নাগরিক ডেস্ক : ছটপুজো বা ছট পরব শুরু হয়ে গেছে। উত্তর ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে হিন্দু জনগোষ্ঠীর প্রধান উৎসব ছটপুজো। বিশেষ করে বিহার, ঝাড়খন্ড ও ইউপির হিন্দিভাষী হিন্দুরা মহা ধুমধামের সঙ্গে ছটপুজোয় মেতে ওঠেন। হিন্দু জনগোষ্ঠীর যেকোনও পার্বনের মতো ছটপুজোরও অনেক মাহাত্ম্য এবং তা বহু শাখাপ্রশাখায় পল্লবিত।
ছট অবশ্যই সূর্যের পুজো। শুধু ভারতীয়ই নয় পৃথিবীর আরও অনেক প্রাচীন সভ্যতায় সূর্যই ছিলেন প্রধান উপাস্য। আমাদের পূর্বপুরুষেরা সহজাত অভিজ্ঞতা থেকে এটা উপলব্ধি করেছিলেন যে সূর্যই হচ্ছে পৃথিবীতে প্রাণের উৎস। বৈদিক ঋষিদের কাছে সূর্যই ছিলেন প্রধান উপাস্য। মার্কেন্ডেয় পুরাণে সূর্য মাহাত্ম্যের বিস্তৃত বর্ণনা পাওয়া যায়। ছট শব্দ এসেছে ছয় থেকে। ভক্তরা কার্তিক মাসের শুক্লা ষষ্ঠীতে সূর্য বন্দনা করেন। আবার কারও মতে ছট মানে ছটা বা রশ্মি। সূর্যের ছটা বা রশ্মি থেকেই ছট এসেছে । সূর্যদেব পুরুষ। তাহলে পুণ্যার্থীরা ছট মাইয়ার নামে জয়ধ্বনি করেন কেন? এখানে কয়েক রকমের উপাখ্যান আছে। একটি মত হল সূর্যের পত্নীর নাম ঊষা। তিনি ছোটি মাঈ নামে আদৃতা। ছটপুজোয় সূর্যের সাথে সাথে ছোটি মাঈকেও তুষ্ট করা হয়। ঊষাও বৈদিক দেবী। ঋকবেদে ঊষার স্তুতি করা হয়েছে।
আবার কেউ কেউ বলছেন ছট হলেন সূর্যের ভগিনী। মোটকথা ছট পুজো হল একই সঙ্গে সূর্যদেব ও তাঁর পত্নী মতান্তরে ভগিনীর পুজো। যেই হেতু সনাতন শাস্ত্র ও পরম্পরা গুলো জটিল, বহু বিস্তারিত ও প্রাচীন তাই এই ধরণের বিপরীত ব্যাখ্যা থাকা খুব স্বাভাবিক।
ছটপুজোর সব থেকে বড় বৈশিষ্ট্য বৈদিক পরম্পরা থেকে এর উদ্ভব হলেও এই উৎসব বড়ই লোকায়ত এবং এতে মন্ত্রতন্ত্রের ঘটা নেই। সবথেকে বড় কথা এই পুজো পুরোহিত কূলের সংশ্রব মুক্ত। সূচনা থেকে সমাপ্তি পর্যন্ত ছটপুজো চারদিনের। ছটপুজোর ব্রত অত্যন্ত কঠিন নিষ্ঠা এবং শুদ্ধতাই এই পুজোর মূল কথা। ছটপুজোর প্রথম দিনটিকে বলা হয় নহায় খায়। এদিন ব্রতধারী এবং তাঁর পরিবারের সবাই লাউয়ের নুন বর্জিত তরকারি দিয়ে ভাত খান । দ্বিতীয় দিন বা খরনায় ব্রতধারী দিনভর নির্জলা উপবাস পালন করে সন্ধ্যায় ক্ষীর প্রসাদ গ্রহণ করে উপবাস ভঙ্গ করেন। তৃতীয় অর্থাৎ শুক্লা ষষ্ঠীর দিন ছটপুজোর জন্য সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ। এদিন ব্রতধারী দিনভর উপবাস পালন করে বিকেলে ডালা নিয়ে নদীর ঘাটে গমন করেন। সেখানে জলে নেমে অস্ত সূর্যকে অর্ঘ্য দান করে গৃহে প্রত্যাবর্তন। রাতের অন্ধকার কাটার আগেই আবার ঘাটে যাবার তোড়জোড়। নদীতে কোমড় সমান জলে দাঁড়িয়ে সূর্যদেবের প্রতীক্ষা করেন ছটব্রতী নারীপুরুষ। সপ্তমীর প্রভাতে উদিত সূর্যদেবকে অর্ঘ্য প্রদানান্তে শেষ হয় ব্রত। গৃহে ফিরে প্রসাদ গ্রহণ করে প্রায় চল্লিশ ঘন্টার উপবাস ভঙ্গ করেন ব্রতধারীরা।
ছট পুজোর ডালাতে থাকে কলার কাঁদি, নারকেল, কুমড়ো, অনেক রকমের ফল, খাস্তা টিকরি হলুদ গাছ এবং আম্রপল্লব। ছটপুজোর সবথেকে বড় উপকরণ অবশ্যই ঠেকুয়া। যা আটা , ঘি এবং চিনি সহ নানা উপকরণ দিয়ে প্রস্তুত করা হয়। কার্তিক মাসের পাশাপাশি চৈত্র মাসেও ছট পরব পালন করা হয়। একে চৈতী ছট বলা হয়।
ছবি – নিজস্ব ও সংগৃহীত