তালিবানরা যে অতিশয় নচ্ছার তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তালিবানদের সৃষ্টি, উত্থান ও কাবুল দখলে মদত জুগিয়েছিল পাকিস্তান। দুই বারই তালিবানকে আফগানিস্তানে ক্ষমতায় আসতে সাহায্য করেছে পাক আর্মি ও আইএসআই। যদিও ২০২১-এর অগাস্টে তালিবানরা কাবুলে সরকার গঠন করার ছয়মাসের মধ্যেই পাক-তালিবান মুহাব্বতে চিড় ধরে। গত চার বছরে দুষমনি বাড়তে বাড়তে এখন দুই দেশের মধ্যে একটা পুরোদস্তুর যুদ্ধ লেগে যাওয়ার পরিস্থিতি।
‘তেহরিক-ই-তালিবানপাকিস্তান’ পাকিস্তানের দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানের বহু জায়গায় নিজেদের শাসন কায়েম করেছে। তাদের আক্রমণে পাক ফৌজ অনেক দিন ধরেই দিশেহারা। ইসলামাবাদের অভিযোগ, টিটিপিকে মদত দিচ্ছে কাবুলের তালিবান সরকার। এখন ভারতের কাছে প্রতিবেশী পাকিস্তান বিপদ। তালিবান নিয়ন্ত্রিত আফগানিস্তান আপদ। তবে আপদ আফগানিস্তান যেহেতু বিপদ পাকিস্তানের প্রতিবেশী, ভারতের নয়, তাই আফগানিস্তানকে নিয়ে ভারতের তেমন মাথাব্যথা নেই।
আফগানিস্তানের তালিবানরা কট্টর মৌলবাদী, নারী বিদ্বেষী ইতর হলেও তারা নিজেদের দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে চায়। কাশ্মীরে জঙ্গি সাপ্লাই করা কিম্বা ভারতের ইসলামিক মৌলবাদীদের ফান্ডিং করার মধ্যে এরা নেই। আফগানিস্তান দেশটা একাধিক উপজাতি গোষ্ঠীতে বিভক্ত। তার মধ্যে পুশতুনদের সংখ্যা ও গায়ের জোর বেশি। তালিবান মূলতঃ পুশতুন ট্রাইবদের সংগঠন। ট্রাইবসরা স্বভাবে গোঁয়ার হলেও সাধারণত নিজেদের চৌহদ্দির বাইরে গিয়ে অন্যকে উত্যক্ত করে না। তাই আফগানিস্তানের তালিবানরা ভারতের জন্য সিরিয়াস কোনও থ্রেট নয়।
পক্ষান্তরে পাকিস্তান রাষ্ট্র এবং পাকিস্তান রাষ্ট্রের বিভিন্ন উইংস ভারতের ক্ষতি এমনকি ধ্বংস করতে চায়। ভারতকে disintegrate করা পাকিস্তানের অফিসিয়াল মিশন। যেহেতু পাকিস্তান ভারতের ক্ষতি চায়, ভারতও পাকিস্তানের ক্ষতি চায়। যতক্ষণ পর্যন্ত পাকিস্তান ভারতের ক্ষতি চাইবে ততক্ষণ ভারতকেও একইভাবে পাকিস্তানের ক্ষতিসাধনে পদক্ষেপ করতে হবে। এটাই স্বাভাবিক এবং যুগ যুগ ধরে দুই রাষ্ট্রশক্তির মধ্যে ঘটে আসছে।
চাণক্য তো সেই কবেই বলে গেছেন, প্রতিবেশীর প্রতিবেশীর সঙ্গে মিত্রতা স্থাপন করে দুষ্টু প্রতিবেশীকে চাপের মধ্যে রাখো। এখন আফগানিস্তান ও পাকিস্তান- এই দুই থিয়োক্রেটিক রাষ্ট্রের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হলে আফগানিস্তান খুব স্বাভাবিকভাবেই ভারতের মিত্রতা চাইবে। পাকিস্তানের গুহ্যদ্বারে ভগন্দরের জ্বালা উঠুক, এমন কোনও সুযোগ তো ভারত মিস করতে চাইবে না। আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যে দূরত্ব তৈরি করে রাখা ভারতের প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র নীতির অংশ এবং ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার ১৯৪৭ থেকেই তা অনুসরণ করে আসছে। দূরত্ব বাড়তে বাড়তে যদি কখনও তা বিবাদে পরিণত হয়, সেই বিবাদে কার পক্ষে ভারতের থাকা উচিত, তা বোঝার জন্য তত্ত্বজ্ঞান নয় কান্ডজ্ঞান থাকাই যথেষ্ট।