মুম্বাই হামলার ষড়যন্ত্র শুধু পাকিস্তানে বসেই করা হয় নি এতে পাকিস্তান ডিপ স্টেটের প্রত্যক্ষ মদত ও সহযোগিতা ছিল। মুম্বাই হামলার তদন্তে পাকিস্তান ভারতকে কোনও কার্যকরী সহযোগিতা করে নি । ভয়াবহতম হামলার মাস্টারমাইন্ডদের শাস্তি দিতে পারে নি ভারত সরকার। এটা আমাদের ব্যর্থতা তো বটেই। একটি প্রতিবেদন-
স্বাধীন ভারতের ৭৪ বছরের ইতিহাসে জঙ্গি নাশকতার অজস্র ঘটনা ঘটেছে। শুধু মুম্বাই মহানগরীকে লক্ষ্যবস্তু করেই একাধিক ভয়াবহ জঙ্গি হামলা ঘটেছে । আমাদের সংসদ ভবন পর্যন্ত পাকিস্তান মদতপুষ্ট জঙ্গিদের হাতে আক্রান্ত হয়েছিল। কিন্তু ২০০৮ এর ২৬ নভেম্বর রাতের মুম্বাই হামলা অতীতের সমস্ত নাশকতাকে ছাপিয়ে গেছে । আমরা জানি না এই ধরণের ভয়ঙ্কর হামলার মুখে জাতি আবার কখনও পড়বে কিনা কিন্তু ভবিষ্যতে যে কোনও মূল্যে এই ধরণের হামলার পুনরাবৃত্তি রোধ করা আমাদের রাষ্ট্র পরিচালকদের ওপর অর্পিত সবথেকে গুরু দায়িত্ব গুলির মধ্যে নিঃসন্দেহে অন্যতম । ভয়াবহতা ও বিপর্যয়ের মাপকাঠিতে ২৬/১১র মুম্বাই হামলার সঙ্গে একমাত্র তুলনীয় আমেরিকায় নাইন-ইলেভেনের টেরর অ্যাটাক ।
কোন ভূখণ্ডে বসে এই হামলার ব্লুপ্রিন্ট তৈরি হয়েছিল আমরা সবাই জানি । কোন জঙ্গি সংগঠন হামলার পেছনে ছিল তাও জানি। হামলাকারী দশজনের মধ্যে নয়জনকে আমাদের নিরাপত্তাবাহিনী গুলি করে মারে । একমাত্র ধৃত আজমল কাসভের বিচারে ফাঁসি হয় । দশজনই ছিল ফিদাইন জঙ্গি । হামলা করে ফিরে যাবে বলে এরা আসে নি। কিন্তু ভারতের প্রাণকেন্দ্র এবং বাণিজ্যিক রাজধানী মুম্বাই মহানগরীকে চারদিনের জন্য একরকম তছনছ করে দিতে পেরেছিল পাকিস্তান থেকে আসা জঙ্গিরা । সবথেকে বড় কথা দেশের বাইরে থেকে পরিচালিত এই ধরণের কোনও হামলার মুখোমুখি হওয়ার জন্য আমাদের সরকার, আমাদের নিরাপত্তা এজেন্সি গুলি , আমার ইন্টেলিজেন্স নেটওয়ার্ক একদমই প্রস্তুত ছিল না। তাই ঘটনার পর প্রশাসনের কিংকর্তব্যবিমূঢ় দশা কাটতেই অনেকটা সময় চলে গিয়েছিল। জঙ্গি সন্ত্রাসীদের হাতে যখন আমাদের নাগরিকেরা মুম্বাইয়ের রেলস্টেশনে , হাসপাতালে , হোটেল এবং কাফেতে পিঁপড়ার মতো মরছিল । হেমন্ত কারকারের মতো আমাদের সুদক্ষ পুলিশ আধিকারিকেরা বেঘোরে খুন হচ্ছিল তখন পাকিস্তানের করাচিতে বসে টিভিতে সেইসব লাইভ দৃশ্য উপভোগ করছিল হামলার মাস্টারমাইন্ডরা । শোনা যায় স্যাটেলাইট নিয়ন্ত্রিত টেলিফোনের মাধ্যমে হামলাকারীদের নির্দেশ পর্যন্ত দিচ্ছিল তারা ।
ভারতীয় অর্থনীতির শিরদাঁড়ায় আঘাত করেছিল লস্কর-ই-তইবার দশ জঙ্গি । সদা প্রাণচঞ্চল মুম্বাই ভয়ে-আতঙ্কে হিমশীতল হয়ে পড়ে ।তাজ প্যালেসের মতো গথিক স্থাপত্যের সুরম্য অট্টালিকা দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকে । যে ভিক্টোরিয়া রেলস্টেশন কখনও ঘুমোয় না, সেই স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম ভেসে যেতে থাকে পাকিস্তানি জঙ্গিদের গুলিবৃষ্টিতে নিহত নিরীহ ভারতবাসীদের রক্তে। হামলাকারী এলইটি’র জঙ্গিরা শুধু পাকিস্তান থেকেই আসে নি পাকিস্তানে বসে হামলার যাবতীয় পরিকল্পনা করেছিল এর মাস্টারমাইন্ডরা । আগ্নেয়াস্ত্র সহ যাবতীয় রসদ সংগ্রহ হয়েছিল পাকিস্তান থেকে । ফিদাইন জঙ্গিদের দীর্ঘ প্রশিক্ষণ হয়েছিল পাকিস্তানের মাটিতে। সবথেকে বড় কথা মুম্বাই হামলা নিছক পাকিস্তান মদতপুষ্ট কোনও জঙ্গি সংগঠনের নিজস্ব অভিযান ছিল না । এটা ছিল পাকিস্তান রাষ্ট্রের সুপরিকল্পিত ভারত বিরোধী ষড়যন্ত্রের একটি,যার সাফল্য ঘটনার ১৩ বছর পরেও আইএসআইয়ের আধিকারিকদের শ্লাঘার কারণ । মুম্বাই হামলার দশ বছর পর পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ মুখ খোলেন। একটি সাক্ষাৎকারে মুম্বাই হামলার পরিকল্পনার সঙ্গে ইসলামাবাদ প্রশাসনের অনেকের জড়িত থাকার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তিনি। আজমল কাসভ , ডেভিড হেডলি এবং জাবিউদ্দিন আনসারিকে জেরা করে মুম্বাই হামলার সঙ্গে পাকিস্তান সরকারের বিভিন্ন উইংসের জড়িত থাকার একাধিক প্রমাণ পেয়েছেন ভারত ও আমেরিকার গোয়েন্দারা। কিন্তু পাকিস্তান সরকার স্বীকার তো দূরের কথা আজ পর্যন্ত মুম্বাই হামলার তদন্ত নিয়ে ভারত সরকারের সঙ্গে কার্যকরী কোনও সহযোগিতাই করে নি। আজমল কাসভ সহ মৃত দশ জঙ্গির লাশ ফিরিয়ে নিতে অস্বীকার করে পাকিস্তান । নিহত নয় জঙ্গির ব্যাপারে তো কোনও তথ্যই দেয় নি আজমল কাসভের পাকিস্তানি পরিচয় অনেক কষ্টে ঢোক গিলতে বাধ্য হয়েছিল ইসলামাবাদ । কারণ স্বীকার না করে আর কোনও উপায় ছিল না।
কুখ্যাত জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তইবার মাথা হাফিজ সাইদ । হাফিজই যে মুম্বাই হামলার মূল পান্ডা সেই বিষয়ে ভারতীয় গোয়েন্দাদের হাতে প্রচুর তথ্য আছে। এই হাফিজ সাইদকে নিয়ে চোর-পুলিশ খেলা পাকিস্তান সরকারের অনেক দিনের অভ্যেস । ভারত সরকার বারংবার হাফিজ সাইদকে প্রত্যর্পণে চাপ দিলেও অগ্রাহ্য করেছে পাকিস্তান । হাফিজ সাইদ যদিও বিচারে সাজা হওয়ার পর এখন পাকিস্তানের জেলে । কিন্তু গত ৭ নভেম্বর হাফিজের ছয় সাগরেদকে ছেড়ে দিয়েছে পাকিস্তানের একটি আদালত , যাদের কয়েকজন মুম্বাই হামলার সঙ্গে জড়িত বলে ভারতের তদন্তকারী সংস্থাগুলির অভিযোগ। এই বছরের এপ্রিল মাসে পাকিস্তান প্রশাসন ঘুপেচুপে চার হাজার জনের নাম জঙ্গি তালিকা থেকে ছেঁটে দিয়েছে বলে নিউইয়র্ক ভিত্তিক সংস্থা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স স্টার্টআপ জানিয়েছে । জঙ্গি তালিকা থেকে বাদ যাওয়াদের মধ্যে এলইটির নেতা ও মুম্বাই হামলার অন্যতম মাস্টারমাইন্ড জাকির ঊর রহমান লকভি সহ আরও কয়েকজনের নাম আছে বলে জানা গেছে। ২৬ নভেম্বরের মুম্বাই হামলা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে আমাদের নিরাপত্তা বেষ্টনীতে কতরকমের ছিদ্র থাকতে পারে। ভয়াবহতম মুম্বাই হামলার ১৩ বছর পরেও মাস্টারমাইন্ডদের বিচারের আওতায় আনতে না পারাটা ভারত সরকারের জন্য যে একটা বড় ব্যর্থতা এই বিষয়েও কোনও সন্দেহের অবকাশ নেই।
Photo Credit- IANS ( feature ) , CNN and Mumbai Mirror.
To read this content in Hindi also click on Select Language.