এস‌আইআর-এর লক্ষ্য ভোটার তালিকার শুদ্ধিকরণ, এতে কার‌ও কার‌ও কেন এত গাত্রদাহ?

এস‌আইআর-এর লক্ষ্য ভোটার তালিকার শুদ্ধিকরণ, এতে কার‌ও কার‌ও কেন এত গাত্রদাহ?


নভেম্বর মাসে বিহারে বিধানসভা নির্বাচন। সাড়ে সাত কোটি ভোটারের এই রাজ্যে এস‌আইআর নিয়ে আর কারও কোনও অভিযোগ, উচ্চবাচ্য নেই। শাসক-বিরোধী সবাই কোমর কষে ভোটের লড়াইয়ে নেমে গেছে। এস‌আইআর নিয়ে যা অস্পষ্টতা ছিল, নির্বাচন কমিশন আদালত ও আদালতের বাইরে যা ব্যাখ্যা দিয়েছে, তাতে তা দূর হয়ে যাওয়ার কথা। অন্যান্য রাজ্যের শাসক হোক বা বিরোধী- সব দলের সংশয় দূর হয়ে গেছে। কিন্তু বাংলায় গেল গেল রব উঠেছে! হীন ও সঙ্কীর্ণ রাজনীতি করে নিজের বরবাদ করতেও বাঙালির আত্মসম্মানে লাগে না। তাই যে এস‌আইআর নিতান্তই নন-ইস্যু, তা নিয়েই সংবাদমাধ্যম খবরে খবরে ছয়লাপ ও রাজনীতির ময়দান সরগরম।

এস‌আইআর (স্পেশাল ইন্টেনসিভ রিভিশন) বা ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনী হঠাৎ করে আকাশ থেকে পড়ে নি। ১৯৫১ সালে প্রথম শুরু। ২০০৪ পর্যন্ত দেশে মোট আটবার এস‌আইআর হয়েছে। এবার নবম এ‌স‌আইআর শুরু হয়েছে। একুশ-বাইশ বছর পরপর ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনী করে থাকে নির্বাচন কমিশন। এস‌আইআর-এর একটাই মিশন- ভোটাধিকার প্রয়োগে যোগ্য প্রতিটি বৈধ নাগরিকের নাম ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা। অথচ বাংলায় অপপ্রচার করা হচ্ছে, নির্বাচন কমিশন জনগণের ভোটাধিকার কাড়তেই এস‌আইআর শুরু করেছে।

নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকা শুদ্ধ করতে চায়। ভোটার তালিকা শুদ্ধ করতে চাওয়া অপরাধ? এস‌আইআর নিয়ে কেন এত গাত্রদাহ তৃণমূল ও বামেদের? বিহারে এস‌আইআর করে ৬৫ লক্ষের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে কমিশন। একজন‌ বৈধ ভোটারের নাম বাদ পড়েছে- এমন প্রমাণ‌ও কেউ দিতে পারে নি। অবৈধ নাগরিক বা ভিনদেশী অনুপ্রবেশকারী না হলে তো কার‌‌ও নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়ার কথাই না। ভুল বশত কোন‌ও বৈধ নাগরিকের নাম খসড়া ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়ে গেলেও তা প্রতিবিধানের যথেষ্ট সুযোগ ও সময় দিচ্ছে কমিশন। তারপরেও যারা এস‌আইআরকে বিতর্কিত করে চলেছেন, তাদের উদ্দেশ্য বুঝতে আমাদের কষ্ট হচ্ছে না।

২০০২ সালের ভোটার তালিকায় যাদের নাম আছে, তাদের তো কোন‌ও কাগজ‌ই দেখাতে হবে না। এমনকি যাদের বাবা-মায়ের নাম সেই তালিকায় আছে, তারাও কাগজ দেখানোর হাত থেকে ছাড় পাবেন। নির্বাচন কমিশনের এই দুই পদক্ষেপের ফলে এই রাজ্যের বিশাল সংখ্যক ভোটারের টেনশন দূর হয়ে গেছে। কিন্তু টেনশন দূর হচ্ছে না শাসকদলের। সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যে ভাষায় দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমারের সমালোচনা করেছেন, তা অত্যন্ত নিন্দার্হ। অভিষেক কি অবৈধ ভোটারদের রক্ষাকর্তা হতে চান?

এস‌আইআর নিয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মনোভাব‌ও অত্যন্ত নেতিবাচক। রাজ্য সরকারের আধিকারিক ও কর্মচারীরা যেন এস‌আইআরের কাজে কমিশনের সঙ্গে সহযোগিতা না করে, এমন বাক্য‌ও বেরিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর মুখ দিয়ে! সাংবিধানিক পদে থেকে যা তিনি বলতে পারেন না। নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। রাজ্য সরকার‌ও সাংবিধানিক। এক সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান আরেক সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে তার সাংবিধানিক দায়িত্ব প্রতিপালনে সহযোগিতা করতে বাধ্য।

পশ্চিমবঙ্গে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনীর কাজে বাধা এলে কমিশন কী করবে? সাংবাদিকদের এই প্রশ্নের জবাবে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, “সংবিধানের ৩২৪ অনুচ্ছেদের ৬ উপধারা অনুযায়ী ভোট সংক্রান্ত যে কোনও প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য যে কর্মচারীদের দরকার, তা সরবরাহ করতে রাজ্য সরকার বাধ্য।” এসআইআর প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত সকল কর্মীর পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রাজ্য সরকার যে সাংবিধানিকভাবে বাধ্য, এ কথাও রাজ্যকে মনে করিয়ে দিয়েছেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার।

সুতরাং এস‌আইআর ঘিরে বাংলায় আইনশৃঙ্খলার কোনও অবনতি হলে বা আইনশৃঙ্খলার কারণে এস‌আইআর-এর কাজ বিঘ্নিত হলে রাজ্য সরকারকেই দায় নিতে হবে। পশ্চিমবঙ্গে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনীর কাজ সুষ্ঠুভাবে শেষ করার মতো পরিস্থিতি না থাকলে কিম্বা রাজ্য সরকারের অসহযোগিতার কারণে এই কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন না করা গেলে নির্বাচন কমিশন চাইলে রাজ্যে সমস্ত ধরণের নির্বাচনী প্রক্রিয়া অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত দিতে পারে। প্রয়োজনে ২০২৬-এর ৫ মের পর রাষ্ট্রপতি শাসনে বাংলায় এস‌আইআর হবে, নির্বাচন কমিশনের অন্দরমহলে এমন প্রস্তুতি‌ও নাকি নেওয়া হয়ে গেছে।

Feature graphic is representational and designed by NNDC.


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *