আন্তর্জাতিক ডেস্ক: অভিবাসীদের গণহারে আশ্রয় দেওয়ার পরিণাম যদি হয় সন্ত্রাসকে নিজের ঘরে ডেকে আনা, তবে আমেরিকা বা ইউরোপের দেশগুলো কেন অভিবাসন বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ করবে না? বুধবার দুপুরে ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউস থেকে হাঁটা পথের দূরত্বে ন্যাশনাল গার্ডের দুই সদস্যের উপর যে গুলিবর্ষণ করেছে, সে একজন আফগান অভিবাসী। রহমানুল্লা লাকানওয়ালা নামে এই আফগান নাগরিক ২০২১ সালের অগাস্ট মাসে তালিবান কাবুল দখল করার পর আফগানিস্তান থেকে আমেরিকার এসেছিল।
তালিবানের হাতে কাবুলের পতন অনিবার্য বুঝতে পেরেই তালিবানের ভয়ে দেশ ছাড়তে মরীয়া আফগান নাগরিকদের উদ্ধারে ‘অপারেশন অ্যালাইস ওয়েলকাম’ নামে অভিযান শুরু করেছিল বাইডেন প্রশাসন। এই অভিযানে প্রায় ২০ হাজার আফগানকে বিমানে চাপিয়ে আমেরিকায় এনে অভিবাসন দিয়েছিল প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সরকার। কাবুলের পতনের মুখে মার্কিন কূটনীতিক ও সৈন্যদের সাথেই হাজার হাজার আফগান নাগরিককে আমেরিকায় ফিরিয়ে আনা হয়েছিল। আমেরিকায় আশ্রয় পাওয়া ২০ হাজার আফগানের একজন ছিল ২৯ বছরের রহমানুল্লা লাকানওয়ালা। আমেরিকার মাটিতে পা দেওয়ার পর থেকেই ওয়াশিংটনের বেলিংহামে থাকত রহমানুল্লা।
আমেরিকার স্থানীয় সময় অনুসারে বুধবার দুপুর ২ টা ১৫ মিনিট নাগাদ ওয়াশিংটনের ফারাগেট মেট্রো স্টেশনের কাছে ন্যাশনাল গার্ডের দুই রক্ষীর উপরে বন্দুক নিয়ে হামলা চালায় রহমানুল্লা লাকানওয়ালা। ন্যাশনাল গার্ডের মহিলা রক্ষী সারা বেকস্টর্মের বুকে ও মাথায় গুলি লাগে। অ্যান্ড্রু ওলফ নামে ন্যাশনাল গার্ডের আরও একজন সদস্য গুলিবিদ্ধ হন। ঘটনাস্থলে মোতায়েন ন্যাশনাল গার্ডের তৃতীয় রক্ষীর গুলিতে ওই আফগান বন্দুকবাজ নিহত হয়। বৃহস্পতিবার ২০ বছরের সারা বেকস্টর্মের হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে। আহত অপর রক্ষীর অবস্থাও সঙ্কটজনক বলে জানা গেছে।
ন্যাশনাল গার্ড আমেরিকার সামরিক বাহিনীরই একটি অংশ। সেনাবাহিনী ও বিমানবাহিনীর সদস্যদের ভেতর থেকেই বেছে বেছে ন্যাশনাল গার্ডে নিয়োগ করা হয়। আমেরিকার অভ্যন্তরে প্রাকৃতিক দুর্যোগের মোকাবিলা ও নিরাপত্তা দেওয়ার কাজে ন্যাশনাল গার্ডকে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ওয়াশিংটন ডিসিতে ২,২০০ জন ন্যাশনাল গার্ড সদস্য মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছিলেন। আমেরিকার প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের গভর্নর ও প্রেসিডেন্ট চাইলে বিশেষ বিশেষ পরিস্থিতিতে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের নির্দেশ দিতে পারেন।
ওয়াশিংটনে খোদ তাঁর সরকারি বাসভবন ও দফতর থেকে ঢিল ছোঁড়া ন্যাশনাল গার্ডের উপর হামলার ঘটনায় ভয়ঙ্কর চটেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ঘটনার জেরে তৃতীয় বিশ্বের সমস্ত দেশের নাগরিকদের জন্য আমেরিকায় অভিবাসনের দরজা বন্ধের ঘোষণা করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। আমেরিকায় অবৈধ অনুপ্রবেশ নিয়ে ট্রাম্প এমনিতেই খাপ্পা। অভিবাসন ও ভিসা নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসন যখন সাম্প্রতিক সময়ে যথেষ্ট কঠোর পদক্ষেপ করেছে, ঠিক তখনই এক আফগান অভিবাসীর হাতে খুন হতে হল ন্যাশনাল গার্ডের এক নারী সদস্যকে।
শুক্রবার সকালে নিজের মালিকানাধীন সামাজিক মাধ্যম ‘ট্রুথ সোস্যাল’-এ ট্রাম্প জানিয়েছেন, তৃতীয় বিশ্বের সব দেশের নাগরিকদের জন্য আমেরিকায় অভিবাসন বন্ধ করে দেওয়া হবে। নিজের পোস্টে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প লিখেছেন, “যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবস্থা পুরোপুরি স্থিতিশীল করার সুযোগ করে দিতে আমি তৃতীয় বিশ্বের সব দেশ থেকে অভিবাসন স্থায়ীভাবে স্থগিত করে দেবো।” আফগানিস্তান থেকে কাতারে কাতারে লোক আমেরিকায় ঢুকতে দেওয়ার জন্য পূর্বসূরি জো বাইডেনকে দায়ী করেন ট্রাম্প।
আমেরিকাগামী বিমানে ওঠার প্রতীক্ষায় কয়েক হাজার আফগান নাগরিক কাবুল বিমানবন্দরে গাদাগাদি করে বসে রয়েছেন, একটি ছবি শেয়ার করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবিটি শেয়ার করে বাইডেনের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলে ট্রাম্প মন্তব্য করেছেন, “হাজার হাজার মানুষকে কোনও রকম তথ্য যাচাই না করেই আমাদের দেশে এইভাবে ভরে দেওয়া হয়েছে। এটা আফগানিস্তানের পরিবহণের ছবি। আমরা এই সমস্যার সমাধান করব। কিন্তু ভুলব না, আমাদের দেশের কী সর্বনাশ করে দিয়ে গেছেন জো বাইডেন!”
বাইডেনের আমলে আমেরিকায় যত অবৈধ অনুপ্রবেশকারী ঢুকেছে, তাদের সবাইকে বের করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। যারা মার্কিন নাগরিক নন ও যারা বৈধপথে আমেরিকায় ঢোকে নি, তাদের সমস্ত সুযোগসুবিধা কেড়ে নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন ট্রাম্প। ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির কোপে আফ্রিকা ও এশিয়ার একাধিক মুসলিম দেশ পড়তে চলেছে বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক মহল।
মুহাম্মদ ইউনূসের জামানায় বাংলাদেশে ধর্মীয় উগ্রবাদীদের বাড়াবাড়ি চরমে পৌঁছেছে। ইসলামিক জঙ্গি ও মৌলবাদী সংগঠনগুলি প্রকাশ্যে ভিন্ন মতাবলম্বীদের কোতল করার হুমকি দিচ্ছে। বাউল সম্প্রদায়ের লোকজনের উপর অত্যাচার থামাতে ব্যর্থ প্রশাসন। এই পরিস্থিতিতে ট্রাম্পের ঘোষণার পর বাংলাদেশীদের পক্ষে আমেরিকার ভিসা পাওয়া আরও কঠিন হয়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন দেশটির মানবাধিকারকর্মীরা।
Feature graphic is representational and designed by NNDC.