সম্পাদকীয়
জঙ্গিদের নাশকতা তো ভারতবর্ষে নতুন নয়। দেশের সংসদ ভবনে পর্যন্ত পাকিস্তানের মদত পুষ্ট ইসলামিক জঙ্গিরা হামলা চালিয়েছিল। দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী মুম্বাই কতবার জঙ্গি সন্ত্রাসবাদীদের বোমায় রক্তাক্ত হয়েছে! ২৬/১১-র মুম্বাই হামলা ভয়াবহতার বিচারে শুধু ভারতের নয় গোটা বিশ্বের সন্ত্রাসবাদী হামলার ইতিহাসে অন্যতম। গত ৪০ বছরের পরিসংখ্যান ঘাঁটলে দেখা যাবে, ভারতের প্রত্যেকটি গুরুত্বপূর্ণ শহর, পর্যটনস্থল ও তীর্থস্থানে কোনও না কোনও সময় জঙ্গি হানায় জনগণের মৃত্যু হয়েছে।
এখন দেশে সন্ত্রাসবাদীদের হামলা ঘটলেই সামাজিক মাধ্যমে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ শুরু হয়ে যায় কেন? বিহারের ভোটে বিজেপিকে ডিভিডেন্ড পাইয়ে দিতে সোমবার সন্ধ্যায় দিল্লির লালকেল্লা সংলগ্ন রাস্তায় বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে- এমন কুৎসিত মন্তব্য করতেও অনেকে কুন্ঠিত নয়। গণতান্ত্রিক দেশে রাজনৈতিক বিরোধিতা থাকবেই। সন্ত্রাসবাদী হামলার ঘটনা ঘটলে বিরোধীদের প্রশ্ন তোলার অধিকার অবশ্যই আছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থার গাফিলতির কারণে জঙ্গি হানায় সাধারণ মানুষের মৃত্যু হলে সরকারের সমালোচনাই প্রাপ্য। কিন্তু তা বলে জঙ্গি হামলাকে সাজানো ঘটনা বলে সামাজিক মাধ্যমে যারা ট্রোল করে, তারা মানুষ? রাষ্ট্রবিরোধী জঙ্গি, সন্ত্রাসবাদীদের সঙ্গে তাদের পার্থক্য কোথায়?
কংগ্রেস যখন কেন্দ্রীয় সরকার চালাত, তখন কি জঙ্গি হামলা হয় নি? ইউপিএ জামানায় ২০০৮-এর ‘মুম্বাই অ্যাটাক’ কি সাজানো ঘটনা ছিল? পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রটি কয়েক ডজন জঙ্গি সংগঠনের মাধ্যমে ভারতের বিরুদ্ধে ‘প্রক্সি ওয়ার’ চালাচ্ছে। এবং সেটা নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আছে বলে নয়। পাকিস্তানের এই ছায়া যুদ্ধ তো ইন্দিরা গান্ধী, রাজীব গান্ধী, ভিপি সিং, নরসীমা রাও, অটলবিহারী বাজপেয়ী এবং মনমোহন সিং- দেশের সব প্রধানমন্ত্রীকেই মোকাবিলা করতে হয়েছে। মোদীর আমলে জঙ্গি হামলা হলেই তা মোদী করাচ্ছেন!
