন তখন মুখে খাবারও ঢালবেন আল্লাহই । ” খাবারের জন্য সরকারের কাছে গাঁইগুঁই না করে আল্লাহ তায়ালাকে ডাকতে বলেছেন আখুন্দ।
গত দুই দশক ধরে আফগানিস্তানে সবথেকে বড় খাদ্য সরবরাহকারী দেশ ছিল ভারত । মার্কিন সেনা প্রত্যাহার পর্ব শুরু হতেই আফগানিস্তান জুড়ে তীব্র হয়ে ওঠে গৃহযুদ্ধ । দ্রুত গোটা দেশের উপর নিজেদের নিয়ন্ত্রণ কায়েম করে তালিবান। যুদ্ধের ঠ্যালায় দশ লক্ষের বেশি মানুষ গৃহচ্যুত হয় । চাষাবাদ গোল্লায় যায়। বাইরে থেকে খাদ্য সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। আন্তর্জাতিক ত্রাণ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলি স্বেচ্ছাসেবকদের আফগানিস্তান থেকে সরিয়ে নেয়। আল্লাহর খিদমতগার বলে দাবি করা তালিবানের সৌজন্যেই যে আফগানিস্তানের মানুষ নিদারুণ খাদ্যাভাবে জর্জরিত হচ্ছে , সারা দুনিয়ার সামনে তা স্পষ্ট। তালিবান সরকারের মন্ত্রীদের রসদ জোগায় অভিভাবক পাকিস্তান। কিন্তু আফগানিস্তানের ৩ কোটি ৩০ লক্ষ জনগণের মুখে খাবার দেওয়ার সামর্থ্য নেই দেউলিয়া পাকিস্তানের। দিন শেষে ভরসা ভারত । তাই ভয়াবহ খাদ্য সংকট থেকে বাঁচতে আল্লাহ নয় তলে তলে ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন তালিবানের নেতারা । মানবিক সহায়তা হিসেবে অক্টোবরেই আফগানিস্তানে জরুরী ভিত্তিতে ৫০ হাজার টন গম পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ভারত সরকার। পাকিস্থানের উপর দিয়ে ভারতীয় ত্রাণবহরের যাত্রা নিয়েও মেলা টালবাহানা করে ইমরান খানের সরকার । দু’দিন আগে অবশ্য আফগানিস্তানে ভারতের পাঠানো খাদ্য পৌঁছে দিতে রাজি হয়েছে পাকিস্তান।
ক্ষুধার্ত দেশবাসীকে উপরের আল্লাহ দেখিয়ে দিয়েছেন তালিবান সরকারের প্রধানমন্ত্রী । কিন্তু রূঢ় বাস্তব এটাই যে,আফগানিস্তানের অর্ধেকের বেশি মানুষের পেটে এখন যেই ক্ষুধার আগুন জ্বলছে তা নেভাতে আন্তর্জাতিক সমাজ সদয় হয়ে এগিয়ে না এলে আফগানিস্তানের দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি হবে ইথিওপিয়ার চেয়েও করুণ।
Photo Credit- AFP