বিশেষ প্রতিবেদন: ইমরান খান নিয়াজি জিন্দা না মুর্দা, এই নিয়ে ধন্ধ কিছুতেই কাটছে না। রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা জেলে ইমরানকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে, এমন খবর বাজারে রটে যাওয়ার পর যদিও পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ মুখ খুলেছেন। আসিফ ইমরানের মউতের খবর উড়িয়ে দিয়ে দাবি করেছেন, জেলে ইমরান তোফা আছেন। আদিয়ালা কারা কর্তৃপক্ষও একটি বিবৃতিতে জানিয়েছে, ইমরান খানের মৃত্যু কিম্বা অসুস্থতার খবর গুজব। ইমরানকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয় নি বলেও জানিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ইমরানের দল তেহরিক-ই-ইনসাফের নেতৃত্ব এবং ইমরানের দুই বোন ও ছোটছেলে তাতে আশ্বস্ত হতে পারছেন না।
পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ৭৩ বছরের ইমরান খান ২০২৩-এর অক্টোবর থেকে জেলে। দুর্নীতির অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় তাঁকে ১৪ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। ইমরানের তিন নম্বর বিবি বুশরাও জেলের ঘানি টানছেন। ক্রিকেটের ইতিহাসে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারদের একজন হলেন ছয় ফুট দুই ইঞ্চির সুদর্শন পাঠান ইমরান খান নিয়াজি। তিনি বেঁচে আছেন না মরে গেছেন, এই প্রশ্নে দুনিয়া তোলপাড় হওয়াই স্বাভাবিক। কারাবন্দী ইমরানের শরীর-স্বাস্থ্য নিয়ে তাঁর দল ও পরিবারের উৎকণ্ঠাও অস্বাভাবিক কিছু নয়। কারণ, গত ২৮ দিন ধরে ইমরানের সঙ্গে তাঁর দল ও পরিবারের কোনও সদস্যকেই দেখা করতে দিচ্ছে না কারা কর্তৃপক্ষ।

আদালতের নির্দেশ রয়েছে, প্রতি মঙ্গলবার আদিয়ালা জেলে গিয়ে ইমরানের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন তাঁর আত্মীয়-স্বজনেরা। অথচ নভেম্বর মাস শেষ হতে চলল। গোটা মাসে একবারের জন্যও ইমরানের ছেলে কিম্বা বোনদের দেখা করার সুযোগ দেয় নি জেল কর্তৃপক্ষ। দিন কয়েক আগে তেহরিক-ই-ইনসাফের কয়েকজন প্রতিনিধি ইমরান খানের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁদের কারাফটক থেকেই বিদায় করে দিয়েছেন রক্ষীরা। ইমরানের ছোট দুই বোন নোরিন নিয়াজি ও আলিমা খানের সন্দেহ, তাঁদের ভাইজানকে হয় জেলের ভেতরে খুন করা হয়েছে নয় তিনি গুরুতর অসুস্থ।
ইমরানের কনিষ্ঠ পুত্র কাসিম খানেরও একই সন্দেহ। বাবার পরিণতি নিয়ে উৎকণ্ঠিত কাসিম সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, “আমার বাবা ৮৪৫ দিন ধরে জেলে বন্দি। গত ছয় সপ্তাহ ধরে তাঁকে মৃত্যুকূপে ফেলে রাখা হয়েছে। আদালতের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও বাবার সঙ্গে আমাদের কাউকে দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না। ফোনেও বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। তিনি বেঁচে আছেন কিনা, তা আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়।” এদিকে পাকিস্তানের মিডিয়ায় ইমরানের পরিণতি নিয়ে কোনও উচ্চবাচ্য নেই। ইমরান খানকে নিয়ে খবর করলেই সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের রোষানলে পড়তে হবে। এই ভয়ে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম চুপ আছে বলে অভিযোগ করেছেন ইমরানের বোন নোরিন।

পাকিস্তানের সংবাদপত্র, পোর্টাল ও চ্যানেলগুলি ইমরান নিয়ে চুপ থাকলেও একাধিক ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইমরানের বেঁচে থাকা নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। নোরিন ও আলিমা- ইমরানের দুই বোনই ভারতীয় মিডিয়ার সামনে মুখ খুলেছেন। ভারতের গণমাধ্যমে ইমরানকে নিয়ে লাগাতার খবরের জেরে পাকিস্তানের মন্ত্রী ও আদিয়ালা জেলে কর্তৃপক্ষ মুখ খুলতে বাধ্য হলেও তাতে ইমরান বেঁচে না মরে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। ইমরান খান এখন পাক আর্মির দু চোখের বিষ। আর পাকিস্তানের কোনও রাজনীতিবিদ আর্মির চক্ষুশূল হলে তাঁর জিনা হারাম করার জন্য যা যা করার দরকার, তার কোনোটাই করতে বাকি রাখেন না জেনারেলরা।
ক্যু না করেই এখন পাকিস্তানের রাষ্ট্রক্ষমতা চালাচ্ছেন সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির। প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ মুনিরের অধস্তন কর্মচারীর অতিরিক্ত কিছু নন। এই পাকিস্তানেই পাছায় রিভলবারের নল ঠেকিয়ে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমতা থেকে নামানো হয়েছে। জেনারেল পারভেজ মোশাররফ যখন ক্ষমতা দখল করেন, শোনা যায় তখন প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে ঢুকে নওয়াজ শরীফের গালে চড় মেরেছিল ফৌজের এক হাবিলদার। আর জুলফিকার আলী ভুট্টোর পরিণতির কথা তো সবাই জানে। ভুয়ো মামলায় ফাঁসিয়ে ভুট্টোকে ফাঁসিতে লটকে ছেড়েছিল জেনারেল জিয়াউল হক।
পাকিস্তানে সিভিলিয়ান প্রাইম মিনিস্টারদের ইজ্জতের ফালুদা হওয়াটাই ট্র্যাডিশন। এখন আদিয়ালা জেলে ঢুকে জেনারেল আসিম মুনিরের সিপাইরা যদি ইমরানের ইজের টেনে হাঁটুর নিচে নামিয়ে দিয়ে তাঁর ইজ্জতটি পর্যন্ত খেয়ে নেয়, পাকিস্তানের মিডিয়া টু শব্দটি পর্যন্ত করবে না। তাই ইমরানের বোন ও ছেলের আশঙ্কা অমূলক নয়। রাজনীতিতে নামার সিদ্ধান্তটা ইমরান খানের জীবনে বড় ভুল। মাঠে ক্রিকেটার ইমরানের শেরের মতো বিক্রম সত্যিই দর্শকদের মুগ্ধ করত। কিন্তু রাজনৈতিক নেতা ইমরানকে কলে পড়া চুহা বানিয়ে ছাড়ল সেনাবাহিনী।
ইমরান খানের উপর নিচের ভিডিওটি দেখে নিন 👇
Feature image is representational and AI created.