সামাজিক মাধ্যমে যারা এইসব কথা ছড়ায়, তাদের একটা বড় অংশ বামপন্থী। ভারতের বামপন্থীদের সম্পর্কে যত কম কথা বলা যায়, ততই ভাল। নিজের দেশ ১৩ টুকরো হলেও এদের কিছু যায় আসে না। বাপের দেশ চিন অক্ষত থাকলেই হল। নকশালপন্থীদের অনেক গোষ্ঠী ও মাওবাদীরা তো সরাসরিই বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মদত দেয়। এখন দেখা যাচ্ছে কংগ্রেসপন্থীরাও বাম-নকশালদের দোসর। জঙ্গি হামলার পেছনেও ষড়যন্ত্রের গন্ধ শুঁকে বেড়ান কংগ্রেসের নেতারা। রাহুল গান্ধীর মনের অবস্থা আমরা সহজেই অনুমান করতে পারি। বয়স বাড়ছে, অথচ এখনও প্রধানমন্ত্রীর কুর্শিতে বসার সুযোগ দিলেন না ভাগ্যদেবী। মোদী সরকারের প্রতিটি পদক্ষেপই এখন ধৈর্যহারা রাহুলের শরীরে অ্যালার্জির জ্বালার কারণ। তাই, কংগ্রেসের মতো দলও জঙ্গি হামলার সময় সরকারের পাশে না দাঁড়িয়ে চুকলিবাজি করে আনন্দ পায়।
দিল্লিতে বিস্ফোরণ নিয়ে বিরোধীরা সরকারের সমালোচনায় মেতেছে। অথচ দেশের যে নিরাপত্তা এজেন্সিগুলির যৌথ তৎপরতায় ভয়াবহ জঙ্গি নাশকতা এড়ানো সম্ভব হল, তাদের ধন্যবাদ দিচ্ছে না! ‘অপারেশন সিন্দুর’-এ বিপর্যস্ত হওয়ার বদলা নিতে কাশ্মীরি জঙ্গি গোষ্ঠীগুলিকে দিয়ে পাকিস্তান যে ভারতের অভ্যন্তরে একটা বড় আঘাত হানার পরিকল্পনা করবে, এই আঁচ তো দেশের গোয়েন্দারা পেয়েছিলেন। তাদের কড়া নজরদারি ছিল বলেই হরিয়ানার ফরিদাবাদে ঘাপটি মেরে থাকা জঙ্গিদের বড় ষড়যন্ত্র বানচাল হয়ে গেছে। ২,৯০০ কেজি বিস্ফোরক মজুত করেছিল জঙ্গিরা, যা দিয়ে আরডিএক্সের মতো শক্তিশালী বোমা ফাটিয়ে শত শত মানুষের জীবননাশের পরিকল্পনা করেছিল তারা। এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে দু’জন কাশ্মীরি চিকিৎসক মুজাম্মিল শাকিল ও আদিল আহমেদ রাথার জড়িত। তাদের সহ সাতজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
লালকেল্লার সামনে গাড়িতে যে বিস্ফোরণ হয়েছে, সেই গাড়ির বর্তমান মালিক উমর মহম্মদ বলে জানা গেছে। কাশ্মীরের পুলওয়ামার বাসিন্দা উমর মহম্মদও পেশায় একজন চিকিৎসক। বিস্ফোরিত গাড়িটিতে চালকের আসনে উমর মহম্মদই ছিলেন বলে ধারণা করছেন তদন্তকারীরা। চালকের দেহ বিস্ফোরণের অভিঘাতে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে নিহতকে শনাক্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে দিল্লি পুলিশ। ষড়যন্ত্র ফাঁস হয়ে গেছে। সাথীরা সব ধরা পড়েছে। নিজের গাড়িতে অবশিষ্ট বিস্ফোরক বোঝাই করে উমর হয়তো পালিয়ে যাচ্ছিল। দুর্ঘটনা বশত উমরের গাড়িতে বিস্ফোরণ ঘটে থাকতে পারে- তদন্তে এমন প্রমাণ কিন্তু জোরালো হচ্ছে।
অর্থাৎ নাশকতা ঠেকাতে দেশের গোয়েন্দা সংস্থা ও নিরাপত্তা এজেন্সিগুলি ব্যর্থ তো নয়ই বরং তাদের সময়োচিত পদক্ষেপের ফলে বড় ধরনের হামলার হাত থেকে বেঁচে গেলেন দেশের নিরীহ নাগরিকেরা। সমালোচনা নয় প্রশংসাই তাদের প্রাপ্য। বিরোধী নেতারা রাজনৈতিক কারণে সরকারের প্রশংসা নাই করতে পারেন কিন্তু পুলিশের একটু প্রশংসা করতে তাঁদের এত কুণ্ঠা কেন?
Feature graphic is representational and designed by NNDC.